আমার ৫০ বছরের বন্ধু আর নেই, এটা আমার কাছে শকিং: গৌতম ঘোষ
আমি খুবই মর্মাহত। আমার বলার কোনও ভাষা নেই। আমি জানতাম, ওর শরীর ভাল নেই। ডায়ালিসিস হচ্ছে। তার মধ্যেও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিল। ‘উড়োজাহাজ’ শেষ ছবি।
বাংলার চলচ্চিত্রে ফের নক্ষত্রপতন। প্রয়াত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (Buddhadeb Dasgupta)। বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা নাগাদ ঘুমের মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৭৭। তাঁর স্মৃতিচারণা করলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ।
কিছুদিন ধরে খালি খারাপ খবর। প্রিয়জনদের চলে যাওয়ার খবর। আজকে এই যে খবরটা বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত… এটা আমার কাছে শকিং। প্রথমত ভারতীয় সিনেমার একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রকার। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন একজন চলচ্চিত্রকার চলে গেলেন। কবি ছিলেন, সাহিত্যিক ছিলেন। আর আমার ৫০ বছরের বন্ধু। ফলে কত যে স্মৃতি, ভাবতে পারছি না।
কিছুদিন আগেই ফোনে কথা হল। বললেন, ‘গৌতম কী যে হচ্ছে, চলো একদিন বসে আড্ডা মারি। পরিস্থিতি ভাল হলে আড্ডা দেব’। কত যে স্মৃতি, তার শেষ নেই। দেশে, বিদেশে আমরা নানা জায়গায় একসঙ্গে ঘুরেছি। আমার মনে হয় যে, ও যা যা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে, ভারতীয় সিনেমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব চলচ্চিত্র। সেগুলো যদি প্রিজার্ভড হয়, সবথেকে ভাল। কারণ বহু ছবি তো নষ্ট হয়ে যায়।
আমি খুবই মর্মাহত। আমার বলার কোনও ভাষা নেই। আমি জানতাম, ওর শরীর ভাল নেই। ডায়ালিসিস হচ্ছে। তার মধ্যেও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিল। ‘উড়োজাহাজ’ শেষ ছবি। পরের দিকে আস্তে আস্তে ম্যাজিক রিয়ালিজমে চলে গিয়েছিল ওর ছবি। সেটা নিয়ে তর্কও হয়েছিল আমার সঙ্গে। আমি বলেছিলাম, ‘তুমি বেশি স্টাইলাইজড হয়ে যাচ্ছ’। ও বলেছিল, ‘না দেখো, আমি একটা নতুনের মধ্যে দিয়ে বিচরণ করছি’। হতেই পারে, একজন চলচ্চিত্রকারের। স্টাইলাইজড হয়ে যেতেই পারেন। কিন্তু কত রকম যে উপাদান আনার চেষ্টা করেছে, বহু ছবিতে তার সাক্ষর আমরা পাই।
আমার বাড়িতে এসে ও আর মমতা শঙ্কর জোর করে নিয়ে গিয়ে ওর ‘গৃহযুদ্ধ’তে অভিনয় করিয়েছিল। অভিনয়টা তো আমার কাজ নয়। অভিনয় করানো আমার কাজ। জোর করে আমাকে করিয়েছিল। ভাবা যায় না। সিনেমা নিয়ে, নাটক নিয়ে, সাহিত্য নিয়ে কত আলোচনা করেছি। মজা করেছি, চ্যাংড়ামো করেছি, পাগলামো করেছি তার শেষ নেই।
দুই মেয়ে ওর। আমি ওর বাড়িতে গেলে ওর বড় মেয়ে বাবলিকে ঘাড়ে চাপিয়ে খেলা করাতে হত। তারপর শিউলি যখন হল, পিয়ানো শিখতে আরম্ভ করল, আমরা একসঙ্গে পিয়ানো বাজিয়েছি। এখন তো বড় মিউজিক ডিরেক্টর। ওদের জন্মাতে দেখেছি। এতদিনের সম্পর্ক। শিল্পপ্রেমী, সিনেমাকে যারা ভালবাসেন, সকলের কাছেই শকিং নিউজ। ও আর নেই..।
আরও পড়ুন, চলচ্চিত্রে সোনালি যুগের অবসান! ঘুমের মধ্যেই অনন্তে পাড়ি পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের