KMC Election 2021: ‘তৃণমূল করে খাওয়ার জায়গা নয়, যদি কেউ ভাবে…’
KMC Election 2021: ভোটের দিন যাতে ভোট দিতে বাধা না দেওয়া হয়, দলীয় কর্মীদের সেই বার্তা আগেই দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এবার ফের একবার কড়া বার্তা দিলেন তিনি।
কলকাতা : সারদা- নারদা থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় তোলাবাজি, ক্ষমতায় আসার পর থেকে বড় থেকে ছোট, একাধিক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে ঘাসফুল শিবিরের। বাংলায় তৃণমূল তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলেও বিরোধীরা সেই দুর্ণীতি নিয়ে খোঁচা দিতে পিছপা হননা। পাশাপাশি, যে কোনও ভোটে তৃণমূলের দাদাগিরির অভিযোগও নতুন নয়। কিন্তু পুরভোটের আগে বারবার সেই অভিযোগ নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে দলীয় নেতাদের। আজ বড়বাজারের পদযাত্রার শেষে বার্তা দিতে গিয়ে সেই একই সুর শোনা গেল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। তিনি এ দিন বলেন, ‘তৃণমূল করে খাওয়ার জায়গা নয়, তৃণমূল লড়াই করার জায়গা।’ কার্যত দলের গা থেকে সব দাগ মুছে ফেলতেই বার্তা দিয়েছেন তিনি।
সামনেই পুরভোট। আর তার আগে কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কখনও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাবধান করছেন নেতাদের। কেউ যাতে দলের দিকে আঙুল তুলতে না পারে, সেই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে। এর আগে দলীয় সভায় অভিষেক বার্তা দিয়েছিলেন, যাতে ভোটের দিন ভোটদানে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ সামনে না আসে। প্রয়োজনে দল কড়া পদক্ষেপ করবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। আর আজ তিনি বোঝালেন, ‘এটা নতুন তৃণমূল। এই তৃণমূলের দিকে গোটা দেশ তাকিয়ে আছে।’
কী বললেন অভিষেক?
এ দিন অভিষেক বলেন, ‘দলের নাম করে যদি কেউ আপনাদের চমকায় ধমকায়, তাহলে তাকে আগে বাইরের রাস্তাটা দেখানো হবে, তারপর যা হবে তা হবে।’ ২০২৪- এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল যে দলের খোলনলচে বদলাতে উদ্যোগী সেটা এদিন বারবার বুঝিয়ে দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তাঁকে বলতে শোনা যায়, এটা নতুন তৃণমূল। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ এ দিন বার্তা দেন, যদি কেউ ভাবে আগে যা করে এসেছে, এখনও তাই করবে, তাহলে তাদের জানতে হবে যে এই তৃণমূল নতুন তৃণমূল, আর এই তৃণমূলের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা দেশ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘যদি কেউ ভাবেন তৃণমূল করে খাওয়ার জায়গা…. তৃণমূল করে খাওয়ার জায়গা নয় লড়াই করার জায়গা।’ অভিষেকের কথায়, ‘দলের কর্মীরা মানুষের সেবা করবে, কিন্তু কেউ যদি ধান্দা করতে তৃণমূলে. আসে তাহলে তাকে বাইরে রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া হবে। তৃণমূলের দরজাটা সবসময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।’
কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতাও
বুধবার উত্তর কলকাতার সভা থেকে মমতা আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে সরব হন। জনসভা থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সব কিছুতে টাকা চাই না! সরকারের কাজ করবে তাতেও টাকা চাই! গরিব মানুষের ঘর বানাবে, তাতে টাকা দরকার! টাকা দিয়ে ঘর দেওয়া…ওসব চলবে না। এই বলে রাখলাম। সব অনলাইন করে দেব। সাতদিনের মধ্যে ঘর তৈরির টাকা পাবেন। কাউকে টাকা দিতে হবে না। কেউ টাকা নিতেও পারবে না। সেই ব্যবস্থাই করব।”
ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে তৎপর তৃণমূল
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর বর্তমানে তৃণমূলের কাছে পাখির চোখ ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন। এর আগে ২০১৯- এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন বেড়ে গিয়েছিল এ রাজ্যে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের ভাবমূর্তিতে যে ভাবে ক্ষুন্ন হয়েছিল, তার প্রভাব লোকসভায় পড়েছিল বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। তাই এবার পুরভোটের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানী তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দানে ও মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। ভোটের দিন বহিরাগত লোকজন নিয়ে আসার অভিযোগও বারবার উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
এবার মমতা দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, কলকাতার আশেপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁরা এসে প্রচার করতে পারেন। তবে প্রচারের কাজ যেন শুধু বক্তৃতাতেই সীমাবদ্ধ থাকে, সেই বার্তাই দিয়েছেন তিনি। প্রচারে বক্তৃতা ছাড়া ওই নেতাদের আর কোনও ভূমিকা যেন না থাকে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। সূত্রের খবর, মমতা বলেছেন, ‘নিজের কোমরের জোরে জিততে হবে। বাইরের কোনও লোক যেন ভোটের দিন কলকাতায় না বসে থাকে।’
পুরভোটের দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে হওয়া বৈঠকেও কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট দানে বাধা দেওয়া বা কোনও রকম বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বার্তা দেন তিনি।