শুধু আমেরিকা নয়, কাবুল থেকে দিল্লি! একাধিক হামলার শিকার ‘সংসদ ভবন’
এটাই প্রথম হামলা নয়। এর আগেও বিশ্বের একাধিক দেশে হামলা হয়েছে আইন প্রণয়ন ভবনে।
ওয়াশিংটন: ‘নিগৃহীত হয়েছে গণতন্ত্র।’ মার্কিন ক্যাপিটল হামলার (US Capitol Attack) কড়া নিন্দা করে একথাই বলেছেন হবু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ক্যাপিটল ভবন হল আইন প্রণয়নের জায়গা। যেখানে প্রতিনিধিরা দেশের উপযুক্ত আইন প্রণয়ন বা সংশোধন করেন। কিন্তু সেই আইন প্রণয়ন ভবনে হামলার অর্থ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, এই মর্মে মার্কিন ক্যাপিটল হামলার কড়া নিন্দায় সরব হয়েছে সারা বিশ্ব। কিন্তু এটাই প্রথম হামলা নয়। এর আগেও বিশ্বের একাধিক দেশে হামলা হয়েছে আইন প্রণয়ন ভবনে।
১৮১৪, আমেরিকা:
মার্কিন কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে এর আগে হামলা হয়েছিল ১৮১৪ সালে। তখন ‘ওয়ার অব ১৮১২’ চলার সময় ব্রিটিশ বাহিনী হামলা করেছিল। ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল স্যার আলেকজেন্ডার কুকবার্ন ও মেজর জেনারেল রবার্ট রসের নেতৃত্বে অগস্ট মাসে হয়েছিল সেই হামলা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ক্যাপিটল ভবনে। যদিও বৃষ্টির জন্য সেদিন আগুন বেশি ছড়ায়নি।
২০১৭, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হামলা:
২০১৭ সালের ২২ মার্চ লন্ডনের ঐতিহ্যশালী ওয়েস্টমিনিস্টার সেতুর উপরে দ্রুত গতির একটি গাড়ি পিষে দিয়েছিল নিরীহ মানুষদের। এরপর ওই গাড়ির চালক ছুরি হাতে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। সেখানে ছুরির আঘাতে আহত হন এক পুলিস কর্মী। তারপর পুলিসের গুলিতেই মৃত্যু হয় ওই জঙ্গির। ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল আইএস। ঘটনায় হামলাকারী-সহ প্রাণ হারিয়েছিল ৪ জন। আহত হয়েছিলেন ৪০ জন।
১৯৯৩, রাশিয়ার ব্ল্যাক অক্টোবর:
সোভিয়েত ইউনিয়ন ধ্বংসের পর প্রেসিডেন্টের নীতির বিরুদ্ধে যায় রাশিয়ার পার্লামেন্ট। তখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েল্তসিন কংগ্রেস ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের কাছে সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা থাকে না। পাল্টা প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট রুতস্কোয়ের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে কংগ্রেস। এরপর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের নির্দেশে ৪ অক্টোবর কংগ্রেস ভবনে পৌঁছয় সেনা। রাস্তায় ভয়ানক লড়াইয়ের মাধ্যমে ১০ দিনের অচলাবস্থা কাটে। প্রাণ হারান ১৪৭ জন। আহত হন ৪৩৭ জন।
২০১৭, ইরান পার্লামেন্টে হামলা:
জুন মাসের ৭ তারিখ ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লিভেন্টের জঙ্গিরা ইরানের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালিয়েছিল। প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৭ জন। আহত হয়েছিলেন ৪৩।
২০১৫, আফগানিস্তান পার্লামেন্টে হামলা:
জুন মাসের ২২ তারিখ ৬ তালিবান বন্দুকবাজ হামলা চালিয়েছিল আফগান পার্লামেন্টে। যেখানে আহত হয়েছিলেন ৩১ জন। হামলাকারীরা পার্লামেন্টের গেটের বাইরে বোমা বোঝাই গাড়িটি রেখেছিল। হামলায় কোনও পার্লামেন্টের সদস্য নিহত হননি।
২০০১, ভারতের সংসদে হামলা:
২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের জাতীয় সংসদে হামলা হয়েছিল। এই হামলার পিছনে ছিল জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি সংগঠন। ওইদিন হামলার ঠিক ৪০ মিনিট আগে রাজ্যসভা ও লোকসভা মুলতুবি ঘোষণা হয়েছিল। সংসদ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ও বিরোধী দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু তখনও সংসদে ভবনে ছিলেন বেশ কয়েকজন। ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হারীন পাঠকও। ৫ বন্দুকবাজ সংসদে ঢুকেছিল সাংসদের স্টিকার লাগানো গাড়িতে। তারপর গুলি চালাতে শুরু করে। পাল্টা গুলি চালায় সংসদের নিরাপত্তা কর্মীরাও। ঘটনায় পাঁচ বন্দুকবাজের মৃত্যু হয়েছিল। প্রাণ হারিয়েছিলেন ৬ পুলিস, ২ সংসদ নিরাপত্তা কর্মী ও ১ মালি।
আরও পড়ুন: পুলওয়ামা হামলার ‘মাস্টার মাইন্ড’ মাসুদের নামে জারি হল গ্রেফতারি পরোয়ানা