Assam Police: অসমে পুলিশের গুলিতে জখম প্রাক্তন ছাত্রনেতা, তদন্তের নির্দেশ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার
Police firing in Assam: পুলিশের দাবি, নগাঁও কলেজের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কীর্তি কামাল বোরা শনিবার মাদক বিক্রি করছিল এবং সে পুলিশের উপর হামলার পরই তার পায়ে গুলি করা হয়।
গুয়াহাটি: অসমের নগাঁও জেলায় পুলিশের (Assam Police) গুলিতে এক প্রাক্তন ছাত্র নেতা আহত হয়েছেন। আর এই ঘিরেই কার্যত তোলপাড় হচ্ছে অসম। যদিও পুলিশ ওই প্রাক্তন ছাত্র নেতাকে মাদক ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করছে। বিরোধী দলগুলি এই ঘটনাকে রাজ্যে ‘জঙ্গলরাজ’-এর ফল বলে মন্তব্য করছে। তাঁদের বক্তব্য, পরিস্থিতি নব্বইয়ের দশকের ‘গোপন হত্যাকাণ্ডের’ চেয়েও খারাপ। উল্লেখ্য, “গোপন হত্যাকাণ্ড” শব্দবন্ধটি অসমের রাজনীতিতে ১৯৯০-এর দশকে উলফা নেতাদের পরিবারের সদস্যদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের কথা বোঝায়। এদিকে পুলিশের দাবি, নগাঁও কলেজের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কীর্তি কামাল বোরা শনিবার মাদক বিক্রি করছিল এবং সে পুলিশের উপর হামলার পরই তার পায়ে গুলি করা হয়। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himant Biswa Sarma)।
অন্যদিকে, অল অসম স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (AASU) অভিযোগ কয়েকজন পুলিশকর্মী মদ্যপ অবস্থায় এক যুবককে মারধর করছিল। সেই সময় বোরা পুলিশকর্মীদের প্রতিবাদ করতে গেলে তারা ক্ষুব্ধ হয়। বোরার মা এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলি চালানোর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন। ঘটনায় জড়িত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে নগাঁও থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পুলিশের শীর্ষ কর্তারা তাদের থানার মূল প্রবেশ পথ আটকে না থেকে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার জন্য বলেন।
কী বলছে অসম পুলিশ?
গুলিবিদ্ধ ওই প্রাক্তন ছাত্রনেতার পরিবার ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও অভিযোগের জবাবে অসম পুলিশ টুইট করেছে, “নগাঁওতে গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত পুলিশকর্মীদের অবিলম্বে ‘পুলিশ রিজার্ভ’-এ পাঠানো হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে এই ঘটনার কমিশনার পর্যায়ের তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছি। যদি কোনও ত্রুটি থাকে, তবে সেই পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নগাঁও পুলিশ সুপার আনন্দ মিশ্র বলেছেন, পুলিশ কী পরিস্থিতিতে কাজ করেছে তা জানতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি তদন্ত করবেন।
তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আমি জানতে পেরেছি যে কয়েকজন বাইক আরোহী মাদক বিক্রি করছে বলে পুলিশ খবর পেয়েছিল। সাদা পোশাকের দুই পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে, ওই যুবক তাদের জিজ্ঞাসা করে যে তারা পুলিশ কিনা। তাঁরা হ্যাঁ উত্তর দিলে অভিযুক্তরা এক পুলিশকর্মীকে হেলমেট দিয়ে আঘাত করে। ওই পুলিশকর্মী আহত হন। আশেপাশে উপস্থিত পুলিশের একটি দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হলে সে তাদের ওপর হামলা চালায়। আর কোনও উপায় না থাকায় পুলিশ গুলি চালায়। তার কাছ থেকে আট শিশি হেরোইন পাওয়া গিয়েছে।
ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে অল অসম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন
বোরা নগাঁও কলেজের অল অসম স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ছাত্রনেতা ছিলেন। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা সমুজ্জল কুমার ভট্টাচার্য এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার প্রকাশ্যে খুনের পরিবেশ তৈরি করছে। আমরা এ ধরনের বর্বরোচিত কাজ বন্ধ করার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দিচ্ছি। পুলিশ সুপার এবং অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের সময় মুখ্যমন্ত্রী কি তাদের নিরপরাধ মানুষকে গুলি করার নির্দেশ দেন?”
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা রিপুন বোরা টুইট করেছেন, ‘অসমে পুলিশের জঙ্গলরাজ চলছে। নগাঁও কলেজের প্রাক্তন ছাত্রনেতা কীর্তি কামাল বোরার ওপর পুলিশের গুলি চালানোর তীব্র নিন্দা জানাই। এটি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উস্কানিমূলক মন্তব্যের ফল। নগাঁও পুলিশ সুপারকে শীঘ্রই বরখাস্ত করা উচিত।”
শিবসাগরের বিধায়ক গগৈ বলেছেন, “গোপন হত্যাকাণ্ডের (নব্বইয়ের দশকের) সময়ের চেয়েও আরও খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরা দাবি করি যে নগাঁও পুলিশ সুপার এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত পুলিশ আধিকারিককে একজন নিরপরাধ যুবককে হত্যার চেষ্টা করার জন্য গ্রেফতার করা উচিত।”
আরও পড়ুন : West Bengal BJP : ‘বিজেপি বাঁচাও আন্দোলন’ জারি বিক্ষুব্ধদের, শোকজের পরেও জয়প্রকাশ-শান্তনু বৈঠক