China-Bangladesh: ভয়ঙ্কর ফাঁদ পেতেছে চিন, অজান্তেই ‘দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কা’ হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ!
China's Debt Trap: চিনের কাছে হাত পাতলেই ঋণ পাওয়া যায়। তথ্য বলছে, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে চিন মোট ১৬৫টি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত দেশকে ঋণ দিয়েছে। এর অঙ্ক হল ১.৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার। চিনের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে রাশিয়া, ১৭০ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভেনেজুয়েলা।
ঢাকা: ভারতের সঙ্গে বরাবরই নরমে-গরমে সম্পর্ক চিনে। কিন্তু ভারতের পড়শি দেশগুলির সঙ্গে চিত্রটা ঠিক উল্টো। পাকিস্তানই হোক বা বাংলাদেশ, চিন তাদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তৈরি করেছে এবং সেই সম্পর্ক বজায় রাখতে নানা পদক্ষেপও করেছে। এর মধ্যে সবথেকে বড় পদক্ষেপ হল অর্থ সাহায্য। ভারতের আশেপাশে যে কোনও পড়শি দেশের দিকেই তাকালেই দেখা যাবে, তারা চিন থেকে ঋণ নিয়েছে। কার্যত দক্ষিণ এশিয়াকে টাকার জোরেই হাতের মুঠোয় রেখেছে চিন। তবে চিন কি এতই পরোপকারী? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও চাল?
আর্থিক দেনায় ডুবে রয়েছে পাকিস্তান। এমন অবস্থা যে সরকার চালানোর পয়সাও নেই। বাধ্য হয়েই হাত পেতেছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার যেমন ঋণ দিয়েছে পাকিস্তানকে, তেমনই আবার চিনও অর্থ সাহায্য করেছে। তবে ঋণের আকারে। শ্রীলঙ্কাতেও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল ২০২৩ সালের শুরুর দিকে। আর্থিক পরিকাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল শ্রীলঙ্কায়। কেন এমন ভয়ঙ্কর আর্থিক সঙ্কট দেখা গেল, তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় চিনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ঋণ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এবার একই ফাঁদে পা দিতে চলেছে বাংলাদেশও।
কেন চিনের ঋণ আসলে ‘ফাঁদ’?
চিনের কাছে হাত পাতলেই ঋণ পাওয়া যায়। তথ্য বলছে, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে চিন মোট ১৬৫টি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত দেশকে ঋণ দিয়েছে। এর অঙ্ক হল ১.৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার। চিনের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে রাশিয়া, ১৭০ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভেনেজুয়েলা। চিনের কাছ থেকে তাদের ঋণ ও অনুদানের পরিমাণ ১১৩ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থানেই রয়েছে পাকিস্তান। ঋণের পরিমাণ ৭০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বেল্ট রোড প্রকল্পের কাজও শুরু করেছে। তবে পশ্চিমী দেশগুলির অভিযোগ, এটা চিনের ঋণ নয়, বরং মৃত্যুফাঁদ। আর্থিকভাবে দুর্বল দেশগুলিকে তাদের পরিশোধের ক্ষমতার বাইরে ঋণ দিতে এই ফাঁদে ফেলে চিন। পরে যখন ঋণ মেটাতে না পেরে, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তখন হাত গুটিয়ে নেয় চিন। উপায় না পেয়ে চিনের কাছে আত্মসমর্পণ করে দেনায় ডুবে থাকা দেশগুলি। এভাবেই একের পর এক দেশের উপরে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করছে চিন।
কীভাবে ফাঁদে পা দিচ্ছে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। বিগত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে রিজার্ভ ক্রমশ কমেই চলেছে। অন্যদিকে, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশকে আর্থিক সাহায্য করেছে চিন। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে কর্ণফুলি নদীর নীচে সু়ড়ঙ্গ, ঢাকায় র্যাপিড ট্রানজিটের মতো বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেই আর্থিক সাহায্য করেছে চিন। স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকার তুলনায় চিনের প্রতিই বেশি সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার কমা নিয়ে সরকারের অন্দরে উদ্বেগ তৈরি হতেই চিন বলেছে, তারা প্রয়োজনমতো সাহায্য করবে। কীভাবে সেই সাহায্য করবে? বাংলাদেশ চিনের যে সব সংস্থার কাছ থেকে আমদানি করে, তাদের বিল মিটিয়ে দিতে পারে চিন। ক্রেডিট লাইনের মাধ্যমেও ঋণ দিতে পারে বাংলাদেশ। তবে এক্ষেত্রে বড় সমস্যা রয়েছে, কারণ বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। সেক্ষেত্রে চিনের কাছ থেকে নতুন করে ঋণ নিতে গেলে, তারা সেটি মানবে কি না, তাও প্রশ্ন।
তবে যদি ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার দিকে তাকায় বাংলাদেশ এবং তাদের আর্থিক অবস্থা দেখে, তবে বাংলাদেশের চিন থেকে ঋণ নেওয়ার আগে দু’বার ভাবা উচিত।