প্যাংক্রিয়াসের প্রধান কাজ হল খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করা আর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু যদি এই প্যাংক্রিয়াসে কোনও রকম সমস্যা দেখা দেয়, বিপদ তখনই ঘটে। প্যাংক্রিয়াসের সংক্রমণ বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহকে প্যাংক্রিয়াটাইটিস বলে। প্যাংক্রিয়াসের প্রধান তিনটি রোগ হল প্যাংক্রিয়াটাইটিস, প্যাংক্রিয়াসে ক্যান্সার এবং ডায়বেটিস। মূলত আমরা প্যাংক্রিয়াটাইটিস নিয়ে আলোচনা করব।
প্যাংক্রিয়াটাইটিস দু রকম হতে পারে। অ্যাকিউট (হঠাৎ) এবং ক্রনিক (দীর্ঘস্থায়ী) প্যাংক্রিয়াটাইটিস। এগুলো কম বা বেশ যে কোনও বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা দিতে পারে। অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসে রোগীর পেটের অপরের দিকে তীব্র ব্যথা হয় যা পিঠের দিকেও চলে যেতে পারে। রোগীর জ্বর আসতে পারে এবং বমি হয়। রোগী শুয়ে থাকতে পারে না। সামনে ঝুঁকে বসলে আরাম পায়। পেটে গ্যাস ভর্তি হয়ে ফুলে যায়। আর যদি এই প্যাংক্রিয়াটাইটিস তীব্র হয় তাহলে রোগীর শ্বাসকষ্ট, কিডনি ফেলিওর এবং জন্ডিস দেখা দিতে পারে।
প্যাংক্রিয়াটাইটিসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীর শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে যাকে সেপসিস বলে। অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে যান। তবে যাদের তীব্র প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয় তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীর পরিণতি মৃত্যু হয়। ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস হলে অস্বাভাবিক ব্যথা, খাবার খাওয়ার পর ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া, স্টেটোরিয়ার মত একাধিক লক্ষণ দেখা যায়।
অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের প্রধান কারণগুলির মধ্যে প্রথমেই রয়েছে অ্যালকোহল। কেউ একবার বেশিমাত্রায় অ্যালকোহল খেলেও প্যাংক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। আর যাঁরা নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করেন তাঁদের এই রোগ হতে বাধ্য, তখন সেটা ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিসে গিয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া দ্বিতীয় কারণ হল গলস্টোন। গলগ্লাডারের পাথর এবং পিত্তের মধ্যে থাকা ছোট ছোট গুঁড়ো পিত্তনালীতে এসে ব্লক করে প্যাংক্রিয়াটাইটিস সৃষ্টি করে।
এছাড়া সংক্রমণের মধ্যে মাম্পস, কক্স-সাকি-বি এন্টোরো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মিজিলস, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড থেকে প্যাংক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। এমনকি অ্যান্টিবায়োটিক, ক্যান্সারের ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধ, ব্যথার ওষুধ, অমাশয়ের ওষুধ এবং টিবির ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবেও প্যাংক্রিয়াটাইটিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মোটা মানুষদের ক্ষেত্রে অনেক সময় রক্তের লিপিডের গন্ডগোলের জন্য প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয়। গোলকৃমি পিত্তনালী বা অগ্ন্যাশয়ের নালীতে ঢুকে গেলেও প্যাংক্রিয়াটাইটিসের সমস্যা দেখা দেয়। তাছাড়া জিনগত কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে, তবে এর সম্ভাবনা অনেক কম এবং রোগের ইতিহাস প্রথমেই জানা গেলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।
আরও পড়ুন: গম ঘাস খাওয়া ঠিক কতটা স্বাস্থ্যকর? বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এটা ক্ষতিকরও হতে পারে…
আরও পড়ুন: ভারী কিছু তুলতে গেলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে? ওবেসিটির কবলে পড়লেন না তো!
আরও পড়ুন: বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীর আরোগ্যে পরিবশ স্বাস্থ্যের অগ্রাধিকারই শ্রেষ্ঠ দাওয়াই!