‘নন্দীগ্রামে যিনিই প্রার্থী হন, জিতব আমরাই’, মমতা বনাম শুভেন্দু দ্বৈরথে আসরে এবার আব্বাসও
শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) দলবদল আর তারপর প্রার্থী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নিজের নাম ঘোষণা করা, ১৮ জানুয়ারি থেকেই খবরের শিরোনামে নন্দীগ্রাম (Nandigram)।
উল্লেখ্য, ‘জুম্মাবারে’ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার কথা তৃণমূলের। শোনা যাচ্ছে সেদিনই প্রথম দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে বিজেপিও। জোটের জট নতুন করে না পাকালে, শুক্রবারে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে বামেরাও। সব মিলিয়ে রবিবার বাংলায় নরেন্দ্র মোদী আসার আগে মার্চের প্রথম শুক্রবারই যে হয়ে উঠতে চলেছে রাজ্য রাজনীতির চার্চার ‘হট টপিক’, তা নিয়ে কোনও সংশই নেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে প্রার্থী হলে তাঁর বিরুদ্ধে কে বা কারা দাঁড়াবে? বিজেপি সূত্রের খবর, পদ্ম শিবির চায় ‘নিজের কেন্দ্র’ নন্দীগ্রাম থেকেই প্রার্থী হোক শুভেন্দু। তৃণমূলত্যাগী নেতা নিজেও আত্মবিশ্বাসী, নন্দীগ্রাম থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৫০ হাজারে হারাবেন তিনি। শেষ পর্যন্ত যদি শুভেন্দুই ফের নন্দীগ্রামে প্রার্থী হন, তাহলে লড়াইটা কার্যত হয়ে দাঁড়াবে ‘বাংলার মেয়ে’ বনাম ‘ভূমিপুত্রের’। অঙ্ক কি এখানেই শেষ? উত্তর না।
আরও পড়ুন: ‘মমতার বিরুদ্ধে লড়তে তৈরি’, শুভেন্দু জানালেন শাহ-নাড্ডাকে
ভোটের যোগবিয়োগে হিসেব গুলিয়ে দিতে আসরে এবার ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টও (Indian Secular Front)। হাওয়ায় এমনও কথাও ভাসছে, নন্দীগ্রাম থেকে নাকি জোটের প্রার্থী হবেন এক পীরজাদা। যদিও আইএসএফ-এর তরফে এই বিষয়ে এখনও স্পষ্ট করে কোনও কিছুই বলা হয়নি। আব্বাস সিদ্দিকির তরফে তাঁর পার্টির নেতা নওসাদ টিভি নাইন বাংলাকে জানিয়েছেন, “লকডাউনের সময় ভাইজান (আব্বাস সিদ্দিকি) নন্দীগ্রামের মানুষের পাশে ছিলেন। ওই কেন্দ্রে মুসলিম ভোটের বাইরেও আমাদের ভোট আছে অপরদিকে যিনিই প্রার্থী হন, জিতব আমরাই।”
সত্যিই কি তাই? সিপিআই সূত্রের খবর, তারা এই আসনে লড়তে চাইলেও শরিকি চাপে খানিক বাধ্য হয়েই জমি ছাড়তে হয়েছে। আসন ছাড়া নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও সিপিআইয়ের পূর্ব মেদিনীপুরের সম্পাদক নির্মলবাবু যেমন বলছেন, “জোট নিয়ে যা সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে যা বলার আমাদের রাজ্য সম্পাদকই বলবেন। আমি কিছু বলব না।” নন্দীগ্রামের হেভিওয়েট লড়াইয়ে জোট প্রার্থীরা কতটা এগিয়ে থাকবে? তাঁর উত্তর, “লড়াই হবে।”
আরও পড়ুন: ‘ঘর থেকে তুলে হাত-পা ভেঙে আমিই চিকিৎসা করাব’, সুশান্তর ‘হুমকি’ ঘাস-পদ্মকে
প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত নন্দীগ্রাম ছিল ‘লালে লাল’। যদিও ১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট যখন বাংলার মসনদে তখন নন্দীগ্রাম ছিল জনতা পার্টির দখলে। ২০০৯ সালের উপনির্বাচনে দ্বিতীয়বারের জন্য বামেদের হাতছাড়া হয় নন্দীগ্রাম। তারপর এই কেন্দ্র থেকে আরও একবার জেতেন ‘শহিদের মা’ ফিরোজা বিবি। ২০১৬ সালে নন্দীগ্রাম থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হন শুভেন্দু। তিনি ৬৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতেন এবং মমতা মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর দলবদলের কারণেই নন্দীগ্রাম নিয়ে বাড়তি চাপে তৃণমূল। প্রার্থী হতে চাইছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সিপিএম-বিজেপির কটাক্ষ, ভবনীপুরে হাল খারাপ বলেই নন্দীগ্রামে দাঁড়াতে চাইছেন মমতা। যদিও তৃণমূলের তরফে পাল্টা দাবি, রাজ্যের ২৯৪ আসনের যেকোনও কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালেই ‘নেত্রী’ জিতবেন। এই প্রেক্ষাপটে আইএসএফ-এর উত্থান যে আলাদা মাত্রা যোগ করবে তা নিয়ে সিংহভাগ বিশ্লেষকই সহমত।