‘বুড়ো, এ কী করেছিস!’, বিয়ের দিন আঁতকে ওঠেন উত্তম, কী কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন তরুণ কুমার?
সকলেই এই অনুষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে। উত্তম কুমার অর্থাৎ পর্দার নায়ক বিয়ে করতে যাচ্ছেন বলে কথা। কিন্তু সেই বিয়ের সন্ধ্যায় ভাই তরুণ কুমারের কাণ্ড দেখে রীতিমতো চমকে ওঠেন উত্তম কুমার।

১৯৪৮ সালের ১ জুন, ধূমধামে বিয়ে করতে চললেন টলিপাড়ার মহানায়ক উত্তম কুমার। সে এক রাজকীয় আয়োজন। সকলেই এই অনুষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে। উত্তম কুমার অর্থাৎ পর্দার নায়ক বিয়ে করতে যাচ্ছেন বলে কথা। কিন্তু সেই বিয়ের সন্ধ্যায় ভাই তরুণ কুমারের কাণ্ড দেখে রীতিমতো চমকে ওঠেন উত্তম কুমার। ভাইকে ভালবেসে বুড়ো বলে ডাকতেন। হঠাৎ বিয়ের করতে যাওয়ার আগের মুহূর্তে বলে ওঠেন, ‘বুড়ো, এ কী করেছিস?’
সেদিন দাদাকে খুশি করতে, কী এমন করেছিলেন তরুণ কুমার, চলুন জেনে নেওয়া যাক। তরুণ কুমারের লেখনীতে, “বিয়ের কদিন আগে দাদা বলল— বুড়ো, কোন গাড়িতে আমি বিয়ে করতে যাব? এখনও তো সেটাই ঠিক হল না। আমি ঘাড় পেতে দায়িত্বটা নিয়ে বললাম— গাড়ি নিয়ে তোমায় দুশ্চিন্তা করতে হবে না। তুমি অন্য সব দিক দেখো। বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান বিদ্যাপতি ঘোষের জামাই মলয় ছিল আমার বন্ধু। বিশাল কোলিয়ারি ব্যবসা ওদের। নিউ আলিপুরে বাড়ি। বেশ কয়েকটা গাড়িও ছিল। সেখানেই দৌড়লাম গাড়ি চাইতে বন্ধুর কাছে। মলয়ের বাবা-মা দুজনেই আমায় খুব স্নেহ করতেন। প্রথমে ওদের ফোর্ড গাড়িটা চেয়েছিলাম সংকোচের সঙ্গে। মলয়ের বাবার কানে কথাটা যেতেই বললেন— বুড়োর দাদার বিয়ে। গাড়ি চাইতে এসেছে। ফোর্ড কেন, ওকে আমাদের ডেমলার খানা দিয়ে দাও।”
আর এই কারণেই চমকে ওঠেন মহানায়ক। কারণ ডেমলার গাড়ির তখন ভীষণ কদর। রোলস রয়েস-এর পর ডেমলার-এর স্থান। কলকাতার হাতেগোনা কয়েকজনের ডেমলার ছিল। তরুণ কুমার তারই একটা জোগাড় করেছিলেন দাদার বিয়ে উপলক্ষে।
সেদিনের স্মৃতিতে ফিরে ‘আমার দাদা উত্তমকুমার’-এ তরুণ কুমার লেখেন, “ফুল দিয়ে সাজানো ডেমলার দেখে তো বিয়ের দিন দাদা চক্ষুচড়ক গাছ। একপাশে ডেকে নিয়ে নিচু গলায় বলল— ‘বুড়ো, এ কী করেছিস’। কাল পর্যন্ত গাড়িটা থাকবে তো। নইলে প্রেস্টিজে পড়ে যাব। ডেমলারে চড়ে বর বিয়ে করতে যাবো, আবার ফিরবো ট্যাক্সিতে। ব্যাপারটা কী ভাল দেখাবে।”
আবারও চিন্তায় পরে যান তরুণ কুমার। লেখেন, “যদিও জানতাম কাল পর্যন্ত গাড়িটা পাওয়া যাবে। তবু কোন ঝুঁকি না নিয়ে ড্রাইভারকে আড়ালে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম— কালকের জন্য মলয় বলে দিয়েছে তো? ড্রাইভার মানুষ হিসেবে খুব সজ্জন ছিলেন। আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ উপলব্ধি করে বললেন— ‘আপনাদের ভাবনার কিছু নেই ‘।”
