Potato Farming: যত দোষ কি আলুরই! এক বিঘা জমিতে চাষ করলে কত টাকা লাভ হয়, হিসেব দিলেন কৃষকরা
Paschim Medinipur: অপরদিকে রাজ্য সরকার ৬৫০ টাকা করে কৃষকদের কাছ থেকে আলু কেনা শুরু করলেও সরকারকে আলু বিক্রি করতে নারাজ কৃষকেরা।
পশ্চিম মেদিনীপুর: আলু চাষের মরশুম। তাই কৃষকদের কাছে বর্তমানে অর্থকরী ফসল আলু। এখন সেই আলুই চাষ করে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। রাজ্য সরকার তাঁদের কাছ থেকে আলু কেনার কথা ঘোষণা করলেও, সেই দামে আলু বিক্রি করতে অনিচ্ছুক কৃষকরা। এমনকী সরকারের আলু কেনার কথা বলতে গিয়ে চরম ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয় দুই ব্লকের বিডিওকে।
নিত্যদিন লাগাতার বিক্ষোভ চালাচ্ছেন আলু চাষিরা। তাঁদের দাবি, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আলু চাষ করে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরা। চড়া দামে কিনতে হয়েছে সার। তার উপরে আলুর দাম ও কীটনাশক। নাজেহাল হয়ে পড়েছেন তাঁরা। ঘাটাল, চন্দ্রকোনা,গড়বেতা সহ জেলার কৃষকদের সকলের এমনটাই দাবি।
অপরদিকে রাজ্য সরকার ৬৫০ টাকা করে কৃষকদের কাছ থেকে আলু কেনা শুরু করলেও সরকারকে আলু বিক্রি করতে নারাজ কৃষকেরা। সেই কথা বলতে গিয়ে চরম বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে চন্দ্রকোনা ১ ও ২ ব্লকের বিডিও থেকে শুরু করে কৃষি দফতরের আধিকারিকদের। কৃষকদের ভৎসনার সম্মুখীন হচ্ছে প্রশাসনের আধিকারিকরা।
সরকারি নির্দেশিকায় কী বলা হয়েছে?
বর্তমানে জ্যোতি আলুর দাম ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা, কে২২ আলু ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা। আর কৃষকদের কথা ভেবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ব্লক প্রশাসনের কাছে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, সেখানে জানানো হচ্ছে প্রতিটি কৃষকের কাছ থেকে ৬৫০ টাকা দরে, ২৫ কুইন্টাল করে কেনা হবে আলু। কিন্তু সেই আলু কৃষকদের প্যাকেট করে পৌঁছে দিতে হবে কোল্ড স্টোরেজে। সরকার আলু কিনলেও সেখানেও লোকসান। তাই কৃষকদের দাবি আলুর দাম বাড়াক সরকার।
আলু চাষে খরচ কত?
এক বিঘে আলু চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
ধারা যাক, রাসায়নিক সার ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা, বীজ আলু ৮-৯ হাজার টাকা, আলু লাগানো থেকে তোলা, শ্রমিক খরচ ৪-৫ হাজার টাকা, মাটি তৈরি করতে ট্রাক্টর খরচ ২০০০ টাকা, সেচের জল ২৫০০ হাজার টাকা, আলুর কীটনাশকের দাম ২৫০০ টাকা।
আর সেই আলু চাষ করে ফসল হয়েছে এক বিঘা জমিতে ৬৫ থেকে ৭০ বস্তা। আলু বিক্রি করে চাষিদের মিলছে ২০-২৫ হাজার টাকা। এতেই ঘুম উড়েছে কৃষকদের। কৃষকদের দাবি আলু কেনার জন্য দেখা নেই ক্রেতাদের, ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছেন। লাভ না হওয়ায় ঋণ পরিশোধে চিন্তায় কৃষকরা। এক কথায় মাঠের আলু মাঠেই থাকছে পড়ে।
চন্দ্রকোনা এক নম্বর ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী এবং দু’নম্বর ব্লকের বিডিও অমিত ঘোষ কৃষকদের সরকারি ভাবে আলু কেনার কথা বলতে গিয়ে চরম বিক্ষোভের মুখে পড়েন। কৃষকদের দাবি কম দামে কেন সরকারকে আলু বিক্রি করবেন তাঁরা?
যদিও এ বিষয়ে আলু ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আলুকে বাইরে রফতানি ও সরকারি সহযোগিতা না মিললে কৃষক থেকে শুরু করে আলু ব্যবসায়ীরা পড়বে চরম ক্ষতির মুখে ।
এ বিষয়ে শাসকদলকে বিঁধতে ছাড়নে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তারা বলছে, এইভাবে চলতে থাকলে কম আলু চাষের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে আলু। আর পশ্চিম মেদনীপুর জেলায় রয়েছে প্রায় ৯২ টি কোল্ডস্টোরেজ, আর সেই কোল্ড স্টোরেজ তুলনায় আলুর উৎপাদন অনেকটাই কম। শেষমেশ আলু নিয়ে কৃষকদের সিদ্ধান্ত কী হয়, তাঁরা আদৌ সরকারকে বিক্রি করবেন কি না এখন সেটাই দেখার।