ঢাকা: সামনেই দুর্গাপূজা। হাতে আর বেশি দিন নেই। আরজি কর আবহে এপার বাংলায় উৎসবের আমেজ নেই বললেই চলে। অন্যদিকে, ওপার বাংলাতেও শেখ হাসিনার পতনের পর দুর্গাপূজা নিয়ে এক অদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হাসিনা থাকাকালীনই, গত কয়েক বছরে দুর্গাপুজোর সময় হামলা হয়েছে মন্ডপে। ভাঙা হয়েছে প্রতীমা। হাসিনা বিদায়ের পর, গত দেড় মাসে বাংলাদেশে যেভাবে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের,যে এই ধর্মীয় উৎসব কতটা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা যাবে, তা নিয়ে সন্দিগ্ধ সেখানকার হিন্দুরা। এই অবস্থায়, দুর্গাপুজোর সময় একেবারে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
আগামী ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর পালিত হবে দুর্গাপূজা। বাংলাদেশি পুলিশ জানিয়েছে, এই বছর সেই দেশে সব মিলিয়ে ৩২,৬৬৬ টি মন্ডপে দুর্গাপুজো হবে। সোমবার, বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরে আইজিপি, মহম্মদ মইনুল ইসলাম দুর্গাপূজার আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিষয়ে এক বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। তারপর আইজিপি জানান, দুর্গাপূজার মন্ডপগুলির নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। দুর্গাপূজা, তার আগের কয়েকদিন এবং দুর্গাপূজা-পরবর্তী প্রতিমা বিসর্জনের সময় তিন স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা করবে পুলিশ। এই উৎসবে যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য পুলিশ সচেষ্ট। অনেক সময়ই দেখা গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কোনও গুজবকে কেন্দ্র করে অশান্তি হয়েছে। এই ধরনের গুজব ছড়ানো ঠেকাতে পুলিশের সাইবার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান আইজিপি।
তারপরও যদি কোনও জরুরী পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেই ক্ষেত্রে হিন্দু নেতাদের জাতীয় জরুরি পরিষেবা নম্বর ৯৯৯ বা নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন এই বাংলাদেশি পুলিশ কর্তা। তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত নয় রাতের উৎসবের শেষ রাতে, দুষ্কৃতীরা পূজা মণ্ডপে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে। তাই ওই রাতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। মহম্মদ মইনুল ইসলাম আরও বলেছেন, সিসিটিভি বা আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে পুলিশ প্রতিটি মন্ডপের উপর নজর রাখবে। প্রতিটি মন্ডপে পুলিশ সদস্যরা থাকবেই, তার পাশাপাশি সর্বক্ষণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাসেবক রাখার আহ্বান জানিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ।
মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশে, উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে নিরাপদে ও সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা হবে বলে আশাবাদী আইজিপি। তবে, ইতিমধ্যেই তাঁর সেই আশার উপর কালো মেঘ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি, বিশেষ করে খুলনা জেলার দুর্গা পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের বেনামে হুমকি চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি সংবাদপত্র ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দাকোপ এলাকায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি হিন্দু মন্দিরে এমন চিঠি দিয়ে ৫ লক্ষ টাকা তোলা চাওয়া হয়েছে। না দিলে দুর্গোৎসব পালন করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। পূজা কমিটির নেতাদের কঠোর পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে ইতিমধ্য়েই পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে।