স্মৃতি মুছে যাওয়ার ভয়ংকর অসুখ ডিমেনশিয়া! ঘরোয়া উপায়েই আটকান যায় এই মারাত্মক রোগকে

যে কেউ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। ভারতে প্রায় ৪০ লক্ষ লোক ডিমেনশিয়া সম্পর্কিত অসুখে ভুগছেন। বিশ্বে ভুগছেন ৫ কোটিরও বেশি মানুষ! নিষ্ঠুর এই অসুখে ধীরে ধীরে রোগীর সমস্ত স্মৃতি মুছে যেতে থাকে। খুব নিকটজনকেও মনে রাখতে পারেন না রোগী!

স্মৃতি মুছে যাওয়ার ভয়ংকর অসুখ ডিমেনশিয়া! ঘরোয়া উপায়েই আটকান যায় এই মারাত্মক রোগকে
ছবিটি প্রতীকী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 13, 2021 | 11:06 AM

ভারতে প্রায় ৪০ লক্ষ লোক ডিমেনশিয়া সম্পর্কিত অসুখে ভুগছেন। নিষ্ঠুর এই অসুখে ধীরে ধীরে রোগীর সমস্ত স্মৃতি মুছে যেতে থাকে। আসতে তাকে হতাশা, নিদ্রাহীনতা। এমনকী কেউ কেউ নিজের সন্তানকেও চিনতে পারেন না! ভয়ঙ্কর এক অসহায় পরিস্থিতি তৈরি হয়। শুধু তাই নয়। রোগীর মস্তিষ্কের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও লোপ পেতে শুরু করে। টয়লেট যাওয়া, খাবার খাওয়ার মতো সাধারণ কাজগুলোও আর রোগী নিজের থেকে করে উঠতে পারেন না। সম্পূর্ণভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। মুসকিল হল অসুখটি সারে না। চিকিৎসার মাধ্যমে সমস্যা কিছুটা আটকে রাখা যায় এই পর্যন্তই। উত্তোরত্তর রোগের জটিলতা বাড়ে। সমস্যা হল রোগটির কোনও আগাম উপসর্গ থাকে না। তাই ডিমেনশিয়া প্রতিরোধই হল হল একমাত্র সমাধান।

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের উপায়গুলি—

ডায়েট

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে ডায়েট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আলাদা কিছু খাদ্যবস্তু ডায়েটে যোগ করলে তা ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

১. ব্লুবেরি: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ব্লুবেরি এমনই এক খাদ্যবস্তু যা ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। কারণ ব্লুবেরিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ২. শাক: পালং শাক, পার্সলে পাতায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে চট করে স্মৃতিভ্রংশ রোগ আক্রমণ করতে পারে না। ৩. হলুদ: কারকিউমিন নামে উপকারী উপাদান থাকে হলুদে। কারকিুমিন স্মৃতিভ্রংশ রোগ আটকাতে সাহায্য করে। তাই রান্নায় প্রতিদিন হলুদের ব্যবহার জরুরি। ৪. ভিটামিন এ: ফ্রি র্যাযডিকালস বা বিষবৎ পদার্থ দ্বারা দেহের ক্ষতি হওয়া আটকায় ভিটামিন এ। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে গাজর ও পালংশাকে। ৫. ভিটামিন সি: এই ভিটামিন নানা ধরনের খারাপ পদার্থ দ্বারা শরীরে তৈরি হওয়া ক্ষতি আটকাতে সক্ষম। ভিটামিন সি নিজেই একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। টক ফল সহ প্রায় সব ফলেই ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ৬. ভিটামিন ই: ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম ভিটামিন ই। সূর্যমুখী তেল, কাজুবাদাম, চিনেবাদামে উপযুক্ত মাত্রায় ভিটামিন ই রয়েছে। ৭. ভিটামিন ডি: শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় ১২ শতাংশ পর্যন্ত! তাই প্রতিদিন ত্বকে অন্তত দশমিনিট রোদ লাগাতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ সূর্যালোক পড়লে ত্বকেই ভিটামিন ডি সংশ্লেষ হয়। ৮. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: ডায়েটে যোগ করা দরকার স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যথা অলিভ অয়েল, ডিম, চিয়াসীড, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো খাদ্য। যে কোনও বড়মাছের তেলে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিডের ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।

