৩ দিন ধরে সরকারি হাসপাতালে বিছানার নীচেই পড়ে রয়েছে বৃদ্ধার মৃতদেহ, অন্ধকারে কর্তৃপক্ষ!

Kanthi: হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। তবে ঠিক কী কারণে তিনি চিকিত্‍সাধীন ছিলেন তা স্পষ্টত জানতেন না কেউ।

৩ দিন ধরে সরকারি হাসপাতালে বিছানার নীচেই পড়ে রয়েছে বৃদ্ধার মৃতদেহ, অন্ধকারে কর্তৃপক্ষ!
মৃত বৃদ্ধা, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 10, 2021 | 6:50 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: অমানবিক! হাসপাতালের বেডের নীচেই তিনদিন ধরে পড়ে রয়েছে বৃদ্ধার জরাজীর্ণ মৃতদেহ (Dead body)। দেহে ধীরে ধীরে পচনও ধরতে শুরু করেছে। জানেনই না ওয়ার্ড-মাস্টার! কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের এমনই মর্মান্তিক ছবি প্রকাশ্যে আসতেই নানারকম প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে হাসপাতালের চিকিত্‍‍সা পরিষেবা নিয়েও।

হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। তবে ঠিক কী কারণে তিনি চিকিত্‍সাধীন ছিলেন তা স্পষ্টত জানতেন না কেউ। এরপর গত বৃহস্পতিবার আচমকাই মারা যান ওই বৃদ্ধা। তিনি মারা গেলেও  দেহ সত্‍কার হোক বা রোগীর পরিজনদে খবর দেওয়া কোনও কিছুই করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ। এমনকী, বিগত তিনদিন ধরে হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে কার্যত ওই বৃদ্ধার মৃতদেহের (Dead body) সঙ্গেই একত্রে রয়েছেন অন্য় রোগিণীরা।

ভারতী আচার্য নামে এক রোগিণীর কথায়, “আমি এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি। সেই থেকে দেখে যাচ্ছি ওই বৃদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি। বৃহস্পতিবার আচমকা দেখি তিনি আর বেঁচে নেই। বেডের তলায় বডিটা পড়ে রয়েছে। সেদিন থেকে ওভাবেই রয়ে গিয়েছে। আমরা কিছুজন বলার পরেও হাসপাতাল গা করেনি। শুনেছি, ওই রোগীর বাড়ির কেউ নেই। বয়স্ক মানুষ, একাই থাকতেন। বাড়ি থেকে তো কাউকে হাসপাতালে আসতে দেখিনি।”

হাসপাতালে আসা এক রোগীর আত্মীয় বলেন, “আমি তিনমাস ধরে আমার বাড়ির লোকের জন্য আসছি। তিন মাস আগে এসেও দেখেছিলাম ওই বৃদ্ধাকে। তারপর মাঝে কিছুদিন দেখতে পাইনি। ভেবেছিলাম সুস্থ হয়ে ফিরে গিয়েছেন। তারপর গত মাস থেকে দেখছি। বৃহস্পতিবার এসে শুনি মারা গিয়েছেন তিনি। কিন্তু, বডিটা কেউ সরায়নি। ওইভাবেই বিছানার তলায় পড়ে রয়েছে।”

তিনদিন ধরে হাসপাতালে মাতৃমা বিভাগের মতো এত জরুরি বিভাগে কী করে এইভাবে রোগীর তিনদিনের দেহ পড়ে থাকতে পারে? পাশাপাশি, তা অন্য রোগীদের জন্যেও তো সমস্যার হতে পারে। রোগীর দেহে পচন ধরে অস্বাস্থ্য়কর পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেই কার্যত অবাক হাসপাতাল সুপার চিকিত্‍সক রজত কুমার পাল। তিনি স্পষ্টই বলেন, “এখনও এমন কোনও খবর নেই। এমনকী আমার জানা নেই। আমি গোটা বিষয়টা খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।”

প্রায় একি সুর হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের কথায়। মাতৃমা বিভাগের ওয়ার্ড-মাস্টার উত্তম কুমার মান্না রীতিমতো হতচকিত হয়ে যান। নিজের অধঃস্তন কর্মীকে সংবাদমাধ্যমের সামনেই প্রশ্ন ছুড়তে থাকেন আদৌ ওই বৃদ্ধার নাম মৃতের তালিকায় নথিভুক্ত হয়েছে কি না। তারপর তিনি স্পষ্টই বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এমন কোনও ফাইল হাতেও আসেনি। খবর পেলে নিশ্চই পদক্ষেপ করা হবে।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে গত ২১ জুলাই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ওই বৃ্দ্ধা। কিন্তু, অজ্ঞাতপরিচয় ওই বৃদ্ধার পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। এমনকী, কেউ তাঁর পরিবারেরও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। জানা গিয়েছে ওই বৃদ্ধা ভবঘুরে। তবে, এই ঘটনায়  প্রশ্ন উঠছে হাসপাতালের ভূমিকা নিয়েও। কী করে মৃতের (Dead body) প্রতি এই প্রকার অবহেলা হতে পারে? যদিও, এ বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: ‘সকলের ভালর জন্য’ মন্ত্রীর সই জাল, ৪০০ টাকা দিলেই হাতে-হাতে ভুয়ো আধারকার্ড!

আরও পড়ুন: Kamarhati: ডায়ারিয়া নয়, কামারহাটিতে কলেরা থেকেই সংক্রমণ বৃদ্ধি, বলছে নাইসেডের প্রাথমিক রিপোর্ট