TMC Leader Murder Case: কুরবান শাহ হত্যা মামলায় স্থগিতাদেশ জারি সুপ্রিমকোর্টের, স্বস্তিতে পরিবার
Supreme Court: এ বার তৃণমূল নেতার মৃত্যু মামলায় স্থগিতাদেশ জারি করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। নিম্ন আদালতে চলা এই সংক্রান্ত সমস্ত মামলাগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট।
পূর্ব মেদিনীপুর: দুর্গাপুজোর রাতে খুন হওয়া তৃণমূল নেতা তথা পাঁশকুড়ার ব্লক তৃণমূল সভাপতি কুরবান শাহ হত্যা মামলায় (Kurban Shah Murder Case) স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিমকোর্ট (Supreme Court)। ফলে, কিছুটা স্বস্তিতে পরিবার। মঙ্গলবার, সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে কে মাহেশ্বরী আগামী ১ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেন।
মৃত তৃণমূল নেতার (TMC Leader) পরিবারের তরফে বারবার অভিযোগ করা হয়েছিল, যে কুরবান শাহ-হত্যাকাণ্ডে সাক্ষীদের নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। তমলুক জেলা আদালত থেকে সেই মামলা হাইকোর্টে গেলেও স্বস্তি মেলেনি। অবশেষে, মামলা চালাতে নিরাপত্তা চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মৃতের পরিবার। সেই আবেদনের পরেই এ বার তৃণমূল নেতার মৃত্যু মামলায় স্থগিতাদেশ জারি করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। নিম্ন আদালতে চলা সমস্ত মামলাগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট।
ঘটনায়, কুরবানের দাদা আফজল শাহ বলেন, “আমরা এখানে মামলা লড়তে গিয়ে নিরাপত্তা পাচ্ছি না। নানা সময়ে আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। সাক্ষীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে প্রাণে মারার হুমকি তো ছিলই। তাই আমরা চেয়েছিলাম ভিনরাজ্যে মামলা হোক। আমরা এখন তেমনটাই চেষ্টা করছি। আজ সুপ্রিমকোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করায় আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ করতে সুবিধা হবে।”
উল্লেখ্য, তৃণমূল নেতা কুরবান শাহ হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত আনিসুর রহমান এখনও জেলবন্দি। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন ১২ মে জেল থেকে মুক্তি পাাচ্ছেন তিনি। কিন্তু, তারপরেই হাইকোর্টের নির্দেশে আনিসুরকে ফের গ্রেফতার করা হয়। পাঁশকুড়ার এই শুভেন্দু-বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে পরিচিত আনিসুরের জামিন নিয়ে এখন আলাদা করে কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। শুভেন্দু বিজেপিতে চলে যাওয়ায় প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আনিসুরের সম্পর্কে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদর্থক কথা, ভোটের আগে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের মামলা প্রত্যাহার- এসব নিয়ে ক্ষেত্র তৈরিই হচ্ছিল।
জেলে থাকাকালীন, আনিসুরের এক ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়। যাতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে আনিসুর লেখেন ‘আমার মুক্তি’। গত ১৪ মে দুই পক্ষের আইনজীবীর সওয়াল জবাব শোনার পর সংশ্লিষ্ট মামলার রায়দানে স্থগিতাদেশ দেন তমলুক জেলা আদালতের বিচারপতি গৌরী শারিকা। পরবর্তী রায়দানের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়েছিল ১৮ মে। এদিন দুই তরফের আইনজীবীর সওয়াল শেষে আনিসুরের জামিন খারিজে সিলমোহর দেন অতিরিক্ত জেলা দায়রা ফার্স্ট ট্র্যাক সেকেন্ড কোর্টের বিচারপতি সুরজিত শীল।
তমলুক আদালতে মামলার রায়ে সন্তুষ্ট না হয়ে নিহত কুরবানের পরিবার হাইকোর্টে আপিল করেন। কুরবানের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন আনিসুর মুক্তি পেলে তাঁদের প্রাণের ঝুঁকি বাড়বে। মামলার নিষ্পত্তি হবে না। আদালতে মামলার সওয়াল জবাব শুনে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, কেন তড়িঘড়ি মামলা প্রত্যাহার করতে চাইছে রাজ্য? এরপরেই রাজ্য সরকারের নির্দেশ ও তমলুক আদালতের যাবতীয় রায় খারিজ করে দেন বিচারপতি। একইসঙ্গে আনিসুরকে গ্রেফতারেরও নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু, নিহত নেতার পরিবারের অভিযোগ, তারপরেও হালে পানি ফেরেনি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে অবশেষে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হন কুরবানের পরিবার।
প্রসঙ্গত ২০০৬ সাল পর্যন্ত সিপিএমে ছিলেন আনিসুর রহমান। এরপর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। সেই সময় আনিসুরের বাইকে করেই নন্দীগ্রামে পৌঁছেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশের নির্বাচন আবহে জনসভায় নিজেই আনিসুরের পক্ষে সওয়াল করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দু-বিরোধী বলে পরিচিত এই নেতার দূরত্ব তৈরি হয়। পরে ওই বছরেই বিজেপিতে চলে যান আনিসুর। ২০১৯ সালে দুর্গাপুজোর নবমীর রাতে খুন হন পাঁশকুড়ার তৃণমূল ব্লক সভাপতি কুরবান শাহ। সেই মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার এই বিজেপি নেতার নাম। গ্রেফতার হন তিনি। সেই আনিসুরের বিরুদ্ধেই ভোটমুখী বাংলায় গত মার্চে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে নেয় মমতার সরকার। তার পর থেকে ফের খবরের শিরোনামে উঠে আসেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় মমতাকে মোটর বাইকে বসিয়ে রওনা হওয়া এই নেতা।
আরও পড়ুন: Anubrata Mondal: ‘রবীন্দ্রনাথও আত্মহত্যা করতেন’, বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের ‘লাগামহীন নেশায়’ তোপ কেষ্টর!
আরও পড়ুন: Kaliachak: ফের ‘কুরুক্ষেত্র’ কালিয়াচক, আচমকা বোমা ফেটে জখম ২ শিশু!