Post Poll Violence: নন্দীগ্রামে মমতার এজেন্ট সুফিয়ান ছাড়াও আরও ২ তৃণমূল নেতাকে তলব সিবিআইয়ের

CBI: সিবিআই সূত্রে খবর, শুধু শেখ সুফিয়ান নন, জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় রয়েছে আরও একাধিক তৃণমূল নেতার। সেই মোতাবেক শেখ সালম ও শেখ তফিজুলকে ডেকে পাঠানো হয়।

Post Poll Violence: নন্দীগ্রামে মমতার এজেন্ট সুফিয়ান ছাড়াও আরও ২ তৃণমূল নেতাকে তলব সিবিআইয়ের
সিবিআই, ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 16, 2021 | 1:42 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে (Post Poll Violence) নন্দীগ্রামে তৃণমূল সুপ্রিমোর মুখ্য এজেন্ট শেখ সুফিয়ানকে বুধবারই তলব করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। বৃহস্পতিবার সকালে, হলদিয়ার সিবিআই ক্যাম্পে তাঁর হাজিরা দেওয়ার কথা। এ বার সেই তালিকায় উঠে এল আরও দুই তৃণমূল নেতার নাম।শেখ সালম ও শেখ  তফিজুল নামে আরও দুই স্থানীয় তৃণমূল (TMC) নেতৃত্বকে নিহত বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি মৃত্যু-মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাল সিবিআই (CBI)।

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর গত ৩ মে দেবব্রত মাইতির উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা দেবব্রতকে পিটিয়ে মারে। হামলার পরে আহত দেবব্রতকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই গত ১৩ মে তাঁর মৃত্যু ঘটে। দেবব্রতের মৃত্যুর পর নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্য জনসভায় হুমকি দিয়ে বলেন, “দেবব্রতকে যারা মেরেছে সকলকে খুঁজে খুঁজে বের করা হবে।” এরপর, নন্দীগ্রাম-চিল্লাগ্রামে দেবব্রতের বসতভিটেতে যান খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।

ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তের দায়ভার কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইয়ের (CBI) হাতে তুলে দেওয়ার পর, রাজ্য জুড়ে চষে বেড়াতে শুরু করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বিজেপি কর্মী দেবব্রতের খুনের ঘটনায় বিধানসভা নির্বাচনের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য এজেন্ট শেখ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সিবিআই সূত্রে খবর, শুধু শেখ সুফিয়ান নন, জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় রয়েছে আরও একাধিক তৃণমূল নেতার। সেই মোতাবেক শেখ সালম ও শেখ তফিজুলকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু শেখ সালম উপস্থিত না থাকায় তাঁর স্ত্রী হাজির হন হলদিয়ায় সিবিআই ক্যাম্পে। উপস্থিত হন খোদ সুফিয়ানও।

তৃণমূল নেতাদের এই তলব প্রসঙ্গে যদিও সুফিয়ানের দাবি, বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতির মৃত্যুর ঘটনায় তাঁরা কেউ যুক্ত নন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিজেপি এই ষড়যন্ত্র করেছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতার। বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল পাল্টা বলেন, “নির্বাচনের পর দিন চিল্লোগ্রামে দেবব্রত মাইতির বাড়ি গিয়ে তাঁকে মারধর করেছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। গুরুতর জখম অবস্থায় দেবব্রতকে কলকাতায় নিয়ে গেলে দু’দিন বাদে মৃত্যু হয় তাঁর।’’

বিজেপি নেতা আরও বলেন,  ‘‘নন্দীগ্রাম থানায় সেই মুহূর্তে মামলা করা যায়নি। কারণ তৃণমূলের লোকেরা চার দিক ঘিরে রেখেছিল। পুলিশও নিষ্ক্রিয় ছিল। পরে মানবাধিকার কমিশন নন্দীগ্রামে এলে তাঁদের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই ঘটনায় সেখ সুফিয়ান-সহ নন্দীগ্রামের বেশ কয়েক জন প্রথম সারির তৃণমূল নেতার নাম রয়েছে। এরপরেও যদি সুফিয়ানবাবু বলেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে, তাহলে বলব, তিনি নিজের স্বপক্ষে যুক্তি তৈরি করুন। কারণ সবটাই আইন মেনে হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) সুপারিশকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক তরজা। পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু, সেই মামলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাগুলির তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে। অন্যদিকে, বাকি হিংসার ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের তিন সদস্যের একটি সিট গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে ওঠে রাজ্য সরকারের জন্য। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিজের রিপোর্টে উল্লেখ করে, এ রাজ্যে আইনের শাসন নেই, শাসকের আইন রয়েছে। যা তীব্র অস্বস্তির মধ্যে ফেলে রাজ্যকে। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের থেকেও মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টই যেন গলার কাঁটা হয়ে ফুটছে। যে কারণে গোটা মামলায় হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয় রাজ্য সরকার।

ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায়  ইতিমধ্যেই প্রায় চারটি চার্জশিট দাখিল করেছে সিবিআই। বেড়েছে মামলার সংখ্যাও। আরও ৩ টি এফআইআর রুজু করেছে সিবিআই। মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৫।  ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে মোট ৮৪ জন তদন্তকারী অফিসার বা আইও-র মধ্যে ইন্সপেক্টর, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন। এছাড়া ২৫ জন কর্তা রয়েছেন এই দলে। জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার এই ২৫ জন অফিসার।

প্রত্যেক জোনের টিমে ২১ জন করে তদন্তকারী অফিসার বা আইও। বেশিরভাগ ডিআইজি ও এসপি পদমর্যাদার কর্তা। রাজ্যে ১৫ টি খুন এবং ৬ টি ধর্ষণের মামলায় ২৭ অগাস্ট ১১টি এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। খুন, খুনের চেষ্টা, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপহরণ, অনুপ্রবেশের মতো একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরগুলি দায়ের করা হয়।

আরও পড়ুন: Arjun Singh: সাংসদের বাড়িতে বোমাবিস্ফোরণ-কাণ্ডে ৩ দিনের মধ্যে NIA-কে নথি হস্তান্তরের নির্দেশ আদালতের

আরও পড়ুন: Post Poll Violence: ফের তৃণমূলের কার্যালয়ে সিবিআই, শাসক দলের একাধিক নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