Babul Supriyo: যাঁর হাত ধরে প্রথম সাংসদ হওয়া, গোল করা শেখা, বাবুলের ফুল-বদলে সেই ‘কোচ’ বললেন…
Nirmal Karmakar on Babul Supriyo: 'আমি গোল করেছি। কিন্তু কী করে গোল করতে হয়, সেটা শিখেছি ওঁর কাছেই।' নির্মলের প্রশস্তি করে বাবুল মেনে নিয়েছিলেন তাঁর '১৪ সালের নির্বাচনী যুদ্ধ জয়ের সারথী আসলে নির্মলবাবুই।
কলকাতা: ২০১৪ সাল। মুম্বই থেকে বিমানে অন্য একটি শহরে যাওয়ার সময় আচমকাই যোগগুরু রামদেবের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo)। কথোপকথনে রামদেব জানান, বিজেপি (BJP) এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের উপর বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু সংগঠন মজবুত না থাকায় একটি আসনও জেতার আশা নেই। অথচ সেই সময় গোটা দেশে মোদী-হাওয়া তুঙ্গে। পরিবর্তনের গন্ধ যখন গোটা দেশেই ম-ম করছে, তখন বাংলায় পৃথক ফল হবে কেন? এই ভাবনা থেকেই সেই সময় তৎকালীন বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার হাত থেকে বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন গায়ক বাবুল। জেতেন আসানসোল কেন্দ্র থেকে। কিন্তু রাজনীতিতে সম্পূর্ণ আনকোরা একজন গায়ক কীভাবে বামদুর্গে ধস নামালেন? সবটাই মোদী হাওয়া নাকি সেলিব্রেটি ইমেজের ম্যাজিক?
আসলে যেকোনও সেলেব প্রার্থীদের জয়ের নেপথ্যে থাকেন দিনরাত পরিশ্রম করা হোলটাইমার নেতা। বাবুলের জয়ের পিছনেও ছিলেন তেমনই একজন। তাঁর নাম নির্মল কর্মকার। প্রায় বাইশ বছর ধরে আরএসএস করা নির্মল কর্মকারের হাতেই এক সময়ে ছিল জেলা-সঙ্ঘের দায়িত্ব। তিনিই বাবুলকে হাতের তালুর মতো চিনিয়েছিলেন শিল্পনগরীর প্রতিটি বুথ। এখন বাবুলের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে কী বলছেন তাঁর নির্বাচনী জয়ের সারথী?
‘আমি গোল করেছি। কিন্তু কী করে গোল করতে হয়, সেটা শিখেছি ওঁর কাছেই।’ নির্মলের প্রশস্তি করে বাবুল মেনে নিয়েছিলেন তাঁর ‘১৪ সালের নির্বাচনী যুদ্ধ জয়ের সারথী আসলে নির্মলবাবুই। আর কলকাতায় দলীয় কার্যালয়ে বসে বিজেপি-র তৎকালীন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেছিলেন, ‘আসানসোলের জয়টা ওঁকে (নির্মল কর্মকার) ছাড়া ভাবতেই পারছি না।’ আজ যখন বাবুল তৃণমূলে, তখন কী বলছেন বিজেপি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার? শিল্পাঞ্চলের প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে মাসের পর যিনি বাবুলের জন্য পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনি, উখড়া ঘুরে বেড়িয়েছেন? তিল তিল করে যাঁর গড়া সংগঠনের ওপর ভরসা করে বাংলা থেকে বিজেপি সাংসদ হয়েছিলেন বাবুল?
Tv9 বাংলার তরফে যখন ফোনে ধরা হল নির্মলবাবুকে তখন তিনি দলের বৈঠকে যাবেন বলে ব্যস্ত। তার মধ্যে বাবুলের তৃণমূলে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করতেই এক মুহূর্ত চুপ রইলেন। তার পর তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া, “বাবুল যাওয়ার প্রেক্ষিতে আসলে কোনও প্রতিক্রিয়াই নেই।” বললেন, “বাবুল বুঝিয়ে দিলেন তিনি ‘নন পলিটিক্যাল’ (অরাজনৈতিক) লোক।”
আসানসোলে বিজেপি-র পতাকা পুঁতে দেওয়ার এই নেপথ্য কারিগরের আরও মন্তব্য, আজ যে ভালবাসা, আদর, আপ্যায়ন ত্যাগ করে চলে গেলেন… উনি একটা কথা বলতেন জানেন। বস ইজ অলওয়েজ রাইট। ইফ নট, ফলো রুল নম্বর ওয়ান’ অর্থাৎ, বস ইজ অলওয়েজ রাইট (অধিনায়ক সবসময় ঠিক)। আজকের এ কথাটা আমি বাবুলদাকে বলব… বাবুলদা এরপর টিএমসি অফিসে গিয়ে ওটা লিখে রাখুন।”
নির্মলবাবু আরও যোগ করেন, “২০১৪ সালে যাঁকে জেতানোর জন্য লড়েছিলাম, তিনি চলে গেলেন অন্য দলে। তবে যেহেতু নিজেকে ভদ্রলোক বলেন, আর একটু শিষ্টাচার দেখানো উচিত ছিল। আমার মনে হয়, এমপি পদ ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া উচিত ছিল।” ২০১৪ সালে সুপ্রিয় বড়ালের নির্বাচনী জয়ের সেনাপতির কটাক্ষ, “তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত বার্গেনিং হয়ে গেল। তার পর পদটা ছাড়ছি… এর চেয়ে ভাল হত যে রকম স্পোর্টিং স্পিরিট দেখাতেন, সেটা যদি এবেলাও দেখাতেন। সারা পশ্চিমবঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়ের যে সম্মান ছিল, তা নিজেই নষ্ট করলেন।” এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন বিজেপির রাঢ় বঙ্গের সহ-পর্যবেক্ষক নির্মল কর্মকার। তার পর তাড়াহুড়ো করে ফোন কাটলেন দলের বৈঠকে যোগ দেবেন বলে।
আরও পড়ুন: Babul Supriyo: ‘প্রেম আর যুদ্ধে সব কিছুই ন্যায্য’, নেটিজেনদের উদ্দেশে বাবুলের ‘ডায়লগ’