Aindrila Sharma:’ও চলে গেছে অনেক আগেই…আজ রাতেই হবে? নাকি সকালে আসব?’, শোনার পরও মিরাকেল ঘটতে দেখলেন সব্যসাচী
Sabyasachi Chowdhury: লোকজন মাঝেমধ্যেই ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে যে ‘আজ রাতেই হবে? নাকি সকালে আসব?’ লড়াই থামাননি সব্যসাচী, লড়াই থামাননি ঐন্দ্রিলা।

তৃতীয়বারের মতো মিরাকেল ঘটতে দেখলেন অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী। সোমবার অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর রাতে সব্যসাচী ঐন্দ্রিলা শর্মার শারীরিক অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজির হয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলার জন্য প্রার্থনা করতে। একমাত্র মিরাকেলই পারে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে। তারপর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠিক যা যা ঘটে, তা কম বেশি সকলের জানা। প্রথমটায় প্রার্থনা, দ্বিতীয় ধাপে মৃত্যুর ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়া ও তৃতীয়ধাপে তাঁর সুস্থ হয়ে ওটার খবর সামনে আসা। তবে হাসপাতালে সেই চারদিন সব্যসাচী কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি চিলেন, তা কম-বেশি অজানা সকলের। এবার তিনি আবারও মুখ খুললেন। শুক্রবার রাতে করলেন এক দীর্ঘ পোস্ট। যা দেখা মাত্র এক কথায় চুপ নেটপাড়া। সেই দীর্ঘ পোস্টে রইল কৃতজ্ঞতা, রইল অভিমান, রইল এক প্রেমিকের যন্ত্রণা, রইল এক পরিবারের লড়াইয়ের কাহিনি, তবে তালিকা থেকে বাদ পড়ল না একপেশে নেটিজ়েনদের নিয়ে কড়া সমালোচনাও।
সব্যসাচী লিখলেন- ‘কয়েক হাজার মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জন্য এতখানি লেখা প্রয়োজন ছিল। পরশুদিন (মঙ্গলবার) সকালে ঐন্দ্রিলার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, চোখের সামনে দেখলাম ওর হার্টরেট ড্রপ করে চল্লিশের নিচে নেমে তলিয়ে গেল, মনিটরে ব্ল্যাঙ্ক লাইন, কান্নার আওয়াজ, তার মাঝে ডাক্তাররা দৌড়াদৌড়ি করছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে হৃদস্পন্দন ফের ফিরে এল বিভিন্ন সাপোর্টে, হার্টবিট ১২০। তারপরই কে যেন একটা অদৃশ্য বালিঘড়ি উল্টো করে ঝুলিয়ে দিল, ঝুরো বালির মতন সময় ঝরে পড়ছে, সাথে স্থিরভাবে একটা একটা করে হার্টবিট কমছে, কমছে রক্তচাপ, কমছে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস। ডাক্তাররা জবাব দিয়েছেন, হাসপাতালের নিচে পুলিশ পোস্টিং, বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষ এসে সমবেদনা জানাচ্ছেন, কিছু উত্তেজিত ইউটিউবার এবং মিডিয়ার লোকজন নিচে ঘোরাঘুরি করছেন। শেষ চেষ্টার জন্য অন্য হাসপাতালের এক নামকরা নিউরোসার্জনকে ডেকে আনা হল, তিনি খানিক নাড়াচাড়া করে জানালেন যে “ও চলে গেছে অনেক আগেই, শুধুশুধু এইভাবে আটকে রাখছেন কেন? এমনিতেও কালকের মধ্যে সব থেমেই যাবে। লেট্ হার গো পিসফুলি”।
এরপর শুরু হল সব্যসাচীর কঠিন লড়াই, মনের সঙ্গে, বিশ্বাসের সঙ্গে। লিখে চললেন- ‘রাত বাড়ল, দাঁতে দাঁত চিপে একটা ছোট্ট অসাড় হাত ধরে বসে আছি, চোখদুটো অনেক আগেই ডাইলেটেড হয়ে গেছে, একটা করে বিট কমছে আর অসহায়তা বাড়ছে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আগেই দেখা করে গেছে। লোকজন মাঝেমধ্যেই ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে যে ‘আজ রাতেই হবে? নাকি সকালে আসব?’
এরপরই ঘটে ভয়ানক পরিস্থিতি, লিখলেন তিনি, ইতিমধ্যে ফেসবুকের কল্যাণে কারা যেন মাঝরাতে ছড়িয়ে দিয়েছে যে ঐন্দ্রিলা আর নেই। বানের জলের মতন হুহু করে ফোন ঢুকতে শুরু করলো, সৌরভ শুটিংয়ে বাইরে গেছে, দিব্য একা সামলাতে পারছে না। অগত্যা ঠেকা দেওয়ার জন্য আমি পোস্ট করতে বাধ্য হলাম, মিনিট কুড়ির মধ্যে আবার সব শান্ত। সকাল থেকে রক্তচাপ কমতে শুরু করলো, ওর বাবা-মা কে ডাকলাম, বাকিদের খবর দিলাম। গতকাল আর বাধা দিইনি কাউকে, সারাদিন ধরে কাছের মানুষরা এসেছে, ওকে ছুঁয়েছে, ডুকরে কেঁদেছে। কত স্মৃতিচারণ, কত গল্প। বিকেলের পর দেখলাম হাত, পা, মুখ ফুলছে ঐন্দ্রিলার, শরীর ঠান্ডা। হার্ট রেট কমতে কমতে ৪৬, বিপি ৬০/৩০। আগের দিনের ডাক্তারের কথাটা কেবলই আমার মাথায় ঘুরছিলো, ওর শরীরটাকে এভাবে আটকে রাখার জন্য নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে, থাকতে না পেরে ওর মাকে বললামও যে এত কষ্ট আর দেখতে পারছি না, কি দরকার ছিল এত কিছু করার, শান্তিতে যেত। মুখে বলছি বটে, কিন্তু ছাড়তে কি আর পারি, মায়ার টান বড় কঠিন।
ঠিক রাত আটটায় যখন আমি বিমর্ষমুখে নিচে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ হাত নড়ে ওঠে ঐন্দ্রিলার। খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখি হার্টরেট এক লাফে ৯১, রক্তচাপ বেড়ে ১৩০/৮০, শরীর ক্রমশ গরম হচ্ছে। কে বলে মিরাকেল হয় না? কে বলে ও চলে গেছে? এক প্রকার অনন্ত শূন্য থেকে এক ধাক্কায় ছিটকে ফিরে এল মেয়েটা। গেছে বললেই ও যাবে না কি, যেতে দিলে তো যাবে। এই মুহূর্তে ঐন্দ্রিলা একপ্রকার সাপোর্ট ছাড়াই আছে, এমন কি ভেন্টিলেশন থেকেও বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আগে ক্লিনিক্যালি সুস্থ হোক, নিউরোর কথা পরে ভাববো।
