AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

María Corina Machado: ট্রাম্পকে টেক্কা দিয়ে নোবেল ‘জিতে’ নিলেন মারিয়া, কে এই গণতন্ত্রের লৌহমানবী?

Nobel Peace Prize 2025 Winner: ট্রাম্পের চোখ রাঙানিকে অবহেলা করেই নাকের ডগা দিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫-এর প্রাপক হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে ভেনেজুয়েলার রাজনীতিবিদ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার মারিয়া করিনা মাচাদো প্যারিস্কাকে। কে এই মারিয়া, যে ট্রাম্পের মুখের গ্রাস কেড়ে নিলেন? চিনে নিন ভেনেজুয়েলার রাজনীতিবিদ তথা নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫-এর প্রাপককে।

María Corina Machado: ট্রাম্পকে টেক্কা দিয়ে নোবেল 'জিতে' নিলেন মারিয়া, কে এই গণতন্ত্রের লৌহমানবী?
| Updated on: Oct 10, 2025 | 7:51 PM
Share

সারা বিশ্বে নাকি শান্তির বার্তা ছড়িয়েছেন তিনি। তাই নোবেল শান্তি পুরস্কার তাঁরই প্রাপ্য! এমনই বালখিল্য বায়না নিয়ে মেতে উঠেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ছেলেমানুষী সব জায়গায় যে চলে না তা প্রমাণ করে দিয়েছে নোবেল কমিটি। ট্রাম্পের চোখ রাঙানিকে অবহেলা করেই নাকের ডগা দিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫-এর প্রাপক হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে ভেনেজুয়েলার রাজনীতিবিদ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার মারিয়া করিনা মাচাদো প্যারিস্কাকে। কে এই মারিয়া, যে ট্রাম্পের মুখের গ্রাস কেড়ে নিলেন? চিনে নিন ভেনেজুয়েলার রাজনীতিবিদ তথা নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫-এর প্রাপককে।

ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার্থে অক্লান্ত লড়াই এবং একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্রের ভিত আরও মজবুত করতে মারিয়ার যে দীর্ঘ সংগ্রাম তাঁকে সম্মান জানাতেই নোবেল শান্তি পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে মারিয়ার হাতে।

গুগল বলছে মারিয়ার বর্তমান বয়স ৫৮ বছর। জন্ম ১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর কারাকাসে। মনোবিজ্ঞানী করিনা প্যারিস্কা এবং ইস্পাত ব্যবসায়ী হেনরিক মাচাদো জুলোয়াগার জ্যেষ্ঠ কন্যা মারিয়া। স্নাতক পাশ করেছেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং (Industrial Engineering) নিয়ে। স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেছেন অর্থনীতি নিয়ে।

১৯৯২ সাল, এটিনিয়া ফাউন্ডেশন নামক একটি সংস্থার পথচলা শুরু হয় মারিয়ার হাত ধরে। তখন তিনি ৩ সন্তানের মা। তবে তার পরেও বাবা-মা হারা, রাস্তায় পড়ে থাকা অবলা শিশুদের ডাক অবজ্ঞা করতে পারেননি মারিয়া। তাই তাঁদের দেখভালের জন্য এটিনিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। কারাকাসের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো অপরাধ প্রবণ শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা এই সংস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে এই সংস্থা থেকে বেরিয়ে যান মারিয়া, যাতে কোনও ভাবেই রাজনীতির রং না লেগে যায় ফাউন্ডেশনের গায়ে।

সালটা ২০০১, মাচাদোর সঙ্গে একটি হোটেলের লবিতে দেখা হয় আলেজান্দ্রো প্লাজের। তখন কে জানত সেদিনের সেই সাক্ষাৎ চিরতরের জন্য বদলে দিতে চলেছে ভেনেজুয়েলার ভাগ্য। সেই সাক্ষাতের পরই মাচাদো ঠিক করেন অনেক হয়েছে, আর নয়! মেরুকরণের ফাঁদে পড়ে ভেনেজুয়েলার পতন বসে বসে দেখতে পারবেন না তিনি। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। মারিয়া বলেন, “আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হয়েছিল কিন্তু পথ পরিবর্তন করতে হয় ভেনেজুয়েলার জনগণকে নিজেদের গণনা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। উত্তেজনা বৃদ্ধির আগেই তা দূর করার জন্য। বুলেট নয় ব্যালট চাই।” সেই লক্ষ্যেই ২০০২ সালে আলেজান্দ্রো এবং মারিয়া যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সুমাতে’র। এমন এক প্রতিষ্ঠান যা ভোট প্রক্রিয়ার উপরে শুরু করে কড়া নজরদারি।

