মঙ্গলবার সকালেই টলিউডের ইন্দ্রপতন। চিরঘুমের দেশে নাট্যকার অভিনেতা মনোজ মিত্র। এদিন সকাল ৮.৫০ মিনিটে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মঞ্চে হোক কিংবা ক্যামেরার সামনে, অ্যাকশন মানেই তিনি এক অন্য মানুষয পলকে চরিত্র হয়ে উঠতেন তিনি। পজেটিভ-নেগেটিভ দুই চরিত্রই সমানভাবে সামাল দিতেন। টলিপাড়ার স্বর্ণযুগে রাজত্ব করেছেন মনোজ মিত্র। কেবল অভিনয় নয়, তাঁর লেখা নাটকেও কৌতুকের যে রসদ থাকত, তা দর্শকেরা তাড়িয়ে-তাড়িয়ে উপভোগ করতেন। তিনি ইন্ডাস্ট্রির অভিভাবক, হাতে করে তৈরি করেছেন বহু শিল্পী। আজ তাঁদের চোখেই জল। কারও কাছে তিনি শিক্ষক, কারও কাছে তিনি সহকর্মী, কারও কাছে পথপ্রদর্শক, আজ তাঁরা সকলেই অভিভাবক হারা। TV9 বাংলায় স্মৃতিচারণ করলেন মেঘনাথ ভট্টাচার্য, দেবদূত ঘোষ, কাঞ্চন মল্লিক প্রমুখেরা।
মেঘনাদ ভট্টাচার্য
আমাদের বাংলা থিয়েটারে তিনজন নাট্যকার ছিলেন। তাঁদের প্রভাব আমরা এখনও অস্বীকার করতে পারিনি। বাদল সরকার, মনোজ মিত্র এবং মোহিত চট্টোপাধ্যায়। উৎপল দত্তও রয়েছেন। তবে মূলত এই তিনজনের নাটক নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন। তার মধ্যে মনোজ মিত্র শেষ মানুষ। উনি চলে গেলেন। সারা বিশ্বে যেখানেই বাঙালি, সেখানেই মনোজ মিত্রের নাটক। অনেক মানুষ, যাঁদের কেউ ভরসা করে না, তাঁদের ওপর ওঁর একটা দায় ছিল। তাঁদের তিনি লড়াইয়ে জিতিয়ে দিতেন। শেষ সময়টা তাঁর খুব একটা ভাল কাটল না। বৃদ্ধ বয়সে তিনি খুব ভয় পেতেন। তবে তিনি যেভাবে সমাজ, নাটক, পৃথিবীকে দেখতেন, সেই চোখ অনবদ্য।
দেবদূত ঘোষ
মনোজদার সঙ্গে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা হচ্ছে ছবিতে। থিয়েটারে কখনও আমরা কাজ করিনি। আমি যখন ছাত্রাবস্থায় স্কুলের গণ্ডি থেকে বেরনোর আগেই থিয়েটারে যোগ দিয়েছি, সেই সময় সময় আমাদের মাথার ওপর বটবৃক্ষের মতো যাঁরা ছিলেন, মনোজদা তাঁদের মধ্যে একজন। নাট্য আকাডেমির ওয়ার্কশপ যখন শুরু হয়, তখন মনোজ মিত্র, বিভাস চক্রবর্তীদের পাওয়া। আমি সেই ক্লাসগুলো করেছি। শুটিং-এর আউটডোরে খুব ভাল সময় কাটিয়েছি। খুব মজার মানুষ। কম কথা বলতেন। রসময়ী রসিকতায় এক সঙ্গে কাজ করা। সারা পৃথিবীর মধ্যে খুব অল্প মানুষ আছেন যাঁরা মনোগ্রাহী করে তুলতে পারেন। তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। শেষ সময় খোঁজ রাখার চেষ্টা করেছি। গত পরশুও খোঁজ নিয়েছি। ভারতের ছবি, নাটক, নির্দেশনা, অভিনয়, সবক্ষেত্রেই বড় ক্ষতি। নিঃসন্দেহে সিনেমাজগতের বড় ক্ষতি। অভিভাবক চলে গেলেন।
কাঞ্চন মল্লিক
আমি একটাই কথা বলতে চাই, মনোজ মিত্র চলে যাওয়াটা, বাংলা নাট্য জগতে এক বিরাট ক্ষতি। অনবদ্য এক নাট্যকার, নির্দেশক এবং অভিনেতা চলে গেলেন। কীভাবে এ ক্ষতিপূরণ হবে জানি না। এটা এক বড় ক্ষতি। আমাদের থিয়েটার জগতের বড় ক্ষতি।