‘আফগানিস্তানে তালিবান অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী আমেরিকাই’, তোপ চিনের, বিশেষ প্রস্তুতি পাক সেনার

তালিবানের একটি উগ্রপন্থী দল শুক্রবার দাবি করে যে, বর্তমানে আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশই তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

'আফগানিস্তানে তালিবান অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী আমেরিকাই', তোপ চিনের, বিশেষ প্রস্তুতি পাক সেনার
তালিবানদের জবাব দিতে প্রস্তুত আফগান সেনাও।ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 12, 2021 | 9:18 AM

নয়া দিল্লি: ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি। ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কান্দাহার থেকে ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিবিদও  কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর রবিবার বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, ভারতীয় কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাই বিদেশমন্ত্রকের প্রাথমিক উদ্বেগ হলেও, যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে এখনও দূতাবাস বন্ধ করা হয়নি।

বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, “আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ভারত। ভারতীয় কর্মীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে।” বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীও এক বিবৃতিতে বলেন, “কান্দাহারে ভারতের দূতাবাস বন্ধ করা হয়নি। তবে কান্দাহার শহরের কাছে তালিবানি অভ্যুত্থানের কারণে ভারতীয় কর্মীদের আপাতত ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”

অরিন্দম বাগচী আরও বলেন, “পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত দূতাবাসের কাজকর্ম সচল রাখার জন্য একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।  আমাতত দূতাবাসটি স্থানীয় কর্মীদের মাধ্যমেই সচল রাখা হচ্ছে। আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার দেশ হিসাবে ভারত সেখানে শান্তিপূর্ণ, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফেরানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

জানা গিয়েছে, তালিবানি আগ্রাসনের কারণে ইতিমধ্যেই ২ লক্ষাধিক আফগানিস্তানের মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন। ৩৭৫টি জেলার মধ্যে ২০০ জেলাতেই তালিবানদের সঙ্গে যুদ্ধ চালাচ্ছে আফগান বাহিনী। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও ইরানের মতো বেশ কয়েকটি দেশের ১৮টি সীমান্তবর্তী জেলাতেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পরই দেশের বিভিন্ন অংশে তালিবানী নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়।  তালিবানের একটি উগ্রপন্থী দল শুক্রবার দাবি করে যে, বর্তমানে আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশই তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আফগানিস্তানের প্রতিবেশী রাষ্ট্র, আমেরিকা বা তার সহযোগী বিশ্বের কোন দেশকেই আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।

এই বিষয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার বলেন, “আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতির প্রভাব পাকিস্তানেও পড়তে পারে, তবে তা মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত দেশ”। তিনি আরও বলেন, “কেবল আফগানিস্তানের শান্তি চুক্তির সমন্বয়কারী হিসাবে দায়বদ্ধ নয় পাকিস্তান। আফগানিস্তানকে নিজস্ব নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে।”

আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে পাকিস্তান পুরোপুরিভাবে সচেতন এবং মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ করছে বলে জানান তিনি। মুখপাত্র জানান, ইতিমধ্যেই সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং দেশের ২৬১১ কিলোমিটার সীমান্তের ৯০ শতাংশেরও বেশি অংশে বেড়া দেওয়া হয়েছে। আফগান শরণার্থীদের পালিয়ে পাকিস্তানে আসার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায়  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও তার জন্য একটি আপাতকালীন পরিকল্পনা তৈরি করেছেন।

আফগান বাহিনীকে কটাক্ষ করে পাক সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, “আফগান ন্যাশনাল আর্মি বিগত ২০ বছর ধরে মার্কিন সেনার অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়েছে, তবুও তারা এখনও পর্যন্ত তালিবানদের থামাতে ব্যর্থ ।” উল্লেখ্য,  মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবারই জানিয়েছিলেন যে, আফগানিস্তানে বিগত ২০ বছর ধরে চলা আমেরিকার সামরিক মিশন ৩১ অগস্টের মধ্যে শেষ হবে এবং সম্পূর্ণরূপে সেনা প্রত্যাহার করা হবে। আরও পড়ুন: ধান ক্ষেত থেকে মহাকাশ, অন্ধ্রর মেয়ে শিরিষার স্বপ্নের অভিযান 

ওদিকে, চিনের তরফে জানানো হয়েছে যে, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা সঙ্কটের জন্য দায়ী আমেরিকাই। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, “আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে আমেরিকা তার দায়িত্ব থেকে পালাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমেরিকা আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আফগানিস্তানের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী আমেরিকাই।”