AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

অভিনেত্রী শুভশ্রীর অন্যতম সেরা বছর, কেমন হলো ‘অনুসন্ধান’?

মহিলা জেলে গর্ভবতী হয়ে পড়ার ঘটনা নিয়ে বাংলাতেই একাধিক খবর বেরিয়েছিল। কয়েক বছর আগে TV9 বাংলারই একটা রিপোর্ট পড়ছিলাম, যেখানে দেখা যাচ্ছে ১৯৬ জন মহিলা সংশোধনাগারে গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন। এদিকে সেখানে পুরুষদের প্রবেশাধিকার নেই। সকলে যে জেলের বাইরে কোনও কারণে গিয়েছেন, সেটাও নয়। তা হলে এমন ঘটনা ঘটছে কী করে?

অভিনেত্রী শুভশ্রীর অন্যতম সেরা বছর, কেমন হলো 'অনুসন্ধান'?
| Updated on: Nov 12, 2025 | 12:04 PM
Share

মহিলা জেলে গর্ভবতী হয়ে পড়ার ঘটনা নিয়ে বাংলাতেই একাধিক খবর বেরিয়েছিল। কয়েক বছর আগে TV9 বাংলারই একটা রিপোর্ট পড়ছিলাম, যেখানে দেখা যাচ্ছে ১৯৬ জন মহিলা সংশোধনাগারে গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন। এদিকে সেখানে পুরুষদের প্রবেশাধিকার নেই। সকলে যে জেলের বাইরে কোনও কারণে গিয়েছেন, সেটাও নয়। তা হলে এমন ঘটনা ঘটছে কী করে? আজকের পৃথিবীতে বুদ্ধিমান মানুষরা বিশ্বাস করেন, জেলের দুনিয়া যেন অন্য় একটা দুনিয়া। সেখানে প্রভাবশালী কেউ বন্দি থাকলে, তাঁর বিনোদনের অভাব হয় না! এই দুনিয়া কতটা নোংরা, সেটাই সাংবাদিক অনুমিতা সেনের চোখ দিয়ে এই ওয়েব সিরিজে দেখি আমরা।

অনুমিতার চরিত্রটি করেছেন শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। একটা নামী চ্যানেলে কর্মরত অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাত্‍কার নিয়ে সে নজর কেড়েছে। তার প্রেমিক একটা সংস্থায় কর্মরত, যার সঙ্গে নেতা-মন্ত্রী-নির্বাচনের যোগ আছে। জেলে বন্দি এক প্রভাবশালী নেতা, অনুমিতাকে ডেকে পাঠায় দেখা করবে বলে। প্রথম দিন পৌঁছেই অনুমিতা গন্ধ পেয়ে যায়, জেলের পরিস্থিতি ঠিক নেই। একটা মেয়ে হঠাত্‍ কাঁদতে-কাঁদতে বলে, ‘আমি পেট খসাবো না!’ অনুমিতার এই জেল ঘিরে আগ্রহ বাড়তে শুরু করার পরই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে। তার প্রেমিক কোমায় চলে যায়। অনুমিতা প্রাণে বাঁচে। তারপর কী হয়, ঘুণ ধরে যাওয়া সমাজের দিকে আঙুল তোলার সাহসটা শেষ অবধি ধরে রাখতে পারে কিনা অনুমিতা, তা জানতে হলে, দেখতে হবে ‘অনুসন্ধান’।

সাংবাদিকের জীবনের খুঁটিনাটি, যেভাবে দেখানো হয়েছে ওয়েব সিরিজে, সেখানে আরও কিছুটা গবেষণার দরকার ছিল। যেমন একজন সাংবাদিক স্টুডিয়োতে ঢুকে কাউকে কিছু বলার পরিবর্তে পিসিআর ব্যবহার করে। গল্প যত এগোবে, এমন কিছু খটকা কড়া নাড়বে। ক্লাইম্যাক্সে যা ঘটে, তা বাস্তবে সাজানো ভয়ঙ্কর কঠিন। তবে এই গল্পের চুম্বক অনুমিতার চরিত্র গঠন। যে সমাজে একটু শান্তির জীবনের জন্য প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ আপোস করতে প্রস্তুত, সেখানে একজন মেয়ে সাংবাদিকতার জন্য পৃথিবীর যাবতীয় আনন্দ বা শোক ভুলে গিয়ে কীভাবে নিজের লক্ষ্যে অচল থাকতে পারে, তা দেখলে রক্ত গরম হয়ে যাবে। এটা থ্রিলার। পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর পদ্ধতিটা একদম টানটান। প্রতিটা পর্ব শেষের চমকও তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো।

এই ওয়েব সিরিজ জুড়ে একটা ভয়ের গন্ধ আছে। সমাজে যা কিছু খারাপ, অথচ নেতা-মন্ত্রী বা সিস্টেম ঘটিয়ে চলেছে, তার দিকে আঙুল তুললেই, আপনার ব্যক্তিগত জীবন ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। আপনার সততার জন্য আর পাঁচটা নিরীহ লোকের প্রাণ চলে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ দিন-দিন অসহায় হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা রোজ কাঁদে, তবে সে রক্তক্ষরণ বাইরে আনার স্বাধীনতাটুকু তাঁদের নেই। এই আবহাওয়া যেভাবে চিত্রনাট্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে, তার সঙ্গে একাত্ম না হয়ে পারলাম না। সেই কারণেই অনুমিতার লড়াই একটা সময়ে প্রতিটা দর্শকের নিজের লড়াই হয়ে উঠবে।

অনুমিতার চরিত্রে শুভশ্রী নজর কেড়ে নেওয়ার মতো কাজ করছেন। তিনি ‘গৃহপ্রবেশ’ ছবিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। বরং ‘ধূমকেতু’ ছবিতে শুভশ্রীর অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে মেলে ধরার খুব একটা জায়গা ছিল না। সেখানে অনুমিতার চরিত্রটা তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এই চরিত্রকে ঘিরে যে শারীরিক আর মানসিক রক্তক্ষরণের জায়গা, তার সঙ্গে শুভশ্রী যেভাবে মিশে গিয়েছেন, তাতে মনে হয়, বহু অনুভব, বহু তাগিদ, তাঁকে এই চরিত্র এমনভাবে ফুটিয়ে তোলার পথে পা বাড়াতে ইন্ধন জুগিয়েছে। সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের কাজ মেন গেঁথে গেল। পার্শ্বচরিত্রগুলো যাঁরা করেছেন, অরিত্র দত্ত বণিক থেকে অরিজিতা মুখোপাধ্যায়, সকলকেই ভারি মানিয়েছে।

একশোবার মার খেয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প দশকের পর দশক ধরে দেখছি আমরা। তবু সে গল্প কখনও পুরোনো হয় না। এমন গল্প ছেড়ে দেওয়া হাল ধরার পথে আমাদের চালনা করে। ওয়েব সিরিজের শেষ দৃশ্যে প্রধান চরিত্র যেভাবে পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিঁড়ে দেয়, সেটাও হৃদয়ে ধাক্কা দেয়।  তাই চিত্রনাট্য নিখুঁত না হলেও, এই ওয়েব সিরিজের আত্মা খুব জ্যান্ত, বিবেকের বন্ধু। ওয়েব সিরিজ দেখার পর বেশ কিছু ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরও নিজের কাছে এটুকুই চেয়েছি, আমার মধ্যে যেন এক টুকরো অনুমিতা ছটফট করে আজীবন।