ধান ক্ষেত থেকে মহাকাশ, অন্ধ্রর মেয়ে শিরিষার স্বপ্নের অভিযান
যেখানে আকাশের সঙ্গে মহাকাশ মেশে সেই ক্যারামান লাইনের আশপাশে ঘুরে বেড়াবেন অন্ধ্র প্রদেশের মেয়ে শিরিষা বান্দলা
কলকাতা: আকাশ পেরিয়ে মহাকাশ। অনেক দূরত্ব। অনেক উচ্চতা। সেখানে পৌঁছন সকলের সাধ্যি নয়। তবে অসম্ভবও নয়। বারবার এ কথা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়েছে বিজ্ঞান। প্রযুক্তির জোরে আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশে প্রথম গিয়েছিলেন ইউরি গ্যাগারিন, তাও ১৯৬১ সালে। এরপর আরও অনেকে গিয়েছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা সুনীতা উইলিয়ামস গিয়েছেন, কল্পনা চাওলাও গিয়েছেন। আরও একজন যাচ্ছেন। গুন্টুরের ধান ক্ষেতে যাঁর পা ঘুরে বেড়াত, সেই তিনিই যাচ্ছেন মহাকাশে। যেখানে আকাশের সঙ্গে মহাকাশ মেশে সেই ক্যারামান লাইনের আশপাশে ঘুরে বেড়াবেন অন্ধ্র প্রদেশের মেয়ে শিরিষা বান্দলা (Sirisha Bandla)।
বেড়ে ওঠা: ১৯৮৭ সালে অন্ধ্র প্রদেশের গুন্টুরে জন্ম শিরিষার। বেড়ে ওঠা মার্কিন মুলুকের টেক্সাসে। সেখানে পার্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এয়ারোস্পেস, অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করেন শিরিষা। ছোটবেলা থেকেই আকাশের প্রতি একটা কৌতুহল ছিল তাঁর। এ কথা জানিয়েছেন খোদ তাঁর দাদু।
পরিবার: শিরিষার বাবা বি মুরলিধর ও মা অনুরাধা। দু’জনেই আমেরিকায় সরকারি চাকরি করেন। তাঁর দিদি প্রত্যুষা আমেরিকায় জীব বিজ্ঞানের টেকনিসিয়ান। শিরিষার দাদু বান্দলা রাগাইয়াহ হায়দরাবাদের আচার্য এনজি রঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ও প্রধান বিজ্ঞানী।
কর্মজীবন: শিরিষার কর্মজীবন শুরু এটিএ ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। এরপর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এল-৩ কমিউনিকেশনসে যোগ দেন তিনি। ২০১২ সালে কমার্সিয়াল স্পেসফ্লাইট ফেডারেশনের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর হন শিরিষা। ২০১৫ সালে ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যানসন ভার্জিনা গ্যালাক্টিকে। এরপর ক্রমাগত পদোন্নতির পর ২০২১ সালে ভার্জিন গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন তিনি। নিউ মেক্সিকো থেকে ইউনিটি-২২ ইতিমধ্যে মহাকাশের উদ্দেশে উড়ে গিয়েছে। সেই ইউনিটি-২২ মহাকাশযানে সংস্থার মালিক রিচার্ড ব্র্যানসন ছাড়া থাকবেন আরও ৫ জন। তাঁদের মধ্যে একমাত্র ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিরিষা।
ইউনিটি-২২ অভিযান: মহাকাশযান হয় স্থলভাগ থেকে ওড়ে নয় সমুদ্র থেকে। রিচার্ড ব্র্যানসনের এই ইউনিট-২২ উড়ছে আকাশ থেকে। যা মহাকাশ অভিযানে এই প্রথম। আকাশ থেকেই শিরিষাদের মহাকাশে ছুড়ে দেওয়া হবে। সেখানে ৪ মিনিট ভেসে বেড়াবেন তাঁরা। এর আগে যত মহাকাশযান উড়েছে সবই সমুদ্র বা স্থলভাগ থেকে। এই প্রথম আকাশ থেকে মহাকাশে পাড়ি দেবেন ৬ জন। সব হিসেব মতো চললে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে তাঁদের এই সমগ্র অভিযানের। সোমবার ভোর রাতে আমেরিকা ফিরবেন তাঁরা।
মহাকাশ এখন আর অনেক দূরে নয়। প্রযুক্তির সাহায্যে আসতে আসতে কাছে এগিয়ে আসছে মহাকাশ। ১১ জুলাই শিরিষাদের উড়ানের পর মহাকাশে যাচ্ছেন আরেক ধনকুবের জেফ বেজ়োস। তাঁর সফর সঙ্গী ভাই এবং নাসার ওয়ালি ফাঙ্ক। জেফ বেজ়োসের সংস্থা ব্লু অরিজিনের দাবি ২০ জুলাই বেজ়োস পৌঁছবেন আরও গভীর মহাকাশে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি উচ্চতায় থাকবেন তাঁরা। ব্র্যানসন ও বেজ়োসের এই মহাকাশ অভিযানই কার্যত মহাকাশ ভ্রমণের রাস্তা খুলে দেবে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আর অবশ্যই সেই নতুন অধ্যায়ের প্রথম পাতায় নাম থেকে যাবে অন্ধ্র প্রদেশের মেয়ে শিরিষার। আরও পড়ুন: আমি শ্রী মদন গোপাল মিত্র…