বহু অর্থ ও শারীরিক পরিশ্রমের পর একটি সিনেমা তৈরি হয়। এবার সেই সিনেমা মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই যদি তার পাইরে়টেড কপি বাজারে চলে আসে, তাহলে সিনেমার বাণিজ্যিক সাফল্যে অবশ্যই প্রভাব পড়ে। সিনেমার বাণিজ্যিক সাফল্য না থাকলে প্রযোজিত ছবির সমূহ ক্ষতি। আর সেই লোকসান ভীষণভাবে প্রভাবিত করে সমগ্র সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে। পরিচালক প্রভাত রায়ের কথায়, “বহু বছর ধরে ছবি র নকল বাজারে চলছে। সিনেমা হলে না চললে প্রযোজকের ক্ষতি। এই কারণেই এখন ছবি মুক্তির আগে ছবির স্যাটেলাইট সত্ব বিক্রি হয়ে গেলে প্রযোজক নিশ্চিন্ত। তবে এখন যদি কঠিন আইন প্রণয়ন হয়, তাহলে তা অবশ্যই ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভাল খবর।”
তবে সিনে ইন্ডাস্ট্রির জন্য এবার ভাল খবর। পাইরেসি অথবা সিনেমার নকল রুখতে বড় উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সিনেমাটোগ্রাফ সংশোধনী বিল, ২০২৩ আগেই রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে। আর সম্প্রতি লোকসভায় পাশ হয়ে গেল সিনেমাটোগ্রাফ (সংশোধনী) বিল।
এই বিল আইনে পরিণত হওয়ার পর, সিনেমা হলে বসে সিনেমার ভিডিয়ো বা রেকর্ডিং করলে কঠোর শাস্তি হবে। সিনেমা হলে রেকর্ডিং করলে তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং আর্থিক শাস্তি হিসেবে সিনেমার প্রোডাকশন খরচের ৫ শতাংশ জরিমানা হিসেবে দিতে হবে। মূলত সিনেমা হলে বসে সিনেমার রেকর্ডিং করেই পাইরেসি হয়ে থাকে। পাইরেসির ফলে প্রযোজক সংস্থাকে বিরাট আর্থিক লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়। পাইরেটেড কপি দেখে অনেকেই আর সিনেমা হলে যেতে চান না। তা রুখতেই নতুন আইন।
এই আইন সিনেমার বাণিজ্যের জন্য খুবই কাজের বলে মনে করছেন সিনে ইন্ডাস্ট্রি। অভিনেতা তথা প্রযোজক দেব বললেন, “বহু যুগ ধরেই ছবির পাইরেসি হয়ে আসছে। শুধু সিনেমা নয়, গানেরও পাইরেসি হতো। তবে এখন তো তো সাবস্ক্রাইব করে গান শুনতে হয়। এই রকম আইন হলে অবশ্যই সিনেমার ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভাল খবর।”
অভিনেত্রী রুক্মিণী মৈত্র জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। প্রথম যখন চ্যাম্প মুক্তি পায়, তখন রুক্মিণী দেখেন ছবিটা কপি হয়ে মোবাইলে এসে গিয়েছে। সেটা দেখে মন খারাপ হয়। রুক্মিণী মতে, “এবার যদি এই কপি করার জন্য কোনও আইনি দণ্ড নির্ধারিত হয়, সেটা খুবই ভাল।”
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত মনে করেন, “কঠোর আইন হলে অবশ্যই পাইরেসি বন্ধ হবে। এতে সিনেমার ব্যবসা ভাল হবে। প্রযোজকের মুখেও হাসি ফুটবে। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা অবশ্যই একটা ভাল খবর।” ডিস্ট্রিবিউটর শতদীপ সাহার মতে, “দেরিতে হলেও এত দিনে খুবই ভাল উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পাইরেসি তো অপরাধ।”
নতুন প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাইরেসির নতুন-নতুন ফন্দি। যদিও বড় পর্দায় সিনেমা দেখার মজা পাইরেটেড সিনেমায় নেই। তবে আইন প্রণয়ন অবশ্যই আশার আলো দেখাচ্ছে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে।