AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

মেয়ের নামকরণ করেছিলাম ‘শাহিদা নীরা’… তাহলে তো ভয় পেয়ে ওর নাম পাল্টে দেওয়া উচিত ছিল: সুদীপ্তা চক্রবর্তী

এক দিকে, প্রথম হিন্দি ছবির কাজ, অন্য দিকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে TV9 বাংলার কাছে মুখ খুললেন অভিনেত্রী।

মেয়ের নামকরণ করেছিলাম ‘শাহিদা নীরা’... তাহলে তো ভয় পেয়ে ওর নাম পাল্টে দেওয়া উচিত ছিল: সুদীপ্তা চক্রবর্তী
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী।
| Edited By: | Updated on: Jan 31, 2021 | 10:32 PM
Share

প্রথম হিন্দি ছবি করতে চলেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী (Sudiptaa Chakraborty)। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মনোহর পাণ্ডে’ তাঁর হিন্দি ডেবিউ ছবি। ছবির শুটিং শুরু হয়ে গেলেও সুদীপ্তার শুটিং শুরু হচ্ছে ফেব্রুয়ারি থেকে। এক দিকে, প্রথম হিন্দি ছবির কাজ, অন্য দিকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে TV9 বাংলার কাছে মুখ খুললেন অভিনেত্রী।

প্রথম হিন্দি ডেবিউ, নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?

না। খুব ভাবনা-চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিইনি। কৌশিকদা বললেই সেটা অনেকটা আমার কাছে। ভাবনা-চিন্তাটা কৌশিকদাই করে নিয়েছেন আমার ধারণা (হাসি)। কিছু লোকের উপর ভরসা থাকে তো। ভুল কাজে আমাকে ডাকবে না, আমি জানি। কৌশিকদার উপর সেই ভরসাটা রয়েছে। এটা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার তিন নম্বর ছবি।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি বলেই কি রাজি হলেন?

প্রথম কারণ অবশ্যই কৌশিকদা। কৌশিকদার ছবি বলেই প্রি-ডমিনেটলি ‘হ্যাঁ’ বলা। দ্বিতীয় কারণ অভিনেতাদের নামের তালিকা। লোভটা সামলাতে পারলাম না।

মানে?

কৌশিকদা একদিন আমাকে ফোন করে বলল, ‘‘একটা ছবি করছি। হিন্দিতে। এখানকার শিল্পী খুব একটা নেই।’’ তারপর যাঁদের নাম বলতে শুরু করল, আমার তো শুনেই হাত-পা কাঁপার জোগাড়। রঘুবীর যাদব, সৌরভ শুক্লা, সুপ্রিয়া পাঠক রয়েছেন। ওঁদের তো শুধু পর্দাতেই দেখেছি। সৌরভ আমার খুব পছন্দের অভিনেতা। আমি যে ধরনের অভিনয়ে বিশ্বাস করি, সেই অভিনয়ের শেষ কথা সৌরভ শুক্লা। তাঁর সঙ্গে অভিনয় করা… উফফফ…!

এমন চরিত্র আপনার কেরিয়ারে প্রথম?

না…। এর আগে এরকম চরিত্র করিনি তা নয়। তবে এই অ্যাপ্রোচটা কোথাও পাইনি।

শুটিং শুরু হয়েছে?

ছবির শুটিং শুরু হয়ে গিয়েছে। আমার ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে। পুরো শুটিং কলকাতায়। কলকাতারই গল্প। সত্যি ঘটনার উপর নির্ভর করে গল্পটা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন, ইমন-নীলাঞ্জনের বিয়ে, শুরু হল নতুন পথ চলা

আপনি একজন সচেতন নাগরিক এবং বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র মেম্বার। এই মুহূর্তে বাংলা চলচ্চিত্র মহলে রাজনীতি নিয়ে যে সব ঘটনা ঘটছে, কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ফিল্ম পার্সোনালিটিদের রাজনীতিতে যোগদান, এ তো প্রথম নয়। উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত, পশ্চিমবঙ্গ—সব জায়গাতেই এই উদাহরণ রয়েছে। আমি ছোট থেকেই দেখছি। তাতে কোনও অসুবিধে নেই। একজন অভিনেতা সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিতেই পারেন। তাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ওভারঅল কাদা ছোড়াছুড়িটা ভাল লাগছে না।

সম্প্রতি অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত মুখোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ যে ধরনের পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন বা রুদ্রনীল ঘোষ যে ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য করছেন, সেটা কীভাবে দেখছেন?

