Deocha Pachami Coal Mining Project: পাচামি এলাকায় মাও-পোস্টার, ‘জোর করে ভয় দেখানো’-র অভিযোগ দিলীপের
Dilip Ghosh: দেউচা পাচামি প্রকল্প চালু হলে, মূলত খনি এলাকায় কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। এর ফলে আদিবাসীদের যে জমি ও বাড়ি তা সরকারের অধীনে চলে যাবে।
পশ্চিম বর্ধমান: খনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে আরও তীব্র হচ্ছে প্রতিবাদ। দেউচাতে থামছে না অশান্তি। এ বার, দেখা গেল মাওবাদী পোস্টার। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোপ দাগলেন বিজেপির সর্বভারতীয়-সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)।
খনি বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ওই পোস্টারে লাল কালিতে লেখা হয়েছে, “হাম আপকে সাথ হ্যায়।” নীচে লেখা হয়েছে, ‘সিপিআই মাওবাদী’। রবিবার সকালে, পাচামি এলাকার অনতিদূরেই ঝাড়খণ্ডের জেশা কাঠপাহাড়ি এলাকায় এই পোস্টার দেখা যায়। ঘটনায়, আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। যদিও বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেন, “আসলে ভয় দেখানো হচ্ছে। তৃণমূলের লোকেরা ওখানে ভয় দেখাচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছে। সেখান থেকেই প্রতিরোধ গড়ে উঠছে।”
পাচামি এলাকায় অশান্তি থামছেই না। শনিবার সকালে ফের মিছিল করেন আদিবাসী মহিলারা। লাঠি-তির-ধনুক নিয়ে তাঁরা মিছিলে নামেন। পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে তাঁদের এই মিছিল বলে অনুমান করা হয়। গত বৃহস্পতিবার আট আদিবাসী মহিলাকে নির্মমভাবে মেরে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। দেউচা পাচামির ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ ওঠে।
কেন প্রতিবাদ?
দেউচা পাচামি প্রকল্প চালু হলে, মূলত খনি এলাকায় কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। এর ফলে আদিবাসীদের যে জমি ও বাড়ি তা সরকারের অধীনে চলে যাবে। পরিবর্তে যে পুনর্বাসনের প্যাকেজ দেওয়া হবে। কিন্তু সেই প্যাকেজ তা যথাযথ ও যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি, তড়িঘড়ি ওই এলাকা পরিবরর্তিত হতে পারে আসানসোল-রানিগঞ্জের মতো এক বিরাট শিল্পতালুকে। ফলে, গোটা ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশটাই বদলে যেতে পারে। সেদিক থেকে আদিবাসীরা কোথায় যাবেন, সেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাঁদের দাবি, পূর্ব পুরুষেরা এত দিন ধরে যেখানে রয়েছেন, সেই জায়গা ছেড়ে যাবেন না তাঁরা। সেই কারণেই এই প্রতিবাদ।
তৃণমূলের মিছিলে চড়াও হন আদিবাসী মহিলারা
বৃহস্পতিবার দেউচা পাচামি এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে একটি মিছিলের আয়োজন করে তৃণমূল কংগ্রেস। মিছিলকারীদের দাবি, এলাকার মানুষেরা এই মিছিলের আহ্বান করেছিলেন। মিছিলে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সকলেই। ছিলেন সদ্য তৃণমূলে যোগদানকারী আদিবাসী নেতা সুনীল সরেন। কিন্তু সেই মিছিল এগোতেই শুরু হয় অশান্তি।
মিছিল শুরুর কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎই তৃণমূল নেতাকর্মীদের উপর চড়াও হন আদিবাসী মহিলারা। লাঠিসোটা নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মারধর করা হয় সাংবাদিকদেরও। ছিঁড়ে ফেলা হয় পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি। আক্রমণকারী মহিলাদের দাবি, তাঁরা এই এলাকায় কোনও কয়লাখনি চান না। সে কারণে এখানে কোনও মিছিলও হতে দেবেন না। ভিটে ও জমি ছাড়তে নারাজ মহিলাদের কথায়, “কিচ্ছু চাই না আমরা। কীসের দেউচা পাচামি? কীসের মিছিল? আমরা কিচ্ছু চাই না। যেমন আছি তেমন থাকব। নিজেদের খাব। এখানেই থাকব।”
এই ঘটনার পর অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেন, ওই মহিলাদের মদ খাইয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে আনা হয়েছিল। তৃণমূল নেতা দাবি করেন, “সাত- আটজন মহিলাকে মদ খাইয়ে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মিছিল সাকসেসফুল হয়েছে।”
পুলিশি জুলুমের অভিযোগ
অভিযোগ, অতর্কিতে প্রতিবাদী আদিবাসী মহিলাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। আট আদিবাসী মহিলাকে নির্মমভাবে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে বলেও দাবি। দেউচা পাচামির ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। এখানেই শেষ নয়, বিজেপির দাবি, হামলার ছবি যত মোবাইলে ছিল সব মুছে ফেলতে বাধ্য করেন পুলিশ কর্মীরা। বিজেপির দাবি, আহতদের গ্রাম থেকে বের হওয়া যাবে না বলে ফরমান জারি করেছে পুলিশ ও তৃণমূল।
সিঙ্গুরের মতো জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না, এমনটা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদিবাসীদের পুনর্বাসনের জমি দেওয়া হবে সেকথাও আগেই ঘোষণা করেছে সরকার। তারপরেও কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না পাচামি এলাকা। ফের মাওবাদী পোস্টার উদ্ধারের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল।
আরও পড়ুন: Bengal BJP: ‘মন থেকে ভালবাসি… দলে ছিলাম, আছি, থাকব’, বিজেপিতে ‘লেফট’-এর তালিকায় নেই শীলভদ্র