Sayantika Banerjee: ‘দলে কাকে নেওয়া হবে তা দিদি ঠিক করবেন…এক ভুল বারবার করব না’
Srabanti Chatterjee: সেলুলয়েডের জগতে তাঁরা একে অপরের সতীর্থ। একসময়, সায়ন্তিকা-তনুশ্রী-মিমি-নুসরত একত্রে পরিচিত ছিলেন টলিউডের 'গুলাব গ্যাং' নামে। পরে, চার টলি সুন্দরী নিজ নিজ পথে গোলাপী থেকে সবুজ বা গেরুয়া হয়েছেন
পুরুলিয়া: সদ্যই বিজেপি ত্যাগ করেছেন তারকা নেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় (Srabanti Chatterjee)। ট্যুইট করে নিজ দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর দলত্যাগে সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেই মনে করছেন শ্রাবন্তীর তৃণমূলে যোগদান কেবল সময়ের অপেক্ষা। সে প্রসঙ্গেই এ বার মুখ খুললেন, শ্রাবন্তীরই সতীর্থ অভিনেত্রী তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (Sayantika Banerjee)।
পুরুলিয়ায় তৃণমূলের কর্মিসভামঞ্চ থেকে সায়ন্তিকা বলেন, “কাকে দলে নেওয়া হবে তা দিদি ঠিক করবেন। শ্রাবন্তী যা করেছেন তা ওঁর একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। তবে দলের খারাপ সময়ে যাঁরা দল ছেড়ে গিয়েছেন, বা তখন পাশে ছিলেন না তাঁদের ক্ষেত্রে আশা করছি দল কোনও সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেই নেবে। কারণ একই ভুল আমরা বারবার করতে পারব না।”
সেলুলয়েডের জগতে তাঁরা একে অপরের সতীর্থ। একসময়, সায়ন্তিকা-তনুশ্রী-মিমি-নুসরত একত্রে পরিচিত ছিলেন টলিউডের ‘গুলাব গ্যাং’ নামে। পরে, চার টলি সুন্দরী নিজ নিজ পথে গোলাপী থেকে সবুজ বা গেরুয়া হয়েছেন। ফলে সেই ‘গুলাব গ্য়াং’-এ এখন দেখা যায় না সায়ন্তিকা আর মিমিকে। মাঝখান থেকে শ্রাবন্তী এসে যোগ দিয়ে তনুশ্রী-শ্রাবন্তী-নুসরত পরিচিতি পান ‘থ্রি মাসকেটিয়ার্স’ নামে। সেইদিক থেকে দেখতে গেলে শ্রাবন্তী সায়ন্তিকার মধ্যে বন্ধুত্বের রসায়ন যে ‘প্রগাঢ়’ এমনটা বলা যায় না। দুই নায়িকাকে কখনওই একসঙ্গে কোথাও উল্লেখযোগ্যভাবে দেখাও যায়নি তাঁদের। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দু’জনেই পৃথক পথে হেঁটেছেন। সেক্ষেত্রে শ্রাবন্তী যদি তৃণমূলে যোগ দেন তাহলে কি তৈরি হতে পারে কোনও নতুন রসায়ন? সে তো সময়ের অপেক্ষা, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকালে টুইট করে দল ছাড়ার কথা জানিয়েছেন শ্রাবন্তী। তিনি লিখেছেন, ‘আমি দলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।’ দল ছাড়ার কারণ নিজেই জানিয়েছেন শ্রাবন্তী। তিনি দাবি করেছেন, রাজ্যের জন্য কিছু করার কোনও উদ্যোগ নেই বিজেপির। সেই কারণেই দল ছাড়লেন তিনি। শ্রাবন্তী সংগঠনের সঙ্গে তেমনভাবে যুক্ত নয়, তাই দল ছাড়লে দলের তেমন কোনও ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, তবে এক তারকা মুখ কমে যাওয়া বিজেপির জন্য ধাক্কা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। ট্রেন্ড বলছে, যারা গেরুয়া শিবির ছেড়েছেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ ক্ষেত্রে শ্রাবন্তী তেমন কোনও পদক্ষেপ করবেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
Severing all ties with the BJP, the party for which I fought the last state elections.Reason being their lack of initiative and sincerity to further the cause of Bengal…
— Srabanti (@srabantismile) November 11, 2021
একুশের নির্বাচনের আগে ঘটা করে বিজেপিতে যোগ দেন টলি অভিনেত্রী শ্রাবন্তী। তৎকালীন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত থেকে পতাকা তুলে নেন তিনি। বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে প্রার্থীও হন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েন অভিনেত্রী। নির্বাচনে ৫০ হাজার ভোটে হেরে যান শ্রাবন্তী। ভোটের পর থেকেই আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তেমন সক্রিয় হতে দেখেনি অভিনেত্রীকে। এবার দল ছাড়ার কথা নিজেই ঘোষণা করলেন তিনি।
শুধু শ্রাবন্তীই নয়, পার্নো মিত্র, পায়েল সরকার, তনুশ্রীর মতো একাধিক তারকাকে ভোটের ময়দানে নামিয়েছিল বিজেপি। অভিনেতা হিরণ বা ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালের মতো কয়েকটি নাম বাদে, আর কাউকে দেখা যায়নি জয়ী প্রার্থীদের তালিকায়। ভোটের পর গেরুয়া শিবিরের এই তারকা প্রার্থীদের নগরের নটি বলে সম্বোধন করেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তাঁদের ভোটে লড়ানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেননি তিনি। শ্রাবন্তী দল ছাড়ার পর তিনি জানান, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘অনেক আগেই বলেছিলাম। যা বলেছিলাম, মোটামুটি তাই হচ্ছে। আমি কোনও ভবিষ্যাৎ দ্রষ্টা নই, তবে নগরীর নটিদের দলে আনা যে রাজনৈতিক ভুল ছিল, সে কথা আমি আগেই বলেছিলাম। এখন সেই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে।’ তথাগত রায়ের কথায়, এই সব প্রার্থীদের পিছনে টাকা খরচ করা ঠিক হয়নি।
ভোট আবহে দোলের দিনের একটি ছবি নিয়েও রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়। সেই ছবিতেও দেখা গিয়েছিল শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়কে। তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রের সঙ্গে গঙ্গাবক্ষে একসঙ্গে আনন্দে মেতে উঠতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি প্রার্থী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, তনুশ্রী চক্রবর্তী, পায়েল সরকারকে। এই ছবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। রাজনৈতিক মহলের মতে শ্রাবন্তী চলে যাওয়ায় কোনও প্রভাব পড়বে না দলে। তিনি সক্রিয় ছিলেন না, সংগঠনের কোনও কাজও করেননি। তাই তাঁর অভাব বোধ হবে না গেরুয়া শিবিরের। তবে এ ভাবে পরপর নেতা-নেত্রীদের দল ছাড়ার ঘটনা, বঙ্গ বিজেপির কাছে একটা ধাক্কা বলে মনে করছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন: TMC: ‘গোঁজ প্রার্থী দিলে চামড়া গুটিয়ে নেব’, হুঁশিয়ারি বনগাঁর তৃণমূল সভানেত্রীর