পূর্ব মেদিনীপুর: পানের দোকান থেকে চুরির অভিযোগ। ইস্যু এটাই। আর তা নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল গ্রামের ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। সংঘর্ষে জড়াল গ্রামের দু’পক্ষ। বাঁশ, লাঠি, লোহার রড নিয়ে চলল মারপিট, একে অপরের ওপর হামলা। ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন মহিলাও রয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের পাশকুড়ার থানার চকগোপাল গ্রামের ঘটনা।
জানা গিয়েছে, চকগোপাল গ্রামে একটি পান দোকানে চুরির ঘটনাকে কেন্দ্রে করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা শুরু হয়। মূলত মন্দির পরিচালন সমিতি বনাম গ্রাম কমিটির মধ্যে মূল বচসা। তার জেরে একে অপরের দিকে বাঁশ, লাঠি, রড, নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এই বিষয়টি নিয়ে বলতে গেলে পিছোতে হবে বছর দুয়েক আগে। কারণ গ্রামবাসীরাই বলছেন, এই বিবাদের বীজ রোপণ হয়েছিল তখনই। সেই চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এদিন। দু’বছর আগে গ্রামের এক দল তারা মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করে গ্রামে। বীরভূমের মা তারার মন্দিরের পর সেই আদলেই এই গ্রামে মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তাতে আপত্তি ছিল গ্রামের অপর পক্ষের। মন্দির সমিটির সদস্যদের সঙ্গে গ্রামের কমিটির বিবাদ তখন থেকেই। নানান কারণে দুপক্ষের মধ্যে বচসা হয়েছে এর আগেও। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, তা নাকি প্রেস্টিজ ফাইট।
এদিকে, মন্দির সংলগ্ন এলাকায় বাজার গড়ে তুলেছিলেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। শুক্রবার সামান্য একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। বাজার এলাকার একটি দোকান থেকে পান চুরির অভিযোগ ওঠে। তা নিয়েই বচসায় জড়িয়ে পড়েন মন্দির কমিটি ও গ্রাম কমিটির সদস্যরা। গ্রামের সাধারণ মানুষও তাতে জড়িয়ে পড়েন।
অভিযোগ, বাঁশ, লাঠি, লোহার রড নিয়ে হামলা চালাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। অপরপক্ষ প্রতিরোধ গড়ে তুললে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হামলার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে পড়ে এলাকায়।
হামলার শিকার হন গ্রামের মহিলারাও। একাধিক জনের মাথা ফেটে যায়। কারোর হাত ভেঙে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পাশকুড়া থানার পুলিশ। দু’পক্ষকে সরিয়ে কোনও রকমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে পাশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
জানা গিয়েছে, প্রাথমিক চিকিৎসার পর সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানা। ঠিক অপর প্রান্তেই ক্ষীরপাই-ঘাটাল এলাকার সীমানা। এই ঘটনায় বিস্তীর্ণ এলাকায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে। এই পরিস্থিতি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, তার জন্য পুলিশ টহল দিচ্ছে এলাকায়। তবে ঘটনাস্থলে আইসি পৌঁছলে, তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। এখনও পর্যন্ত কাউকেই এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়নি।
গ্রাম কমিটির এক সদস্য বলেন, “মন্দিরের পাশেই জমিতে ভাতের ফ্যান থেকে শুরু করে কাচের বোতল সব ফেলে হয়। তাতে জমি চাষের অযোগ্য হয়ে যায়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে ওরা বলত খুন করে দেবে। মন্দির কমিটির লোকেরা খুনের হুমকি দেয়।” মন্দির কমিটির সদস্যের তরফে প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: ভোট পিছোতে পারে ২ সপ্তাহ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে বৈঠকে কমিশন