আরও পড়ুন: বর্ষায় থাবা বসাতে পারে ডায়েরিয়া! কী কী করবেন আর করবেন না, জানুন

৯. জিঙ্ক: বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন বহু ডিমেনশিয়ার রোগীই জিঙ্ক-এর ঘাটতিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তাই জিঙ্কযুক্ত খাদ্য প্রতিদিন খাওয়া দরকার। জিঙ্ক থাকে কুমড়োর বীজ, কালো চকোলেট, রাজমা, ছোলা, মটরশুঁটি, চিকেনে। ১০. বাদ সংরক্ষিত খাদ্য: প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাদ্য বা সংরক্ষিত খাদ্যগ্রহণ এড়িয়ে যেতে হবে। কারণ এই ধরনের খাদ্য শরীরে ফ্রি র্যা ডিক্যালস-এর মাত্রা বাড়ায় যা নানাভাবে মস্তিষ্কের নিউরোনের ক্ষতি করে। এই ধরনের খাদ্যের মধ্যে রয়েছে পাকেটজাত যে কোনও রেডি টু কুক খাদ্য। এছাড়া চিপসজাতীয় খাদ্য, কোল্ড ড্রিকসও এই ধরনের খাদ্যের মধ্যেই পড়ে। ১১. সনাতন খাদ্য: বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রতিদিন মাছ, পনির, দই, শাক-সব্জি, চিড়ে-মুড়ির মতো সাধারণ খাদ্য খেতে হবে। প্রচুর তেল মশলা দিয়ে কষিয়ে রান্না করা খাবার ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এড়িয়ে চলতে হবে পোড়ানো মাংস, অতিরিক্ত মাটন খাওয়ার অভ্যেস।

শরীর

১২. ব্লাড সুগার: ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সঙ্গে ডিমেনশিয়ার যোগসূত্রের প্রমাণ মিলেছে বলে কিছু গবেষক দাবি করছেন। গবেষণায় এও দেখা গিয়েছে নিয়মিত চিনি এবং মিষ্টিজাতীয় খাদ্য খাওয়ার অভ্যেস দ্রুত ডিমেনশিয়ায় ডেকে আনতে পারে। ১৩. শরীরচর্চা: দেখা গিয়েছে প্রতিদিন মাত্র ১৩ মিনিট এক্সারসাইজ করলেও পরবর্তী জীবনে ডিমেনশিয়া হওয়ার আশঙ্কা কমে। এমনকী ডিমেনশিয়া দেখা দেওয়ার পরেও প্রতিদিন এক্সারসাইজ করলেও রোগের অগ্রগতি অনেকটাই ধীর করে দেওয়া সম্ভব। আবার, প্রতিদিন ৩৫ হনহনিয়ে ঘাম ঝরিয়ে হাঁটলেও ভবিষ্যতে ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

আরও পড়ুন: ওয়ার্ক ফ্রম হোমে ঘাড়-পিঠ-কোমরে তীব্র ব্যথা? কমিয়ে ফেলুন সহজ উপায়ে

মানসিক

১৪. স্ট্রেস: দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে ভুগলে ডিমেনশিয়া দেখা দেওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই প্রতিদিন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। ধ্যান করুন। বিনোদনমূলক কাজও করুন। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করলে ডিমেনশিয়া হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। ১৫. ঘুম: দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুমোলে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। কারণ ঘুমের সঙ্গে স্মৃতির একটা বড় যোগযোগ রয়েছে। ঘুমোনোর সময়েই আমাদের কোন স্মৃতি জমা হয়ে থাকবে তা ঠিক করা হয়। ফলে প্রথম থেকে সঠিক মাত্রায় ঘুমের অভ্যেস ঠেকাতে পারে ডিমেনশিয়ার সমস্যা।

কুঅভ্যেস ত্যাগ

১৬. মদ্যপান: অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবেই দেহের পক্ষে বিষ। মদ্যপান করলেই শরীরকে প্রচুর খাটতে হয় স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য। দেখা গিয়েছে প্রতিদিন মদ্যপান করলে তা ব্রেনের কোষগুলির দ্রুত মৃত্যু ঘটাতে পারে। এছাড়া বিচার বুদ্ধির জন্য ব্রেনের সামনের অংশ বা ফ্রন্টাল লোব দায়ী থাকে। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানে ফ্রন্টাল লোবের প্রভূত ক্ষতি হয়। এমনকী দ্রুত ডিমেনশিয়া দেখা দেওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই মদ্যপানের অভ্যেস আশু ত্যাগ করতে হবে। ১৭. ধূমপান: ধূপমানের অভ্যেসের সঙ্গে ডিমেনশিয়া হওয়ার যোগ মিলেছে বলে বেশ কিছু গবেষণায় জানা গিয়েছে। সৃজনশীল কাজ করুন ১৮. ডিমেনশিয়া ঠেকাতে বিশেষজ্ঞরা বারবার বই পড়া ও ছবি আঁকার মতো সৃজনশীল কাজ করতেও উৎসাহ দিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রতিদিন বই পড়া ও তা নিয়ে আলোচনা করার মতো অভ্যেস মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখে।