Subrata Sen & Subrata Dutt Interview: ‘নিষিদ্ধ’ এবং ‘অশ্লীল’—এই দুইয়ের প্রতিই দর্শকের আকর্ষণ অমোঘ, কী বললেন দুই সুব্রত?

সাহিত্যিক সমরেশ বসুর 'প্রজাপতি' উপন্যাস অবলম্বনে বাংলায় একটি ছবি তৈরি করেছেন পরিচালক সুব্রত সেন। গল্পের নায়ক সুখেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আর এক সুব্রত—অভিনেতা সুব্রত দত্ত। ছবি মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার (আজ), ১৪ জুলাই। সুব্রত সেন আর সুব্রত দত্ত—দুই সুব্রতর সঙ্গে জমিয়া আড্ডা দিল TV9 বাংলা।

Subrata Sen & Subrata Dutt Interview: 'নিষিদ্ধ' এবং 'অশ্লীল'—এই দুইয়ের প্রতিই দর্শকের আকর্ষণ অমোঘ, কী বললেন দুই সুব্রত?
Follow Us:
| Updated on: Jul 14, 2023 | 10:34 AM

স্নেহা সেনগুপ্ত

সালটা ছিল ১৯৬৭। এক বাংলা পত্রিকার পুজো সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয় সাহিত্যিক সমরেশ বসুর উপন্যাস ‘প্রজাপতি’। বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই এক তরুণ আইনজীবী (আইনজীবীর নাম অমল মিত্র) মামলা করলেন। তাঁর অভিযোগ, বইটি নাকি ‘অশ্লীল’। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সেই আইনজীবীকেই সমর্থন করেছিল এবং উপন্যাসের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। নিম্ন আদালতে রায়ে বলা হয়, বইটি আদতেই অশ্লীল এবং তাতে কোনও সাহিত্যগুণ নেই। রাজ্যের উচ্চ আদালত স্থগিত রাখে বিচার-পর্ব। ১৭ বছর পর ‘নিষিদ্ধ’ তকমা থেকে মুক্তি পায় ‘প্রজাপতি’। সেই ‘প্রজাপতি’ উপন্যাস অবলম্বনেই বাংলায় একটি ছবি তৈরি করেছেন পরিচালক সুব্রত সেন। গল্পের নায়ক সুখেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আর এক সুব্রত—অভিনেতা সুব্রত দত্ত। ছবি মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার (আজ), ১৪ জুলাই। সুব্রত সেন আর সুব্রত দত্ত—দুই সুব্রতর সঙ্গে জমিয়া আড্ডা দিল TV9 বাংলা।

প্রশ্ন: প্রথমেই জানতে চাইব আপনাদের কার কত বয়স?

সুব্রত দত্ত: যাহ্ বাবা… এই প্রশ্নটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।

সুব্রত সেন: আমার বলতে বাধা নেই। আমি হলাম সুব্রত সেন। আমার বয়স হল ৬০। আর সুব্রত দত্ত যেহেতু হিরো, ও চির তরুণ। ওর আঠাশ (২৮)-টাঠাশ হবে মনে হয়।

সুব্রত দত্ত: আমার ৩৫ প্লাস; আরও কিছু বছরের অভিজ্ঞতা।

প্রশ্ন: (সুব্রত দত্তর উদ্দেশে) সে কী, আপনিও নায়িকাদের মতো বয়স লুকোবেন?

সুব্রত দত্ত: আসলে আমার বয়সের কোনও গাছ-পাথর নেই। ধরে নিন ৪৮। উইকিপিডিয়া তা-ই বলে হয়তো।

সুব্রত সেন: আমি সত্যিই ওর বয়সটা বলে দিচ্ছি। ওর এ বছর ৫০ হবে।

সুব্রত দত্ত: এটা প্লিজ় আপনার এই সাক্ষাৎকারে লিখবেন না। আমি যদি ‘৩৫ প্লাস কিছু বছরের অভিজ্ঞতা’ বলে কিছু কাজ পাই, তা হলে অসুবিধা কোথায় (হাসি)? নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকি আমার চেয়ে মাত্র দেড় বছরের বড়। ও কী বলে রেখেছে বলুন! আমার ব্যাচমেট ছিল নওয়াজ়।

প্রশ্ন: এই বয়সে এসে ‘প্রজাপতি’ শব্দটা শুনলে প্রথম অনুভূতি কী হয়?

সুব্রত দত্ত: আমার অনুভূতি, এই বয়সে আমার আর বিয়ে হবে না। আমি আর সেটা করবও না।

সুব্রত সেন: আমার দু’টো জিনিস মনে হয়। আমি এখন যেখানে থাকি, গল্ফগ্রিনে, সেখানে প্রচুর ‘প্রজাপতি’ ঘুরে বেড়ায়। সুন্দরীদের কথা বলছি না। পতঙ্গ-র কথাই বলছি। উপন্যাস পড়ে আমার মনে হয়েছে ‘প্রজাপতয়ে নমঃ’। অর্থাৎ, ‘পরম পিতা ব্রহ্মা’। তিনি প্রজার সৃষ্টিকর্তা। এই উপন্যাস আসলে তাঁকে নিয়ে। তাঁর প্রতি কিছু প্রশ্নকে নিয়ে।

প্রশ্ন: এর আগেও একসঙ্গে বহু ছবি করেছেন আপনারা দু’জনে। এই পরিচালক-অভিনেতা জুটির ইউএসপি কি?

