‘দমবন্ধ’ দিল্লি! লকডাউনেও বাগ মানেনি বায়ুদূষণ, এক বছরেই মৃত ৫৪ হাজার

দেশে বায়ুদূষণের নিরিখে তালিকার শীর্ষেই দিল্লির নাম রয়েছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গতবছরে বায়ু দূষণের কারণে দিল্লি(Delhi)-তে ৫৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই রয়েছে বাণিজ্যনগরী মুম্বই (Mumbai)-র নাম। সেখানে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

'দমবন্ধ' দিল্লি! লকডাউনেও বাগ মানেনি বায়ুদূষণ, এক বছরেই মৃত ৫৪ হাজার
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Feb 20, 2021 | 6:26 PM

নয়া দিল্লি: কেবল দেশের রাজধানীই নয়, দিল্লিকে “দূষণের রাজধানী” বললেও ভুল বলা হবে না। গত বছরে করোনা (COVID-19) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে লকডাউন (Lockdown) জারি করেছিল কেন্দ্র। বায়ু দূষণে (Air Pollution) যেখানে দিল্লির আকাশই দেখা যেত না, লকডাউনের সময় আকাশ পরিষ্কার হতেই খুশি হয়ে গিয়েছিলেন দিল্লিবাসী। কিন্তু আন্তর্জাতিক একটি পরিবেশ সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কেবল দেশই নয়, বিশ্বের নিরিখেও সবচেয়ে দূষিত রাজ্য হল দিল্লি (Delhi)। গতবছরে বায়ুদূষণের (Air Pollution) কারণেই রাজধানীতে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪ হাজার মানুষ।

বায়ুদূষণের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় শীর্ষে রয়েছে দিল্লি। দূষণ নিয়ন্ত্রণে কেজরীবাল সরকারের তরফে জোড়-বিজোড় নীতির মতো নানা প্রকল্প আনা হয়েছিল। কিন্তু আখেরে লাভ খুব একটা হয়নি। দিল্লির বাতাস “অতি বিপজ্জনক” থেকে “বিপদজনক” মাত্রার মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে। তবে লকডাউনের সময় যান চলাচল বন্ধ থাকায় দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছিল। লকডাউনের নিয়ম শীথিল হতেই ফের পুরনো চিত্রই দেখা গিয়েছে রাজধানীতে, যেখানে কুয়াশার সঙ্গে ধোয়া মিলিয়ে তৈরি হয়েছে “স্মগ” (Smog)।

দেশের দূষণ তালিকা:

গ্রিনপিস সাউথ-ইস্ট এশিয়া (Greean Peace South-East Asia) নামক একটি সংস্থা ২০২০ সালে দেশ তথা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহরগুলির বায়ুদূষণের উপর একটি সমীক্ষা করা হয়। দেশে বায়ুদূষণের নিরিখে তালিকার শীর্ষে স্বাভাবিকভাবেই দিল্লির নাম রয়েছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গতবছরে বায়ু দূষণের কারণে দিল্লিতে ৫৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই রয়েছে বাণিজ্যনগরী মুম্বই (Mumbai)-র নাম। সেখানে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। “গার্ডেন সিটি” হিসাবে পরিচিত বেঙ্গালুরু (Bengaluru)-তেও দূষণের সূচক উর্ধ্বমুখীই। ২০২০ সালে সেই রাজ্যে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুন: আফ্রিকার সিংহ, কোমোডো ড্রাগন! বিশ্বের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা বানাচ্ছেন অম্বানী

বিশ্বের নিরিখে দূষিত শহরের তালিকা:

কেবল দেশের নিরিখেই নয়, বিশ্বের নিরিখেও জনবহুল শহরগুলির মধ্যে বায়ুদূষণের সূচকের তালিকাতেও শীর্ষে রয়েছে দিল্লি। এরপরে নাম রয়েছে মেক্সিকো (Mexico)-র। বিশ্বের পাঁচটি দূষিত দেশের মধ্যে রয়েছে সাও পাওলো (Sao Paolo), সাংহাই (Shanghai) ও টোকিয়ো(Tokyo)-র নামও। গ্রিনপিসের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দিল্লির জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি, সেখানে গতবছরে আনুমানিক ৫৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। মেক্সিকোর জনসংখ্যা ২.২ কোটি, তবে সেখানে মৃতের সংখ্যা কিছুটা কম, গতবছরে আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সাও পাওলোর জনসংখ্যাও মেক্সিকোরই সমান, আশ্চর্যভাবে মৃতের সংখ্যাও একই, অর্থাৎ গতবছরে আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে সাও পাওলোয়। সাংহাই শহরের জনসংখ্যা আবার ২.৬ কোটি, সেখানে আনুমানিক মৃত্যুর হার ৩৯ হাজার। টোকিয়োতেও গতবছরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বের পাঁচটি সর্বাধিক জনবহুল শহর মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষের অকালে মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে।

বিগত বছরে বিশ্বের জনবহুল শহরগুলিতে মৃত্যুর হার। অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস।

লক্ষাধিক মৃত্যুর পিছনে আসল কারণ?

সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বাতাসে পিএম ২.৫ কণা (PM 2.5 Particle)-র অত্যাধিক উপস্থিতিই সাধারণ মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, বাতাসে উপস্থিত পিএম ২.৫ কণা দেহের পক্ষে সবচেয়ে ক্ষতিকর। এটি সরাসরি ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডে আক্রমণ করে। সুস্থ মানুষের মধ্যে যেমন শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এই ক্ষতিকর বায়ুকণা, তেমনই করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর আশঙ্কাও বাড়িয়ে দিতে পারে পিএম ২.৫ কণা।

লকডাউনের কারণে গোটা বিশ্বজুড়েই বায়ু দূষণ সহ অন্যান্য দূষণের মাত্রা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছিল। তবুও আটকানো যায়নি লক্ষাধিক মৃত্যু। সেই কারণেই গ্রিনপিস সংস্থার তরফে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে জ্বালানির বদলে অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহারের আবেদন জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে গ্রিনপিস ইন্ডিয়ার এক প্রতিনিধি তথা আবহাওয়া আন্দোলনকারী অবিনাশ চঞ্চল বলেন, “সরকার অপ্রচলিত শক্তির বদলে কয়লা, তেল ও গ্যাসকে বেছে নেয়। আর সেই মূল্যই চোকাতে হয় আমাদের স্বাস্থ্যকে।” গ্রিনপিসের বায়ু দূষণ গবেষক এইডান ফ্যারো জানান, দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারগুলির উচিত নতুন করে কয়লা প্ল্যান্ট তৈরি না করা। একইসঙ্গে প্রচলিত শক্তি, যেখানে দূষণের মাত্রা বেশি, তা বর্জন করে বায়ু ও সৌরশক্তির মতো বিকল্প শক্তির ব্যবহার করা।

আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই রাজ্য বাজেট হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী