AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Hair Transplant: হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করতে গিয়ে মৃত্যু ৩০ বছরের যুবকের! কতখানি ঝুঁকির?

Hair Transplants in India: ভারতীয় এক টেলিভিশন চ্যানেলের কর্মী আথার রশিদ। নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ৩০ বর্ষীয় যুবক আথার গিয়েছিলেন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে। আর তাতেই ঘটল ভয়ঙ্কর পরিণতি! কেন এমন হল? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

Hair Transplant: হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করতে গিয়ে মৃত্যু ৩০ বছরের যুবকের! কতখানি ঝুঁকির?
| Edited By: | Updated on: Dec 04, 2022 | 4:13 PM
Share

সেই প্রাচীনকাল থেকেই মহিলাদের বাহ্যিক রূপই তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে মেনে আসা হচ্ছে। তবে ভারতীয় বস্তুবাদী সমাজে পুরুষরাও বাহ্যিক সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে বিচার্য হয়ে ওঠেন কোনও কোনও সময়। বিশেষ করে কোনও পুরুষের টাক থাকলে তাকে টাকলু, টেকো ইত্যাদি সম্বোধনে বিশেষিত করার একটা চল রয়েছে এই সমাজে। কর্মক্ষেত্র হোক বা বন্ধুমহল, বারবার টাক নিয়ে পরিহাসের শিকার হতে হয় ওই ব্যক্তিকে। তাছাড়া পরিবর্তনশীল ভারতীয় সমাজে আজকাল একজন ব্যক্তির জ্ঞানবুদ্ধির চাইতেও বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং দৃষ্টিনন্দন উপস্থিতির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। এই কারণেই মাথায় চুল না থাকলে অনেক পুরুষই ভুগছেন আত্মবিশ্বাসের অভাবে। কারণ তাঁর মনে হচ্ছে, মাথাজোড়া টাক তার সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে।

বাস্তবেও কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বিয়ের জন্য পাত্রী পাওয়াও অসম্ভব হয়ে যায় টাক থাকলে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে টাকের সমস্যার নানা সমাধান বেরিয়েছে। এমনই একটি সমাধান হল হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট। আর তাই অনেকেই এখন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে ফাঁকা মাথা ভরিয়ে ফেলছেন ফুরফুরে চুলে। এক ভারতীয় টেলিভিশনের কর্মী আথার রশিদও চেয়েছিলেন তাঁর ফাঁকা মাথা ভরে যাক চুলে। চেহারা হয়ে উঠুক আরও আকর্ষণীয়। বিয়ে হোক মনের মতো পাত্রীর সঙ্গে। সেই উদ্দেশ্যেই এক ক্লিনিকে তিনি গিয়েছিলেন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে। রশিদ ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি। তাঁর কাঁধে ছিল অনেক বড় দায়িত্ব। তিনি চেয়েছিলেন একটা বাড়ি কিনতে। তাঁর দুই বোনের বিয়ে দিতে!

রশিদের মা, ৬২ বর্ষীয় আশিয়া বেগম জানিয়েছেন, গত বছর হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করানোর পরেই রশিদ সেপসিসে আক্রান্ত হন। মাথা ফুলে যায় এবং সেই ফোলাভাব ছড়িয়ে পড়তে থাকে। রশিদ প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিলেন। সংবাদকর্মীদের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ে রশিদের মা বলেন, ‘আমার ছেলে খুব যন্ত্রণা সহ্য করে মারা গিয়েছে। ওর কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। বাকি অঙ্গও বিকল হয়ে গিয়েছিল।’ তিনি কিছু ফটোও দেখান রশিদের। দেখা যায়, রশিদের সারা মুখ ফুলে গিয়েছে। সারা শরীরে ফুটে উঠেছে কালো র‌্যাশ। রশিদের পরিবার থানায় অভিযোগও করেন।

চারজন ব্যক্তি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করেন রশিদের। এদের মধ্যে দু’জন ছিলেন পুরুষ। প্রত্যেককেই পুলিশ ইতিমধ্যেই আটক করেছে। আদালতে শুনানির জন্য অপেক্ষা করছে তারা। ‘আমার সন্তান অসহ্য যন্ত্রণা পেয়ে তিলে তিলে মারা গিয়েছে।’— দিল্লির ছোট্ট এক কামরার ভাড়ার ঘরে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন রশিদের মা। তিনি আরও বলেন, ‘আমি সন্তান হারিয়েছি। তবে কিছু ভুয়ো লোকের অসাধু কাজের জন্য যাতে আর কোনও মা সন্তান না হারাক তা আমি চাই না।’ দক্ষ সার্জেনের হাতে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট অনেকেরই জীবন পরিবর্তন করে দেয়। আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে পুরুদমে। বিশেষ করে বহু ভারতীয় যুবকই এভাবে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে ফিরে পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস ও সাফল্য।

