কাবুল: দুই সপ্তাহের অপেক্ষা। অবশেষে আফগানিস্তানে (Afghanistan) নতুন সরকার গঠনের কাজ শেষ করল তালিবান (Taliban)। মঙ্গলবারই ঘোষণা করা হয় নতুন সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন মহম্মদ হাসান আখুন্দ, তাঁর ডেপুটি হলেন আব্দুল গনি বরাদর। ইরান মডেলেই তৈরি এই সরকারের শীর্ষ স্থানে থাকবেন হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (Hibatullah Akhundzada)। ক্ষমতা গ্রহণ করেই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রথম বার্তাতেই শরিয়া আইন তুলে ধরার কথা বললেন তিনি।
মঙ্গলবার নতুন সরকারের ঘোষণার পরই তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে ইসলামিক নিয়ম ও শরিয়া আইন তুলে ধরার জন্য সর্বাত্মকভাবে আমরা চেষ্টা করব।” এখনও অবধি লসকলের চোখের আড়ালেই থাকা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা জানান, তালিবানরা আফগানিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে চায়। দেশ ছেড়ে পলানোর চেষ্টা করা উচিত নয় আফগানবাসীর।
আখুন্দজাদা বলেন, “ইসলামিক এমিরেটসদের কারোর সঙ্গেই কোনও সমস্যা নেই। সুতরাং দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। আমাদের সকলের উচিত সরকারের পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করা। এভাবেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে আমরা পুনর্গঠন করতে পারব।”
মঙ্গলবার রাতে কাবুলে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখপাত্র জাবিদুল্লা মুজাহিদ। তিনি জানান, ইসালামিক এমিরেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপাতত অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা দিয়ে সরকারের কাজ করবে। মোট ৩৩ সদস্যের মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করেন সাংবাদিক বৈঠকে মুজাহিদ। বাকি মন্ত্রীদের নাম আগামী বৈঠকের পরই ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
তালিবান সরকারের মন্ত্রীদের অধিকাংশই তালিব বাহিনীর সদস্য, রয়েছে হাক্কানি গোষ্ঠীর নেতারাও। নতুন সরকারে প্রধানমন্ত্রী হলেন মহম্মদ হাসান আখুন্দ। আব্দুল গনি বরাদর হলেন তাঁর ডেপুটি। আফগানিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার সামলাবেন আমির খান মুত্তাকি, তাঁর ডেপুটি হবেন আব্বাস স্তানিকজাই।। সরাজউদ্দিন হাক্কানি আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদেশ মন্ত্রী হলেন আমির খান মুত্তাকি। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মোল্লা হেদিয়াততুল্লা বাদরিকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা মন্ত্রী করা হয়েছে শেখ মওলাই নুরুল্লা। সংস্কৃতি মন্ত্রী হলেন মোল্লা খাইরুল্লা খেরখান।
এদের সকলের শীর্ষে থাকবেন একজন সুপ্রিম লিডার। আফগানিস্তানের সুপ্রিম লিডার হলেন তালিবানি শীর্ষ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তাঁকে এখনও অবধি কোনওদিন দেখা না গেলেও গত ১৫ অগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পরই তালিব মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছিলেন, সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে তিনি কান্দাহারে এসেছেন। আরেক শীর্ষ নেতা জানিয়েছিলেন, শীঘ্রই জনসমক্ষে আসবেন আখুন্দজাদা।
এ দিকে, নতুন সরকার শরিয়া আইনে বিশেষ জোর দেওয়ায় মহিলারা স্বাধীনতা খোয়ানোর আশঙ্কা করছেন। ইতিমধ্যেই মহিলাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তালিবান। ক্লাসরুমে একসঙ্গে নারী-পুরুষ পাশাপাশি বসে পড়াশোনা থেকে শুরু করে ভিন্ন পুরুষের সঙ্গে কথা বলা, পোশাক নিয়ে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। শরিয়া আইনে মেয়েদের লেখাপড়ার অধিকারটুকুও দেওয়া হয় না। এ বারও সেই নিয়ম চালু হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন তালিবানের, প্রধানমন্ত্রী হলেন হাসান আখুন্দ
আরও পড়ুন: ‘এটা উচিত হল না’, আমেরিকার এমন কাজে গা জ্বলছে তালিবানের