Explained, Indian Share Market Crisis: যুদ্ধে টলল না, বিনা-যুদ্ধে কেন রক্তাক্ত হচ্ছে ভারতের শেয়ার বাজার?
Share Market Fall: আমরা সাম্প্রতিক অতীতে দেখেছি একাধিক বিষয় টলাতে পারেনি ভারতের বাজারকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় পৃথিবীর একাধিক দেশের শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল। এতদিন যে ভারতের বাজারকে টলাতে পারেনি বিভিন্ন ইস্যু, সেই বাজারে হঠাৎ কী হল?
গত চার মাস ধরে দালাল স্ট্রিটে হাহাকার। যা আরও বেড়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাজার বন্ধ হয়েছিল ২৬ হাজার ২১৬ পয়েন্টে। তারপর ২৭ তারিখ বাজার খোলার পরই সর্বোচ্চ ২৬ হাজার ২৭৭.৩৫ পয়েন্ট ছুঁয়ে ছিল নিফটি ৫০। সেই পতনের শুরু। গত ৪ মাসে প্রায় ১২ শতাংশ পড়েছে এই সূচক। স্বস্তি নেই সেনসেক্সেও। ২৬ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার ৯৭৮ পয়েন্ট ছোঁয়ার পর গত ৪ মাসে প্রায় ১১.২৪ শতাংশ পড়ে ২৪ জানুয়ারি বাজার বন্ধের সময় ৭৬ হাজার ১৯০ পয়েন্টে দাঁড়ায় এই সূচক।
আমরা সাম্প্রতিক অতীতে দেখেছি একাধিক বিষয় টলাতে পারেনি ভারতের বাজারকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় পৃথিবীর একাধিক দেশের শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল। জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি নিয়ে একটি রিসার্চে দেখা গিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের অনেক দেশে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বেড়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য ও অপরিশোধিত তেলের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। আর যে দেশগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনও ভাবেই এই যুদ্ধে জড়ায়নি তাদের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করেছে। ভারত তাদের প্রয়োজনীয় অপরিশোধিত তেলের ৮৫ শতাংশ আমদানি করে। ফলে ভারতে এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু ভারতের অর্থনীতিতে এই যুদ্ধের তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। প্রভাব পড়েনি ভারতের শেয়ার বাজারেও। উল্টে ভারত রাশিয়া থেকে কম দামে তেল আমদানি করে। একই ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধও টলাতে পারেনি ভারতের অর্থনীতিকে।
এতদিন যে ভারতের বাজারকে টলাতে পারেনি বিভিন্ন ইস্যু, সেই বাজারে হঠাৎ কী হল?
ভারতের বাজারে প্রভাব পড়ার একাধিক কারণ রয়েছে। তাকে আমরা দু’ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমত, ঘরোয়া কারণ আর দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক কারণ।
ঘরোয়া কারণ: ২০২৩-২৪-এর তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ৮.৬ শতাংশ বৃদ্ধির হয় জিডিপির। তার পর থেকে ভারতের জিডিপির বৃদ্ধি ক্রমশই কমেছে। যদিও বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এই আশায় বেড়েছিল শেয়ার বাজার। ২০২৪-২৫-এর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তা কমে দাঁড়ায় ৫.৪ শতাংশে। যা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে খারাপ। আর তারপরই পতন দেখা যায় ভারতের শেয়ার বাজারে।
