AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘টানা অক্সিজেন চলার পর আবার যেদিন নিজে থেকে শ্বাস নিলাম সেই অনুভূতি অবর্ণনীয়’

করোনাকে হার মানিয়ে নতুন জীবন পাওয়ার গল্প শোনালেন অভিনেত্রী অনামিকা সাহা।

'টানা অক্সিজেন চলার পর আবার যেদিন নিজে থেকে শ্বাস নিলাম সেই অনুভূতি অবর্ণনীয়'
| Updated on: May 13, 2021 | 5:21 PM
Share

এপ্রিলের মাঝামাঝি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী অনামিকা সাহা। অসম্ভব শ্বাসকষ্ট, কোমরবিডিটি নিয়ে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। এক নাগাড়ে চলেছিল অক্সিজেন। তবে করোনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে আবারও স্বমহিমায় তিনি। হাসপাতালের ওই সব দিনের নানা অভিজ্ঞতা এবং করোনা জয়ের গল্পই শেয়ার করলেন টিভিনাইন বাংলার কাছে…

অনেকেই জানেন, এক ধারাবাহিকে শুটিং করছিলাম আমি। নির্বাচনী প্রচারেও গিয়েছিলাম। যথাসম্ভব নিজেকে সামলে চলেছি। যা যা প্রয়োজনীয় সব মেনে চলেছি। কিন্তু তার পরেও করোনা আমায় ছোবল দিল এপ্রিলের মাঝামাঝি। করোনা হওয়ার আগে আমার এত বছরের জীবনে মাত্র দুই বার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে আমাকে। এক আমার মেয়ে যখন হল, আর একবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ে। ওই দুই বারই বিশেষ অসুবিধে হয়নি। উল্টে আড্ডা-গল্পে হাসপাতাল মাতিয়ে রেখেছিলাম।

আর এবার? আমার কোনও শত্রুরও যেন ওই অসুখ না হয়…

মালদা প্রচার থেকে ফেরার কয়েকদিনের মধ্যেই আমার শুরু হল শ্বাসকষ্ট। সঙ্গে জ্বর। সব হাসপাতাল ভর্তি। কোথাও বেড নেই। আমায় নিয়ে যাওয়া হল ইকবালপুরের এক হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করেই নিয়ে আসা হল বাঙ্গুরে। ওই দিন যথাসময়ে হাসপাতালে ভর্তি করা না হলে হয়তো আপনাদের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতা ভাগ করা হত না আমার।

আমার কোমরবিডিটি ছিলই। একে বয়েস তারই সঙ্গে হাইব্লাড সুগারের পেশেন্ট আমি। বাঙ্গুরে তিন দিন জ্ঞান ছিল না আমার। তার পর যখন সেন্স ফিরল এক হাতে স্যালাইন, নাকে অক্সিজেন, চতুর্দিকে খালি ইঞ্জেকশনের দাগ…হাতে পায়ে কালশিটে। জীবনে প্রথম বার বুঝলাম হাসপাতালের অভিজ্ঞতা আসলে কী জিনিস। ১৬ দিন প্রিয়জনদের দেখতে পাইনি।

একটা ছোট্ট ঘটনা বলি, আমার পাশের কেবিনে একদিন বেশ রাতেই এক ভদ্রমহিলাকে ভর্তি করা হল, রাত্রিবেলা অক্সিজেন দেওয়া, নার্সদের হাঁকাহাঁকি শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতেই দেখি সব শান্ত। জিজ্ঞাসা করতেই জানলাম, উনি সকালেই মারা গিয়েছেন।

আরও পড়ুন- টলিপাড়ায় বিনামূল্যে র‍্যাপিড টেস্ট শুরু টেকনিশিয়ানদের, আক্রান্ত বেশ কয়েক জন, নেই উপসর্গ

আমার ফুসফুসেও সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। আমি হার মানিনি। ভয় পেয়েছি, কিন্তু মনের জোর হারাইনি। পাশের কেবিনের খবরটা পাওয়ার পরেই বারেবারেই নিজেকে বলেছি আমায় বাঁচতে হবে, লড়তে হবে…খাওয়াদাওয়া কিন্তু এ সময় ভীষণ জরুরি। আমার সুগার আছে আগেই বলেছি, কিন্তু তা সত্ত্বেও হাসপাতালে দিত একবেলা মাছ, একবেলা মাংস, এতটা করে ভাত, ডিম, কলা… কে খাবে অত! কিন্ত ডাক্তার বলেছিল না খেলে সুস্থ হতেই পারব না…

ক্রমশ সুস্থতার দিকে এগচ্ছি। হঠাৎ করেই একদিন ডাক্তারবাবু এসে বললেন, “বাড়ি যাবেন?” আমি ভাবলাম এমনি বলছেন বুঝি। বললাম, “হ্যাঁ আপনি ছাড়লে যাব। না ছাড়লে আর কী করে যাব?” ওমা দেখি কি, ওই দিনই সন্ধেবেলা ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে আমায় নিতে এসেছে আমার ভাই…আমি ভাবতেও পারিনি… আমায় যে মেয়েটি দেখাশোনা করে, ওরও আমার থেকেই করোনা হয়েছিল তাই বাড়ি না গিয়ে মেয়ে দিল্লি থেকে একটা গেস্ট হাউজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল ওখানে পাঁচ দিন ছিলাম। এখন ফিরে গিয়েছি…  যে দিন বাড়ি ফিরি  ডাক্তার নার্স সবাই মিলে সম্বর্ধনা দিল, ফুল-টুল দিয়ে। ডাক্তারবাবুরা সবাই বলল , “আপনাকে তো এভাবে দেখব ভাবিনি। আর দেখতেও চাই না এখানে। আপনার বাড়িতে যাব আমরা।”

১৪ দিন আমার অক্সিজেন চলেছে, ১৪ দিন পর যখন অক্সিজেন মাস্কটা খোলা হল, যখন বুঝতে পারলাম নিজে থেকে শ্বাস নিচ্ছি…এইটা…এই অনুভূতিটা যে কী আনন্দের, কী রকম একটা হয় শরীরের মধ্যে বলে বোঝানো যাবে না…যেন মনে হল নতুন জন্ম হল আমার। আবার বেঁচে ফিরলাম আমি…