সুব্রত সেন: এটা আমার কেরিয়ারের ১৩ নম্বর ছবি। আর সুব্রতর সঙ্গে আমার ছবির সংখ্যা ৪টে। ওর জন্য কোনও আদর্শ চরিত্র পেলে দিই। আমি জানি সুব্রত অভিনয়টা কতদূর করতে পারে। ও জানে পরিচালক হিসেবে ওর থেকে আমি কতখানি চাইতে পারি। চরিত্রের মধ্যে সহজেই ঢুকে পড়ে ছেলেটা। মাঝেমধ্যে একটু বেশিই ঢুকে পড়ে। তখন সমস্যাও হয়। সেগুলো তখন আলোচনা করে ঠিক করে নিই।

সুব্রত দত্ত: আমি নিজেকে ঘোড়ার মতো মনে করি। ঘোড়ার চালক ভাল না হলে সে বিপথে চালিত হয়ে যেতে পারে। সেই চালক হিসেবে সুব্রতদা দারুণ ভাল। আমি যখন অভিনয় করতে আসি, তখন থেকে আমাকে চেনেন তিনি। আমাকে দিল্লিতে মঞ্চে অভিনয় করতেও দেখেছেন। তিনি আমাকে ব্যবহার করতে জানেন।

প্রশ্ন: আপনাদের নাম থেকে ‘সু’ বাদ দিলে পড়ে থাকে কেবল ‘ব্রত’। জীবনের ব্রত কী আপনাদের?

সুব্রত দত্ত: আমার মেয়ে ছোট ছিল, বড় হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী অন্য জায়গায় থাকেন, ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। এখন আমি একা থাকি। অভিনয় ছাড়া কিছুই ভাবি না। তাই যতদিন না অবসর নিচ্ছি, চুটিয়ে অভিনয়টাই চালিয়ে যেতে চাই। আর আমার মেয়েটাকে ভাল রাখতে চাই।

সুব্রত সেন: সহজভাবে বলছি তা হলে। যে দিনই মরে যাই না কেন, রোমঞ্চকর জীবন কাটিয়ে যেতে চাই। এবং চেষ্টা করি যেন অভিজ্ঞতা ভাল হয়। জীবনকে যাত্রা হিসেবে দেখি। সেই যাত্রা যেন ভাল হয়।

প্রশ্ন: একটা সময় সমরেশ বসু রচিত ‘প্রজাপতি’ ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষিত হয়েছিল। ‘অশ্লীল’ বলা হয়েছিল উপন্যাসটিকে। ‘নিষিদ্ধ’ এবং ‘অশ্লীল’—এই দুইয়ের প্রতিই দর্শকের আকর্ষণ অমোঘ। সেই কারণেই কি এই গল্পকে বেছে নেওয়া, যাতে দর্শক হল ভরিয়ে দেন…?

সুব্রত সেন: সেই কারণে বাছিনি গল্পটা। অনেক বছর আগে আমি ‘বিবর’ ছবিটি তৈরি করেছিলাম। সেটাও ছিল সমরেশ বসুরই উপন্যাসের গল্প থেকে তৈরি ছবি। ছবি নিষিদ্ধ ছিল না, কিন্তু বিতর্কিত ছিল। সেই সময় ‘প্রজাপতি’তে হাত দিতে সাহস পাইনি। ২০২৩ সালে সেই সাহস আমার হয়েছে।

সুব্রত দত্ত: পুরোটাই কিন্তু বিষয়বস্তুর উপর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন: জীবনে কোনও নিষিদ্ধ কাজ করেছেন?

সুব্রত সেন: হ্যাঁ বাবা, করিনি আবার…

সুব্রত দত্ত: অবশ্যই…

প্রশ্ন: কত বছর বয়সে? ধরা পড়েছিলেন কি?

সুব্রত দত্ত: এর উত্তর আমি প্রথমে দেব। আমাদের বাড়ির ওখানে রেড লাইট (যৌনপল্লি) এরিয়ায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। তারপর প্রচণ্ড মার খেয়েছিলাম, জানেন… সে কী মার, বাবা গো। ক্লাস ৮-৯-এ পড়তাম তখন। বাড়ির লোক জানতে পারেনি যদিও। আজ প্রথম এটা নিয়ে কথা বললাম।

সুব্রত সেন: সিগারেট খেয়েছিলাম প্রথম। বয়স ছিল মাত্র ১৩। সেই বয়সে আমাদের সময় সিগারেট খাওয়া ছিল বীরত্বের কাজ। আমি ক্লাস সিক্স থেকে লুকিয়ে-লুকিয়ে সিগারেট খাই। গন্ধ ঢাকা ছিল আর-এক পর্ব। কালীঘাটে সিগারেট খেয়ে ভবানীপুরে গন্ধ ঢাকতে যেতাম। এখন ভাবলেও হাসি পায়…

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