২০০৪ সালে ভেনেজুয়েলার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুগো শ্যাভেজের পদত্যাগের দাবিতে অভিযানে নামে ‘সুমাতে’। গণভোট হয়, কিন্তু এইবারে ভাগ্য খুব একটা সহায় হয়নি তাঁর। মাচাদো সহ সুমাতের বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধে ভেনেজুয়েলার দণ্ডবিধির ১৩২ ধারার অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়, ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি) থেকে তাদের কার্যকলাপের জন্য আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য।

২০১০ সালে সুমাতে থেকে পদত্যাগ করেন মারিয়া। আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। মিরান্ডার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন চাকাও, বারুটা, এল হাতিলো এবং পাররোকিয়া লিওনসিও মার্টিনেজ ডি সুক্রে পৌরসভার ভোটে।

ভেনেজুয়েলাবাসীর মানবধিকার সুরক্ষিত করা এবং মুক্ত চিন্তার সঙ্গে বাঁচার অধিকার সুনিশ্চিত করাই ছিল মারিয়ার প্রধান এবং প্রথম লক্ষ্য। নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় থেকেই তাঁর মুখে শোনা যায় এই একটি কথা।

দেশ জুড়ে ব্যাপক হিংসা, কিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, তীব্র আবাসন সংকট এবং ৩০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির মতো নানা বিষয়কে সামনে রেখে ২০১০ সালে প্রাথমিক ভাবে ভোটে জয়ী হন তিনি। এরপর ২০১১ সালে প্রথমবারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন মারিয়া।

২০১৩ সালে ভেনেজুয়েলায় প্রতিষ্ঠীত হয় উদার রাজনৈতিক দল ‘ভেন্টে ভেনেজুয়েলা’। এই দল প্রতিষ্ঠার অন্যতম কান্ডারী সেই মারিয়া। এরপর পুরোদস্তুর রাজনীতির ময়দানে নিজেকে উৎসর্গ করে দেন মারিয়া।

সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে বহু ছোট বড় আন্দোলনের মূল মুখ হয়ে ওঠেন মারিয়া। গত বছর ভোটে কারচুপির অভিযোগ ওঠে সরকার পক্ষের বিরুদ্ধে। সে সময় প্রসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। যা নিয়ে উত্তাল হয় দেশ। সেখানেও নেতৃত্বে মারিয়া। ২০২৪ সালে চক্রান্ত করে মারিয়াকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে না লড়তে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যদিও তাঁর অনুগামীদের দাবি মারিয়া ‘লৌহ মানবী’। সাহসী এবং শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চ্যাম্পিয়ন তিনি।

ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলনেত্রীর নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রাপক হিসাবে ঘোষণা করার সময় কমিটির চেয়ারম্যান জর্জেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস জানান, ভেনেজুয়েলার বিরোধী দল এক কালে দ্বিধাবিভক্ত ছিল। তাদের একত্রিত করার কৃতিত্ব মারিয়ার। বিরোধীদলগুলিকে এক ছাতার তলায় এনে অবাধ নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের দাবি তুলে ধরেছেন তিনি। একনায়কতন্ত্রের রুদ্র চোখে যখন অন্ধকার নেমে আসছিল দেশে, সে সময় চোখে চোখ রেখে গণতন্ত্রের মশাল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন মারিয়া। ‘সাদাবাড়ি’ যতই ‘দ্য পিস প্রেসিডেন্ট’ নোবেলের যোগ্য বলে দাবি করুক না কেন, এই পুরস্কার তাঁরই প্রাপ্য।