Abhishek Banerjee: ‘এক ইঞ্চি জমি ছাড়বেন না, হিয়ারিংয়ে থাকবেন’, বিএলএ-দের প্রশংসা করে বার্তা অভিষেকের
Abhishek Banerjee meeting with BLAs: নিজের বক্তব্যের শেষে ফের বিএলএ-২'দের প্রশংসা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, "বিএলএ টু'দের আমি কুর্নিশ করি। যেভাবে তাঁরা কাজ করেছেন। পদ চলে গেলে আমরা সবাই প্রাক্তন। কিন্তু কর্মী কখনও প্রাক্তন হবে না। আমি ২০১৪ থেকে একুশ পর্যন্ত যুব সভাপতি ছিলাম। এখন প্রাক্তন। কর্মী কখনও প্রাক্তন হয় না।"

কলকাতা: শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এসআইআর-র শুনানি পর্ব। গতকালই সিইও দফতরে গিয়ে একাধিক অভিযোগ জানিয়ে এসেছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। এবার দলের বিএলএ-দের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার দলের এক লক্ষের বেশি বিএলএ-র সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। আর সেখানে এসআইআর প্রক্রিয়ায় তৃণমূলের বিএলএ-দের কাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে এসআইআর-র হিয়ারিং নিয়ে দলের বিএলএ-২’দের বড় বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। জানিয়ে দিলেন, এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া যাবে না। হিয়ারিং প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকতে হবে। কমিশন আপত্তি জানালে লিখিত কাগজ দেখতে চাওয়ার জন্য বিএলএ-দের বার্তা দিলেন অভিষেক।
এদিন বিএলএ-দের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রথমে বক্তব্য রাখেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। বিএলএ-দের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আপনারা ভাল কাজ করছেন, কঠোর পরিশ্রম করছেন। এরকমভাবেই কাজ করুন। সাধারণ মানুষকে সাহায্য করুন।” কোনও বৈধ ভোটারের নাম যাতে এসআইআর তালিকা থেকে বাদ না যায়, সেদিকে নজর রাখতে বিএলএ-দের বার্তা দেন।
এরপর অভিষেকও তাঁর বক্তব্যের প্রথমেই বিএলএ ও এসআইআর প্রক্রিয়ায় যুক্ত দলের প্রত্যেকের প্রশংসা করেন। বলেন, “আপনাদের জন্যই বিজেপি তাদের পরিকল্পনায় সফল হয়নি। বিজেপির দিল্লির নেতারা বাংলাকে ভাতে মারতে চেয়েছে। বিজেপির বাংলার নেতারা এক কোটি নাম বাদ দিতে হবে বলেছিল।” বিএলএ-২’দের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “৩০-৩২ হাজার বিএলএ-২’দের আমি ফোন করেছি। এসআইআর-এ সবচেয়ে কম নাম বাদ গিয়েছে বাংলায়। যে কোনও সামারি রিভিশনে এই সংখ্যক নাম বাদ যায়। আমাদের আরও ছয় সপ্তাহ লড়াই চালাতে হবে।”
এরপরই কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হন অভিষেক। বলেন, “এজেন্সি ব্যবহার করে ERO-র সিস্টেম থেকে তথ্য ডিলিট করছে কমিশন। এতেই শেষ নয়। ষড়যন্ত্র আরও গভীর।” বিএলএ-দের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “আগামী দেড় মাস বিএলও-দের ছায়াসঙ্গী হতে হবে। ওয়ার রুম যেন সক্রিয় থাকে। আগামী ছয় সপ্তাহ ভোট রক্ষা শিবির সক্রিয় রাখতে হবে।”
হিয়ারিংয়ে বিএলএ-দের থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। এই নিয়ে অভিষেক বলেন, “শুনছি বিএলএ-২’দের নাকি হিয়ারিং প্রক্রিয়ায় থাকতে দেবে না। আমি বলছি আপনারা থাকবেন। এক ইঞ্চি জমি ছাড়বেন না। এটা যুদ্ধ। যে যাই বলুক, তৃণমূলের তরফে বিএলএ টু থাকবে। বাধা দিলে বলবেন, লিখিত নির্দেশিকা দেখান।” কমিশনকে তোপ দেগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “কেন ঢুকতে দেবে না? বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য। যেহেতু ওদের লোক নেই।” দলের নেতাদের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, “হিয়ারিং সেন্টারের সামনে কাল থেকেই ক্যাম্প করুন। যাঁরা হিয়ারিংয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখুন।”
পৌরসভার চেয়ারম্যানদের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, “যে পৌরসভার চেয়ারম্যান মানুষের পাশে থাকবেন না, তাঁর পদে থাকার অধিকার নেই। যে পঞ্চায়েত প্রধান মানুষের পাশে দাঁড়াবেন না, তাঁর পদে থাকার অধিকার নেই। আমি সব পৌর চেয়ারম্যানদের বলছি মানুষের পাশে থাকুন। রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট দিন। মানুষের পাশে দাঁড়ান।” তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের হাউসিং স্কিমের অধীনে যাঁরা বাড়ি পেয়েছেন, তাঁদের আর কী বড় প্রমাণ দরকার?”
