AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

কিংবদন্তির গন্ধ, গন্ধ তো নয় মন্দ! কেমন হল ‘দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা’

এবার কিংবদন্তি স্মরণ প্রসঙ্গে আসি। 'জয় বাবা ফেলুনাথ' ছবিতে গল্পের খোলস ছাড়ানো হয়েছিল বেনারসে। তাই একেন সিরিজের ছবিতে গঙ্গার ঘাট, আরতি, নৌকাবিহার বা চিতার আগুন, সবই আকর্ষণীয় হলেও, নতুন নয়। বহু বাংলা ছবি ঘুরেছে-ফিরেছে এই পথ দিয়ে। সাধু বেশে বেলাল আর তাকে জব্দ করা একেন কি মছলিবাবা-ফেলুদার ম্যাজিক ছুঁতে পারল? না। তবে এটুকু বলা যায়, স্মরণে যে দায়িত্ব পালন করতে হয়, সেই লক্ষ্যে সামান্য নিরাশ করেনি ছবিটি।

কিংবদন্তির গন্ধ, গন্ধ তো নয় মন্দ! কেমন হল 'দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা'
Follow Us:
| Updated on: May 19, 2025 | 10:21 AM

ভাস্বতী ঘোষ

একেনবাবু এবার বারাণসীতে। একেন সেন অধিকাংশ জায়গাতে পেটপুজো করতে যায়। এবার তার দুই বন্ধুর সঙ্গে শহরে বসে বিরিয়ানি সাঁটাচ্ছিলেন। বউ নাকি ঢ্যাঁড়শ আর বাঁধাকপি ছাড়া কিছু রাঁধছে না। হঠাত্‍ বন্ধুর কাছে তার বন্ধু সুবিমলের ফোন (এই চরিত্রে গৌরব চক্রবর্তী)। তারপর বারাণসীর নেমন্তন্ন পাওয়া মাত্র লস্যির লোভে একেন সেনের বেনারস-যাত্রা।

সুবিমলের থাকার জায়গা গঙ্গা-ছুঁয়ে। কাকা (দেবেশ চট্টোপাধ্যায়) অর্ধেক জিনিস মনে রাখছে, অর্ধেক ভুলছে। কাকিমা আবার তুলনায় কমবয়সী, সুন্দরী (এই চরিত্রে ইশা)। কাকা এমন কাকিমা কেমন করে পেল, দেখেই একেনবাবুর মতো দর্শকের খটকা লাগবে। আর আছে কাকার হিসাব দেখার দায়িত্বে এক ব্যক্তি (এই চরিত্রে ঋষভ বসু)। বেনারসে যখন একেন উপস্থিত হয়, তখন দুষ্টু লোক বেলাল মল্লিক (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) পরবর্তী সন্ত্রাসের ছক সাজাচ্ছে। তার সঙ্গী বেনারসের এক ব্যবসায়ী। সেই চরিত্রে বিশ্বনাথ বসু।

পুলিশ সন্ত্রাসবাদীকে ধরতে হিমশিম। বেলাল কীভাবে তথ্য চালাচালি করবে, সেটা কিন্তু নিজেই বলে দেয়। মানে দর্শক আগে রহস্য সমাধান করবেন নাকি একেনবাবু, এ বেশ রেস! এরপর খুন শুরু। এক পুলিশ কর্তা, দোকানে কর্মরত এক মহিলা, তারপর কাকারও আর থাকা হল না! যাবতীয় জটিলতার মাথা যে বেলাল, সেটা ছবির প্রথম ঝলক থেকে স্পষ্ট। একেন কীভাবে এক সূত্রে যাবতীয় অপরাধ গেঁথে বেলাল আর তার দালালকে ধরবে, সেটা দেখতে শিরদাঁড়া সোজা করে বসে থাকতে হবে।

ছবি হোক বা ওয়েব সিরিজ, এর আগে যেসব একেনবাবুর গল্প দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম সেরা এটি। তবে চিত্রনাট্যের কিছু জায়গায় খামতি রয়ে গেল। ইশা, ঋষভ এঁরা যেসব চরিত্র করেছেন, তাঁদের বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় না। মাসান হোলিতে ছবির ক্লাইম্যাক্স। হোলি ঘিরে দৃশ্যনির্মাণ এবং অ্যাকশন আরও জমতে পারত। ছবিতে অনির্বাণ চক্রবর্তী অনবদ্য। বাকি চরিত্রগুলোতে তাবড়-তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যথাযথ। তবে তাঁদের এমন কিছুই করার নেই, যাতে চরিত্রগুলো মাথার মধ্যে থাকবে সিনেমা শেষ হওয়ার পর। শাশ্বত যে দারুণ খলনায়ক হতে পারেন, তা কে না জানেন। তবে এই ছবির চিত্রনাট্য অভিনেতা শাশ্বতকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে ব্যর্থ।

এবার কিংবদন্তি স্মরণ প্রসঙ্গে আসি। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবিতে গল্পের খোলস ছাড়ানো হয়েছিল বেনারসে। তাই একেন সিরিজের ছবিতে গঙ্গার ঘাট, আরতি, নৌকাবিহার বা চিতার আগুন, সবই আকর্ষণীয় হলেও, নতুন নয়। বহু বাংলা ছবি ঘুরেছে-ফিরেছে এই পথ দিয়ে। সাধু বেশে বেলাল আর তাকে জব্দ করা একেন কি মছলিবাবা-ফেলুদার ম্যাজিক ছুঁতে পারল? না। তবে এটুকু বলা যায়, স্মরণে যে দায়িত্ব পালন করতে হয়, সেই লক্ষ্যে সামান্য নিরাশ করেনি ছবিটি।

এই ছবি একবার দেখা যায়। গরমের ছুটিতে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে বেশ মজা করে দেখা যায়। একটু থ্রিলে, জাস্ট চিলে ঘণ্টা দুই কাটাতে ভালোলাগে ছবিটার সঙ্গে। একেন ফ্র্যাঞ্চাইজি যেভাবে গড়ে তুলেছে ‘হইচই স্টুডিয়োজ’ সেটা প্রশংসা পাওয়ার মতো। তবে একেন সিরিজ এত জনপ্রিয় বলেই মনে হয়, কোনও কিছুর স্মরণ ছেড়ে আরও মৌলিক কিছু গড়ে তোলার সময়ে এসে গিয়েছে। ২০-৩০ বছর পর যার স্মরণে নতুন কিছু গড়তে পারবেন পরিচালকরা।

শেষে বলি, একেনের ভুল প্রবাদ বলার বিষয়টা এখন চেনা। বরং এবারের চুম্বক ম্যারেজ জোকস! একেনবাবু বিয়ে আর অ্যাক্সিডেন্ট বিষয় দু’টোকে সমার্থক বলে দাবি করেছে এই ছবিতে। দর্শক এরপর এই ছবির সঙ্গে একাত্ম না হয়ে কোথায় যাবেন!