ঘাটাল: গৃহিনী হয়ত তখন ভাতের হাঁড়িখানা সবে উপুড় দিয়েছেন। হঠাৎই কেউ যেন বাইরে থেকে হাঁক পারলেন, ‘লক্ষ্মী এসেছে দরজাটা একবার খোলো।’ দুয়ার খুলে গৃহিনী তো দেখে আত্মহারা। এ তো সত্যিই লক্ষ্মী! পাড়ার লক্ষ্মীদা, লক্ষ্মীকান্ত কর্মকার। তবে সাজপোশাক একেবারে মেয়ের মত। কানে দুল, কপালে টিপ, লিপস্টিক, তৃণমূলের পতাকার মতো দেখতে শাড়ি, সাদা ফুল হাতা ব্লাউজ। আর বাঁ কাঁখে ধরা লক্ষ্মীর ঘট। এভাবেই তৃণমূল সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের অভিনব প্রচার করছেন তিনি। মেদিনীপুরের ঘাটাল পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড। কোন্ননগর এলাকা। সেখানেই মহিলা তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ভোটপ্রচার করছেন লক্ষ্মী। দারুণ সাড়াও পাচ্ছেন।
লক্ষ্মীকান্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের জিজ্ঞাসা করছেন তাঁরা ঠিকমত লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছেন কি না। জানাচ্ছেন, এখন থেকে যে আর ৫০০ টাকা নয়, ১ হাজার টাকা করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। জানতে চাইছেন, এতে গৃহলক্ষ্মীরা কতটা খুশি? এরপরই বলছেন, এবারও তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ভোটটা দিচ্ছেন তো?
জানা গিয়েছে, শুধু লোকসভা ভোটেই নয়, এভাবেই বিধানসভা থেকে পুর কিংবা পঞ্চায়েত ভোট, প্রচার করেন লক্ষ্মীকান্ত কর্মকার। স্থানীয় তৃণমূল কর্মী পাপিয়া মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘরের মেয়ে বউদের কাছে এই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে প্রচার করছি। এই যে ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা হয়েছে। ১০০০ টাকা বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা হয়েছে সেটা সকলকে জানাচ্ছি। আর আমাদের সকলের সঙ্গে লক্ষ্মীদা আছেন। লক্ষ্মীদা আমাদের সকলের খুব প্রিয়। উনি এভাবে সবসময় আমাদের সঙ্গে থেকে আমাদের প্রচারে সহযোগিতা করেন।”
কিন্তু তার জন্য ‘লক্ষ্মীদা’র এমন এমন বেশভূষা কেন? লক্ষ্মীকান্ত নিজেই জানালেন, একটা সময় এ ওয়ার্ডে তৃণমূলের মহিলা সংগঠন তেমন জোরাল ছিল না। তিনি বলেন, “আমি ঠিক করি মহিলা সেজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করব। খুব ভাল সাড়া পেয়েছিলাম। এরপর একে একে মহিলারা এগিয়ে আসেন। এখন তো সংগঠন খুবই ভাল।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ ভক্ত তিনি। ‘দিদি’র প্রকল্পের প্রচার করতে সবসময় এক পায়ে তৈরি লক্ষ্মীকান্ত। লোকসভা ভোটের আগে এভাবেই চলছে প্রচার।
লক্ষ্মীকান্ত বলেন, “সকলেই দিদির এই প্রকল্পের খুব প্রশংসা করছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে প্রথম থেকেই মানুষের খুব ভাল সাড়া আমরা পেয়েছি। আর সম্প্রতি উনি যে ৫০০ টাকা বাড়িয়ে একেবারে ১ হাজার টাকা করে দিয়েছেন, সত্যিই গ্রামবাংলার লক্ষ্মীদের খুবই উপকার হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি যখন প্রচারে যাচ্ছি, সকলে যে কী খুশি হচ্ছেন বলে বোঝাতে পারব না। দিদি মহিলাদের জন্য এত কিছু করেছেন, সকলের মুখে সেই কথাই।”