সমাজবিদরা জানাচ্ছেন, ভারতীয় জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটেছে। বহু যুবকই বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং দৃষ্টিনন্দন উপস্থিতির বিষয়ে সজাগ হয়ে উঠেছেন আগের চাইতে অনেক বেশি। এতদিন সমাজে মহিলাদের গ্রহণযোগ্যতা সীমাবদ্ধ ছিল তাদের রূপের উপর। তবে কাঁটা ক্রমশ ঘুরছে। এই কারণেই হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টে আগ্রহী হয়ে উঠছেন পুরুষরা। অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসংযমী জীবনযাপন, সুষম খাদ্যের অভাব, ধূমপান, মদ্যপানের মতো সমস্যা কম বয়সে চুল পড়ে যাওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ। একবার টাক পড়ে গেলে পুনরায় চুল গজানো অসম্ভব হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সমাধানের পথ দেখাতে পারে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট প্রক্রিয়ায়, মাথার যেখানে ঘন চুল থাকে সেখান থেকে হেয়ার ফলিকল তুলে ফাঁকা অংশে লাগানো হয়। সাধারণত মাথার পিছনদিকের চুল ওঠে না। হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট প্রক্রিয়ায় মাথার পিছন থেকে ফলিকল শুদ্ধ চুল তুলে টাকের অংশে লাগানো হয়। মাসে গড়ে ১৫টি হেয়ায় ট্রান্সপ্লান্ট করেন এমন একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে আসা বেশিরভাগ রোগীর বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। মূলত নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে, পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে ও বিয়ে করার উদ্দেশ্যে তাঁরা হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করান।

হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করাতে খরচ হতে পারে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত! অথচ অবাক করার মতো বিষয় হল, এদেশে প্রতিদিন ২ ডলারের (প্রায় ১৬৩ টাকা) কম খরচে দিন গুজরান করেন কোটি কোটি মানুষ। অর্থাৎ কোথাও না কোথাও নিজের অবস্থার উন্নতির চাইতেও বাহ্যিক সৌন্দর্য অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়ছে ভারতীয় যুব সমাজের কাছে! আর এই দুর্বলতারই সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। চিকিৎসকরা বলছেন, কিছু কোয়াক ডাক্তার এবং অনলাইন ভিডিও প্লাটফর্ম থেকে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট শেখা ব্যক্তি এই প্রক্রিয়াটির বদনাম করছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, ‘সাধারণ মানুষের ধারণা, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতি সম্পূর্ণ ঝুঁকিহীন একটি প্রক্রিয়া। অথচ এই সার্জারিতে সময় লাগে অনেকখানি। প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টাও লেগে যায়।’ বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ‘প্রভূত পরিমাণে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া প্রয়োগ করা হয়। কিছু সময় অন্তর তাই রোগীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করার দরকার পড়ে। সমস্যা হলে দিতে হয় কিছু দরকারি ওষুধ। ফলে যে সকল ব্যক্তির এই ডাক্তারি জ্ঞান নেই বা পরিস্থিতির অবনমন হচ্ছে কি না তা বোঝার মতো অভিজ্ঞতা নেই, তাঁর কাছে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করানো বিপজ্জনক হতে পারে।’

অথচ ব্যাঙের ছাতার মতো দেশের নানা জায়াগায় এখন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট ক্লিনিক গজিয়ে উঠেছে। তাঁরা খরচেও নানা ছাড় দিচ্ছে। কম খরচে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের প্রলোভনে পা দিচ্ছেন বহু যুবক-যুবতী। ফলে চিকিৎসক ছাড়াই সেখানে অবৈধভাবে হচ্ছে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট প্রক্রিয়া যা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসকদের। ভারতীয় জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন ইতিমধ্যেই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিচার করছে। কমিশেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউটিউবে বা ওইজাতীয় কোনও প্লাটফর্মে কর্মশালা দেখে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের মতো দক্ষতা অর্জন করা যায় না। একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ চিকিৎসকদেরই এই কাজ করা উচিত।

(Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।)