অবৈধভাবে কারও নাম ঢুকলে কী করতে হবে, সেই বার্তাও বিএলএ-দের দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, “কারও নাম অবৈধভাবে ঢোকালে ফর্ম সেভেন ভরবেন। এই চালাকি বিহারে করেছিল। ওরা ধরতে পারেনি। আমরা ধরেছি।”
পরিযায়ী শ্রমিকদের ভার্চুয়ালি হিয়ারিংয়ের দাবি জানিয়ে অভিষেক বলেন, “কোনও লিখিত নিয়ম নেই যে পরিযায়ী শ্রমিকদের সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। ইয়ার্কি নাকি। ওদের যাতায়াত খরচ নির্বাচন কমিশন দেবে? সুপ্রিম কোর্ট যদি ভার্চুয়াল হিয়ারিং করতে পারে, তাহলে এক্ষেত্রে হবে না কেন? সশরীরে থাকতে গেলে ওদের দু’মাসের বেতন নির্বাচন কমিশন দিক। না হলে লিখিত দিক, ওটা নিয়ে আমরা মামলা করব।”
বিজেপি ও কমিশনকে নিশানা করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এগুলো সব বাংলাকে টার্গেট করে করছে। এখানে কম নাম বাদ গিয়েছে। তবু বাংলাকে হেনস্থা করতে এসব করছে। বয়স্কদের হিয়ারিংয়ে ডেকে পাঠাচ্ছে। তাঁদের ভোট যদি বাড়ি থেকে নেওয়া হয়, তাহলে হিয়ারিংও বাড়িতে গিয়ে করুন।” এই নিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল সোমবার কমিশনে যাবে বলে তিনি জানান। বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “যারা চিকেন প্যাটিস বিক্রির জন্য মানুষকে মারধর করে, তারা ক্ষমতায় এলে কী করবে ভাবুন।”
বিএলএ-দের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, “ভোটার তালিকায় নতুন নাম যুক্ত হলে সেটা বৈধ নাম কি না খতিয়ে দেখুন। সন্দেহ হলে জানাবেন। বিজেপি যেহেতু এক কোটি নাম বাদ দিতে পারেনি, ওরা মরিয়া চেষ্টা করবে নাম বাদ দেওয়ার। আমাদের দেখতে হবে, একজন বৈধ ভোটারের নাম যেন বাদ না যায়।”
দলের নেতাদের সতর্কবার্তা দিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সবার উপর দলের নজর রয়েছে। আপনি ভাল কাজ করলে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে চিহ্নিত করে মাথার উপর বসানো হবে।” কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বলেন, “যদি মনে করেন আমার ভোট নয়। ফলে উদ্যোগ নেব না। এটা হবে না।” একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, ভোট পর্যন্ত কোনও পিকনিক নয়।
নিজের বক্তব্যের শেষে ফের বিএলএ-২’দের প্রশংসা করেন অভিষেক। বলেন, “বিএলএ টু’দের আমি কুর্নিশ করি। যেভাবে তাঁরা কাজ করেছেন। পদ চলে গেলে আমরা সবাই প্রাক্তন। কিন্তু কর্মী কখনও প্রাক্তন হবে না। আমি ২০১৪ থেকে একুশ পর্যন্ত যুব সভাপতি ছিলাম। এখন প্রাক্তন। কর্মী কখনও প্রাক্তন হয় না।”
