Cyclone Yaas: অদ্ভূত নিঃস্তব্ধতা ছিল, আচমকাই বুক কাঁপানো হু হু শব্দ আর মুহূর্তেই সব শেষ! ৪২ বছরে এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেন নি ওঁরা
চাঁদিপুরে (Chandipur) সমুদ্রের কাছেই দাঁড়িয়ে যখন কথাগুলি বলছিলেন মধ্য চল্লিশ পেরনো মানুষটা, তখন তাঁর চোখেমুখে আতঙ্কের পাশাপাশি অদ্ভূত একটা বিস্ময়েরও ছাপ ছিল বটে! তখনও অবশ্য ইয়াস (Cyclone Yaas) স্থলভাগে আছড়ে পড়েনি।
TV9 বাংলার প্রতিনিধি যখন চাঁদিপুরে সমুদ্রের চেহারা দর্শকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছিলেন, ঠিক তার পাশেই নির্বাক দৃষ্টিতে সমুদ্রের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন ওই ব্যক্তি। আপন মনেই কথাগুলো বলতে শুরু করেছিলেন। উৎসাহ দেখাতেই নিজে থেকে বলতে শুরু করলেন দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা।
জানালেন, কীভাবে মঙ্গলবার রাত থেকেই একটা বুক কাঁপানো হু হু শব্দ ভেসে আসছিল তাঁর কানে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তিনিও নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেছেন। কিন্তু সমুদ্র যে ভালবাসেন তিনি! যে সমুদ্রের ভয়াল চেহারা শঙ্কা ধরিয়েছে তাঁর বুকেও। বললেন, “আমাদের সমুদ্র এমনিতেই শান্ত। বিকাল হলেই এখানে আসি। আজ যত বড় ঢেউ দেখলাম, তার যা রুদ্র চেহারা দেখলাম, গত ৪২ বছরে আমি তা দেখিনি।”
তাঁকে থামানো যায়নি। আবেগের সঙ্গে প্রকৃতির বিপর্যয়কে কীভাবে সামনে থেকে দেখলেন তিনি, তা বর্ণনা করে চলেছিলেন এক নাগাড়েই। বললেন, “কথায় বলে না, ঝড় আসার আগে সব থম মেরে যায়। তাই হল বটে। একটা অদ্ভূত নিস্তব্ধতা ছিল। আর তারপরই হু হু করে বইতে শুরু করল হাওয়া। দরজা জানলা বন্ধ করে আমরা তখন ঘরের ভিতর। ঠকঠক করে কেঁপে উঠছিল জানলা-দরজার পাল্লা। এই বুঝি ভেঙে যায়। বিকট শব্দে মড় মড় ভেঙে পড়ল গাছ। বিপদ সম্মুখে, বুঝে গিয়েছিলাম। তখনও অবশ্য জল ঢোকেনি গ্রামে।”
ইয়াসের ল্যান্ডফলের পর আরও বিধ্বংসী চেহারা নেয় সমুদ্র। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় একের পর এক গ্রাম। প্রৌঢ় বললেন, “চোখের সামনে দেখছি, ছোট্ট শিশুকে বুকে চেপে মা কোমর সমান জলের মধ্যে দিয়ে রীতিমতো দৌঁড়চ্ছেন। পিছনে যে ধেয়ে আসছে মস্ত বড় ঢেউ। রাস্তার কুকুর-বিড়াল-গরুগুলো মুখে উঁচিয়ে এগনোর চেষ্টা করছে। বড্ড অসহায় সেই দৃশ্য।”
আরও পড়ুন: সন্ধ্যায় চন্দ্রগ্রহণ, রাত ৯টায় ফের কোটাল! পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দিঘা-সাগরে
একটি নিরাপদ আস্তানার নীচেই তখন মানুষ-পশুর সহাবস্থান। ইয়াসে বিপর্যস্ত বাংলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলি। দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমনি অন্যদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, বকখালি প্রভৃতি এলাকায় একের পর এক গ্রামে প্লাবিত। সেনা, এনডিআরএফ কর্মীরা উদ্ধারকার্যে লড়াই চালাচ্ছেন। কিন্তু অনেক গ্রামবাসীই তাঁর আস্তানা ছাড়তে নারাজ। জল ভেসেছে সর্বস্ব, উড়ে গিয়েছে বাড়ির চাল। কিন্তু শেষ আস্তানাটুকুই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে রেখেছেন তাঁরা। তাঁদের বুঝিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসাই এখন প্রশাসনের মস্ত চ্যালেঞ্জ।