
ঢাকা: কেউ চিনত না। হঠাৎই একদিন ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে উঠেছিল সরল সাদামাটা ছেলেটার মুখ। আচমকাই উত্থান রাজনীতিতে, আবার কাহিনি লেখার আগেই যেন মাঝপথে ছেদ পড়ে গেল। শরিফ ওসমান বিন হাদি (Osman Bin Hadi)-র মৃত্যুতে অশান্ত বাংলাদেশ (Bangladesh)। দিকে দিকে জ্বলছে আগুন। যাকে নিয়ে এত চর্চা, এত আন্দোলন, কে এই ওসমান হাদি?
অতি সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা ওসমান হাদি হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় মুখ। শেখ হাসিনার দল, আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছিল, তার অন্যতম মুখ ছিলেন হাদি। বলা চলে, সেই সময় থেকেই তাঁর উত্থান। গ্রেটার বাংলাদেশের মানচিত্র, যেখানে সেভেন সিস্টার্স সহ ভারতের একাধিক অংশকে বাংলাদেশের বলে দাবি করা হয়েছিল, সেই মানচিত্র তৈরির পিছনেও ছিলেন এই হাদি।
১৯৯৩ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশের বরিশালে জন্ম ওসমান হাদির। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবথেকে ছোট হাদি। ঢাকার রামপুরা এলাকায় থাকতেন। পেশায় শিক্ষক তিনি। জুলাই আন্দোলনের সময় যখন সকলে প্রতিবাদে মাঠে নামে, তখন ওসমান হাদিও স্থানীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। রাতারাতি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন হাদি। রামপুরা এলাকার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবিতে যারা সরব হয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ওসমান হাদি। এই সময়েই তৈরি হয় ইনকিলাব মঞ্চ। এর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ন্যায়বিচারের দাবি প্রতিষ্ঠা করা। ইনকিলাব মঞ্চ গঠনের পর জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি রক্ষা, অপরাধীদের বিচার, আহত-নিহত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি এবং জুলাই চার্টার ঘোষণার দাবি তুলেন হাদি। যা তাঁকে রাজনৈতিক আলোচনার আরও কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।
৩২ ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুরেও যুক্ত ছিলেন হাদি। তাঁকে নিয়ে বিস্তর বিতর্কও হয়েছিল। ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে হাদি আওয়ামী লীগের দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলে ধরেন এবং দাবি না মানলে সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দেন। হাদি সম্প্রতিই সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছিলেন যে তাঁকে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন-মেসেজ করে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবু ভয় পাননি হাদি। আসন্ন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসাবে লড়াই করার ঘোষণা করেন। “চা-সিঙ্গারা” আড্ডার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারও শুরু করে দিয়েছিলেন। এর মধ্যেই ঘটে গেল মর্মান্তিক ঘটনায
গত ১২ ডিসেম্বর তিনি জুম্মার নামাজের পর ঢাকার বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকা দিয়ে আসছিলেন। সেই সময়ই হাদিকে লক্ষ্য করে দুষ্কৃতিরা গুলি চালায়। মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায় হাদির। দ্রুত উদ্ধার করে তাঁকে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ও পরে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানেও ক্রমে অবস্থার অবনতি হচ্ছিল হাদির। শুক্রবার ,১৮ ডিসেম্বর রাতে ওসমান হাদির মৃত্যু হয় সিঙ্গাপুরে। আজ তাঁর দেহ বাংলাদেশে আনা হবে।