Balasore Train Accident Survivors: কারোর চোখের পাতা এক হচ্ছে না, কেউ হাসছে পাগলের মতো! করমণ্ডল দুর্ঘটনায় আহতদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আতঙ্ক
Post Traumatic Stress Disorder: আহতদের মধ্যে যাঁরাই পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসওর্ডারে ভুগছেন, তাঁরা অধিকাংশই ঘুমাতে পারছেন না। ঘুমিয়ে পড়লেও দুর্ঘটনার স্বপ্ন দেখছেন এবং ভয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ছেন। কেউ কেউ একা বসে কাঁদছেন, কেউ আবার হাসছেন।

ভুবনেশ্বর: প্রচণ্ড শব্দ, একটা বিকট ঝাঁকুনি। তারপরই তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল সবকিছু। চোখ খুলতেই দেখেছিলেন লাশের পাহাড়। কেউ হাজারো ডাকাডাকি করেও প্রিয়জনের সাড়া পাননি। কেউ আবার নিজের চোখেই সহযাত্রীকে ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছেন। বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায় ( Balasore Train Accident) প্রাণে রক্ষা পেলেও, আহত যাত্রীদের নিত্যদিন তাড়া করছে আতঙ্ক। শারীরিক আঘাতের পাশাপাশি মনেও তৈরি হয়েছে গভীর ক্ষত। তাদেরই চিকিৎসা করছেন কটকের এসসিবি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
গত ২ জুন ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে বাহানগায় যে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে, তাতে ২৮৮ জনের মৃত্য়ু হয়। আহত হন ৭০০-রও বেশি যাত্রী। আহতদের মধ্যে ১০৫জন যাত্রীকে ভর্তি করানো হয়েছিল কটকের এসসিবি মেডিক্যাল কলেজে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই ১০৫ জন আহতের মধ্যে প্রায় ৪০ জন রোগীর মধ্যেই দুর্ঘটনার কারণে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসওর্ডারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। শারীরিকভাবে সুস্থ করে তোলার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে দুর্ঘটনায় আহত সকলেরই কাউন্সেলিং শুরু করা হয়েছে।
এসসিবি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ যশবন্ত মহাপাত্র বলেন, “এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর, যাঁরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মস্তিষ্কে এই ধরনের চাপ, ভয়-আতঙ্ক তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক। এটিকে চিকিৎসার পরিভাষায় পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসওর্ডার বলা হয়। আহতদের মধ্য়ে অধিকাংশই অত্যন্ত উদ্বিগ্ন বা ভীত কিংবা আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন। কেউ কেউ আবার সম্পূর্ণ চুপ হয়ে গিয়েছেন। আমরা তাঁদের কাউন্সেলিং শুরু করেছি। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি আমরাও কথা বলার চেষ্টা করছি।”
ডঃ মহাপাত্র জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে করমণ্ডল ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের কাউন্সেলিং করানোর জন্য চারটি চিকিৎসকের দল তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি দলে একজন মনোবিদ, মনোস্তাত্ত্বিক, সমাজকর্মী ও আহতের পরিবারের এক বা দুইজন সদস্যকে রাখা হয়েছে। তাঁরা কথা বলে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন আহতদের।
কী কী উপসর্গ দেখা যাচ্ছে?’
আহতদের মধ্যে যাঁরাই পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসওর্ডারে ভুগছেন, তাঁরা অধিকাংশই ঘুমাতে পারছেন না। ঘুমিয়ে পড়লেও দুর্ঘটনার স্বপ্ন দেখছেন এবং ভয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ছেন। কেউ কেউ একা বসে কাঁদছেন, কেউ আবার হাসছেন। ২৩ বছরের এক যুবক, দুর্ঘটনায় যাঁর হাত ও পা ভেঙে গিয়েছে, সে দিন হোক বা রাত-কখনওই ঘুমোতে পারছে না। দুর্ঘটনার পর তিন-চার ঘণ্টা সিটের নীচে চাপা পড়েছিল ওই যুবক। এখন সে চোখ বন্ধ করলেই সামনে ভেসে ওঠে দুর্ঘটনার মুহূর্ত।
আরেক যুবক দুর্ঘটনায় তাঁর বন্ধুকে চিরতরে হারিয়েছে। কিন্তু এখনও সে সত্যটা মেনে নিতে পারছে না। ঘুমের মধ্যে বারবার ডেকে উঠছে বন্ধুকে, ঘুম থেকে উঠেও খুঁজছে তাঁকে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আহতরা সকলেই সুস্থ হয়ে উঠবেন যদি সঠিক চিকিৎসা হয়।