এটা সমাজের সামগ্রিক অবক্ষয়। আমরা কেউ এর বাইরে নই। যে অভিনেতারা কথা বলছেন, তাঁরাও এই সমাজের অংশ। যাঁরা কমেন্ট করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাঁরাও এই সমাজেরই মানুষ। সার্বিক ক্ষয় হচ্ছে, এগুলো তারই উদাহরণ। যে কোনও ক্ষেত্রেই কোনও মহিলার কোনও বক্তব্যে আপনার আপত্তি থাকলে সেই বক্তব্য খণ্ডন করার জন্য আপনি পাল্টা বক্তব্য রাখুন। কিন্তু তাঁকে শারীরিক নিগ্রহের থ্রেট দিয়ে, সবথেকে সহজ থ্রেট যেটা—রেপ করে দেব, মাথা কেটে দেব—এই অসভ্যতাটা কোনও মতেই অ্যাকসেপ্ট করা যায় না, সে আপনি যে দলেরই হোন, যে বৃত্তেরই হোন, যাই-ই হোন না কেন। কারও কথায় আপত্তি থাকলে যুক্তি দিয়ে খন্ডন করুন। কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণ, শারীরিক নির্যাতনের হুমকি—এগুলো নিম্নরুচির পরিচায়ক।

এই সব ঘটনার পর সায়নী, দেবলীনা বা রুদ্রনীলের সঙ্গে কথা হয়েছে?

সরাসরি কথা হয়নি।

আপনি তো একজন মেয়েরও মা। ভয় লাগছে কি?

ছোটবেলায় ডারউইনের থিওরি পড়েছিলাম। ইভোলিউশন। আমার বিশ্বাস, পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে আমার মেয়েও নিজেকে বদলে ফেলবে। নিজের বিপদ নিজেই হ্যান্ডেল করে নেবে।

পড়াশোনা বা কেরিয়ারের সূত্রে মেয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে চলে গেলে কি সেফ মনে হবে?

সেফ, আনসেফ… (সামান্য বিরতি) আসলে বাড়ির ভিতরেই কি সেফ? কাকা, মামা, দাদা, বাড়িওয়ালা, নিজের বাবা শারীরিক নির্যাতন করেন কত সময়, তাহলে মেয়েরা কোথায় যাবে? ভাবলে সব সেফ, আবার সব আনসেফ। হাউ টু কমব্যাট দিস, শি উইল লার্ন। ওকে সেই সাহসটা জুগিয়ে যাব। ও তো আমাকে বা ওর বাবাকে দেখছে। আমরা খুব একটা ভয় পাই না। সিংঘু বর্ডারে যে মেয়েগুলো রয়েছে, যাদের টয়লেট করার জায়গা পর্যন্ত নেই, তারা লড়ে যাচ্ছে, তারা যদি সাহস দেখাতে পারে, তাহলে আমার মেয়ে কেন পারবে না? আমি মেয়ের যখন নামকরণ করেছি ‘শাহিদা নীরা’, কত লোক বলেছে ‘তোমার মেয়ে বিদেশে যেতে পারবে না’, ‘যখন বড় হবে, তখন দেশের আরও খারাপ অবস্থা হবে’, ‘কেন ওর মুসলিম নাম রাখছ?’… তাহলে তো ভয় পেয়ে ওর নাম পাল্টে দেওয়া উচিত ছিল আমার… তা তো দিইনি।

আরও পড়ুন, মা বলে, শ্যামাকে কষ্ট দিচ্ছিস, ঈশ্বর তোকে ক্ষমা করবে না: শ্রীময়ী চট্টরাজ