আন্তর্জাতিক কারণ: সাম্প্রতিক অতীতে আমরা দেখেছি ভারতের বাজার একাধিক বৈদেশিক ইস্যুতে সেভাবে ধাক্কা খায়নি। কিন্তু এমন কিছু ঘটনা একসঙ্গে ঘটেছে, যে কারণে স্ট্রাগল করছে ভারতের শেয়ার বাজার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প: ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তারপরই ব্রিকস দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। ভারত সহ ব্রিকস দেশগুলো থেকে আমদানিকৃত পণ্যে ১০০ শতাংশ কর বসানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এর একটা কারণ হতে পারে ব্রিকস দেশগুলোর কারেন্সি ধীরে ধীরে ডলারের তুলনায় শক্তিশালী হচ্ছে। ফলে ডলারের মনোপলি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ডলারের সেই মনোপলি বাঁচিয়ে রাখতেই ব্রিকস দেশগুলোকে টার্গেট করছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
জাপান: ইতিহাস বলে জাপানে অনেক কম সুদে ঋণ পাওয়া যায়। ব্যাঙ্ক অফ জাপানের সুদের হার ছিল ০.২৫ শতাংশ। ফলে অনেক সংস্থাই জাপানের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে। কিন্তু ব্যাঙ্ক অফ জাপান কয়েকদিন আগেই তাদের সুদের হার বাড়িয়ে ০.৫ শতাংশ করেছে। যা গত ১৭ বছরে সর্বোচ্চ। আর এর ফলে সংস্থাগুলো বাজার থেকে কিছু কিছু টাকা তুলে নেয় ও বাজারের লিক্যুইডিটি কমতে থাকছে।
চিন: ভারতের বাজারের ধাক্কা খাওয়ার চিনের অর্থনীতির হাতও রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে ১১২.৭১ বিলিয়ান ইউয়ান প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ দেখেছিল চিন। গোটা বছরে যা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৮২৬ বিলিয়ান ইউয়ানে। আর এই সময়ের মধ্যে অনেক বিদেশি বিনিয়োগেরই ভারতে আসার কথা থাকলেও তা চিনে চলে গিয়েছে। ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে প্রভাব পড়েছে।
ফেড রেট কাট: আমেরিকার ফেডারেল ব্যাঙ্ক রেট কাট করলে তাহলে তার প্রভাব পড়ে ভারতের বাজারে। কারণ আমেরিকায় রেট কাট হলে তার প্রভাবে উপরের দিকে উঠতে থাকে আমেরিকার বাজার। আর তার ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে আমেরিকার বাজারে নিয়ে চলে যায়। আর এর ফলে পড়ে যায় ভারতের শেয়ার বাজারের সূচক।
চিন থেকে ভারতের বাজারে অনেক কিছু ক্ষেত্রে সস্তা পণ্য ঢুকছে। সস্তার স্টিল থেকে সস্তার মোবাইল, সব ক্ষেত্রেই ভারতের বাজার দখলের চেষ্টা করছে ড্রাগনের দেশ। ফলে মার খাচ্ছে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার। অন্যদিকে, তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও আমেরিকার সংস্থাগুলোর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রয়াসও গতি পেয়েছে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসায়। ফলে চাপে রয়েছে ভারতের তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রও। আর এর মধ্যে আমেরিকার বাজারে ধাক্কা মেরেছে ডিপসিক নামের একটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংস্থা। তার ধাক্কায় প্রায় ১৫ শতাংশের বেশি পড়ে গিয়েছে আমেরিকান চিপ প্রস্তুতকারক সংস্থা এনভিডিয়া।
ভারতের শেয়ার বাজার এই মুহূর্তে উঠবে কি না, তার অনেকটাই নির্ভর করছে আসন্ন কেন্দ্রীয় বাজেটের উপর। আশার আলো দেখাতে পারেন দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, আসন্ন বাজেটে কমতে পারে করের হার। বা কোনও বদল আসতে পারে দীর্ঘমেয়াদি লাভের উপর যে কর (Long Term Capital Gain Tax), বদল আসতে পারে সেখানেও। আর সেদিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।
শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চাইলে সেই শেয়ারের বিষয়ে যথাযথ তথ্যানুসন্ধান ও অ্যানালিসিস করুন। TV9 বাংলা বিনিয়োগের কোনও উপদেশ দেয় না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যে কোনও বিনিয়োগে বাজারগত ঝুঁকি রয়েছে। ফলে, আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি সাবধানে পড়ে নেবেন। তারপর বিনিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।