
তমলুক: ভিনরাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা ইস্যুতে বেশ কিছুদিন ধরেই সরব রাজ্যের শাসকদল। পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যে ফিরে এলে তাঁদের সাহায্যের জন্য নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর্থিক সাহায্যের কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। শ্রমশ্রী নামে ওই প্রকল্পে নাম তোলার জন্য প্রশাসনের তরফে পরিযায়ী শ্রমিকদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব মেদিনীপুরে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচিতে শ্রমশ্রী প্রকল্পে নাম তুলতে দেখা গেল অনেককে। এই নিয়ে উচ্ছ্বসিত রাজ্যের শাসকদল। তবে খোঁচা দিতে ছাড়ল না বিজেপি।
ভিনরাজ্যে পরিচয়পত্র দেখিয়েও বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকরা ছাড় পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এই আবহে ‘শ্রমশ্রী প্রকল্প’ শুরু করেছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার বিভিন্ন ব্লক ও পৌরসভায় আয়োজিত ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ ও ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্প থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের মোট ১৯৩টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই শ্রমশ্রী প্রকল্প সংক্রান্ত।
রাজ্যের পৌর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব বিনোদ কুমার সরেজমিনে নন্দকুমার ব্লক এবং তমলুক পৌরসভার দুটি ক্যাম্প ঘুরে দেখেন। তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সরাসরি তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন।
প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশায় হকারি করতেন তমলুক পৌরসভার বাসিন্দা শেখ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ওখানে হকারি করলেও বিগত কয়েক মাস আগে থেকে আমাদের বাংলাদেশি বলা হচ্ছিল। আধার, ভোটার কার্ড দেখালেও বলা হত সব জাল। রাস্তায় হেঁটে গেলেই গালিগালাজ শুনতে হত। আমরা রীতিমত আতঙ্কে থাকতাম। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শোনার পরেই বাড়ি ফিরে এসেছি। শ্রমশ্রী প্রকল্পে আবেদন করেছি। এই প্রকল্প পেলে সংসারে স্বস্তি আসবে। আমরা অন্তর থেকে দিদিকে ধন্যবাদ জানাই।”
ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন ফিরোজ আলি। তিনি বলেন, “অনেক সময় আমাদের টাকা দেওয়া হত না। উল্টে বাংলাদেশি বলে বাজে ভাষায় কটূক্তি করা হত। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই বাড়ি ফিরে এসে শ্রমশ্রী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেছি। ৫ হাজার টাকা করে পেলে খুব সুবিধা হবে।”
এই বিষয়ে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “আমাদের জেলায় পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার। এখনও যাঁরা আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান ক্যাম্পে রেজিস্টার করেননি তাঁরা করে নিন। যাঁরা বাইরের রাজ্যে কাজ করে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, কোনও দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, এখানে যাঁরা ফিরে আসবেন, তাঁদের সরকারি প্রকল্পের সহায়তা থেকে শুরু করে তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করার ব্যবস্থা হবে। তাঁদের খাদ্য সাথী কার্ড থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সাথী পরিষেবা দেওয়া হবে। লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে যা যা সরকারি প্রকল্প বা সরকারি পরিষেবা থাকছে, তা সবই পাবেন। এই সুযোগটা গ্রহণ করুন।”
এ প্রসঙ্গে এলাকার বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “বাংলা বললেই পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে অপমান করছে। তাদের পরিচয়পত্রকেও জাল বলে কটাক্ষ করা হচ্ছে। এভাবে মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা সত্যিই বিরল। নিঃসন্দেহে আগামী দিনে রাজনৈতিক প্রতিফলন ভোটবাক্সে পড়বেই।”
যদিও সরকারি বা শাসকদলের এই প্রচারকে তীব্র কটাক্ষ করেছে রাজ্যের বিরোধীদল বিজেপি। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য সুরজিৎ বেরা বলেন, “বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অনেক শ্রী উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু, কোন শ্রী-টা ঠিকঠাক চলছে বোঝা যায় না। এই প্রকল্পগুলো শুধু মানুষকে ভাঁওতাবাজি দেখানোর পরিকল্পনা। এক শ্রেণির মানুষকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আর এই ৫০০০ টাকায় কি সংসার চলে?”