Heat Wave: শুধু শরীরকেই কাহিল করে না তাপপ্রবাহ, বাড়ায় বিষণ্ণতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতাও
Mental Health: এই তাপপ্রবাহে শারীরিক কষ্ট তো আছেই। সেই সঙ্গে কতটা পড়ছে মানসিক প্রভাবও? 'শহরের উষ্ণতম দিনে' এরই উত্তর খুঁজল TV9 বাংলা।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছে চলতি বছরের মার্চ মাসে। আজ ২৭ এপ্রিল। কলকাতায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলেছে পারদ। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রামের মতো জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই পারদ ৪৩ ছুঁয়েছে। আর এর সঙ্গে চলছে তাপপ্রবাহ (Heat Wave)। আবহাওয়া দফতরের তরফে সতর্কতা বার্তা জারি করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে আগামী কয়েক দিনেও চলবে এই তাপপ্রবাহ। এখন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটাই প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যবাসীর। এমতাবস্থায় জল আর মরসুমি ফলের ওপর ভরসা রাখতে বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। ‘লু’-এর প্রকোপ এড়াতে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু এইসব কিছুর মাঝে আমরা কি কোনও ভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে (Mental Health) এড়িয়ে চলছি?
চলতি মাসের প্রথমেই স্থিতিশীল হয়েছে করোনাবিধি। দগ্ধ দিনে পিঠে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। ঝলসানো গরমে বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে পৌঁছতে হচ্ছে অফিসে। এতে শারীরিক কষ্ট তো আছেই। সেই সঙ্গে কতটা পড়ছে মানসিক প্রভাবও? ‘শহরের উষ্ণতম দিনে’ এরই উত্তর খুঁজল TV9 বাংলা।
TV9 বাংলা যোগাযোগ করে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. ঊর্মি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, “তাপপ্রবাহে মূলত শারীরিক কষ্টটাই বেশি। এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। তবে, এতে যে কোনও মানসিক চাপ তৈরি হয় না, তা নয়। এই বিষয়টি মূলত ব্যক্তি বিশেষে নির্ভর করে।” তবে তাঁর মতে, আবহাওয়া কখনওই মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে না। কেউ যদি না খুব বেশি আমাদের পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত হন, তাহলে এই বিষয় মানসিকভাবে কোনও ক্ষতি করে না। তিনি আরও জানান যে, এই তাপপ্রবাহের মধ্যে রাস্তায় বেরোতে হচ্ছে। রোদে কাজ করতে হচ্ছে, এতে একটা মানসিক চাপ তৈরি হয়। কিন্তু এখানে শারীরিক কষ্ট বেশি। সেই শারীরিক কষ্টটাই আদতে মনের ওপর প্রভাব ফেলে।
আমেরিকান সাইক্রিয়াটিক অ্যাসোশিয়ানের মতে, তাপমাত্রার বৃদ্ধির কারণে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। এখান থেকে অনেক সময় মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ে। বহু বছর ধরে করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, তাপমাত্রার বৃদ্ধি মেজাজ পরিবর্তন, বিষণ্ণতার লক্ষণ এবং আত্মহত্যার প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়। আর যাঁরা ইতিমধ্যেই কোনও মানসিক রোগের শিকার, তাঁদের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
‘ডাউন টু আর্থ’ নামক জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের বক্তব্য, ২০২২-এর উষ্ণতম মাসে ৫-১০ শতাংশ ম্যানিক পর্যায়ে বাইপোলার ডিজ়অর্ডারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই সমস্যা জুন মাসের শেষ অবধি চলবে। না, বাইপোলার ডিজ়অর্ডারের সঙ্গে জলবায়ুর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে এই অত্যধিক গরমে লিথিয়াম নামক একটি মেজাজ স্থিতিশীলকারী এজেন্ট প্রভাব ফেলে বাইপোলার রোগীদের ওপর। এর ফলে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় অথবা লিথিয়ামের বিষাক্ততার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
গত বছর জুলাই মাসে কানাডার তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এতে মৃত্যুও হয় বহু মানুষের। এরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত একটি গবেষণার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, যখন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করছে, তখন মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আরেকটি গবেষণার রিপোর্টে বলা হয়েছে, মেক্সিকোয় গত কয়েক দশকে যখনই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, আত্মহত্যার হার ২.১ শতাংশ বেড়েছে।
ভেবে দেখেছেন, এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি, তাপপ্রবাহের পিছনে কোন কারণগুলি দায়ী? দিনের পর দিন ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে জলাশয়, অরণ্য। জঙ্গলের পর জঙ্গল নির্বিচারে গাছ কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে। জলাশয় বুজিয়ে নগরায়ণ হচ্ছে। এগুলোই তো আজকের এই উষ্ণতম দিনের জন্য দায়ী। এমন উদ্বেগের বিষয় কি আপনার মনে জায়গা তৈরি করে না?
দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার ফলে খরার পরিস্থিতি তৈরি হয়। জলের জন্য হাহাকার। বিঘের পর বিঘে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলস্বরূপ মূল্যবৃদ্ধি। এখানে ঋণের দায়ে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাও কোনওভাবে এড়ানো যায় না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর তাপপ্রবাহের কারণে আর্থ-সামাজিক চাপ তৈরি হয়। এটাও তো কোথাও গিয়ে তৈরি করে মানসিক চাপ। জানেন তো জীবনযাত্রার মান মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে! সুতরাং এখানে দায় এড়াবেন কীভাবে?
আরও পড়ুন: ঝলসানো গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী-কী খাবেন?
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহ থেকে শিশুদের বাঁচাতে কী-কী করণীয়, কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক