কেন্দ্রীয় বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই রাজ্য বাজেট হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী

রাজ্যগুলিকে সহযোগিতার বার্তা দিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) বলেন, "করোনাকালে আমরা দেখেছি কেন্দ্র ও রাজ্য কীভাবে মিলিত হয়ে কাজ করেছে। সেই কারণেই গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের একটি উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে।"

কেন্দ্রীয় বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই রাজ্য বাজেট হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী
নীতি আয়োগের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
Follow Us:
| Updated on: Feb 20, 2021 | 3:35 PM

নয়া দিল্লি: “দেশের সার্বিক উন্নতিতে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” নীতি আয়োগের বৈঠকে (NITI Aayog Meeting) এমনটাই জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে নীতি আয়োগের ষষ্ঠ দফার বৈঠক ভার্চুয়াল মাধ্যমেই আয়োজন করা হয়। শনিবার বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, নীতি আয়োগের সদস্যদের নিয়ে আলোচনায় বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে এই প্রথম বৈঠকে অংশ নিল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। তবে উপস্থিত ছিলেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

গতকালই কেন্দ্রের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নীতি আয়োগের পরিচালনা পরিষদের বৈঠকে কৃষি,পরিকাঠামো, উৎপাদন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পরিষেবা বিতরণ এবং স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করা হবে। সেই কার্যসূচি অনুসরণ করেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। দেশের উদ্দেশে আত্মনির্ভরতার বার্তা দিয়ে বৈঠকে তিনি বলেন, “দেশের উন্নয়নে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই রাজ্যের বাজেট হওয়া উচিত। তবেই উন্নয়নে গতি আসবে। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য আমাদের একটি সুষ্ঠ জীবনযাত্রা তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাণিজ্য ব্যবস্থা সুষ্ঠ হলে তবেই ভারত বিশ্বের নানা সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে।”

আরও পড়ুন: দিশার পাশে থুনবার্গ, টুইটে মনে করালেন ‘মানবাধিকারে’র কথা

সদ্য পেশ করা বাজেটের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বছরের বাজেটের প্রতি সাধারণ মানুষের যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে, তাতেই দেশের মনোভাব বোঝা যাচ্ছে। দেশবাসী স্থির করে নিয়েছে যে তাঁরা দ্রুত উন্নয়ন চান এবং তার জন্য কোনও সময় নষ্ট করতে চান না। যুবশক্তি দেশের মনোভাব তৈরি করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”

দেশের উন্নয়নে কেন্দ্র ও রাজ্যের সহযোগিতার পাশাপাশি সরকারকে প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তুলে ধরতে হবে। এটি কেবল রাজ্যগুলিতেই নয়, জেলাস্তরেও পৌঁছে দেওয়া যাবে। রাজ্যগুলিকে সহযোগিতার বার্তা দিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনাকালে আমরা দেখেছি কেন্দ্র ও রাজ্য কীভাবে মিলিত হয়ে কাজ করেছে। সেই কারণেই গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের একটি উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। চলতি বছরে আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূরণ করতে চলেছি, এই পরিস্থিতিতে গভার্নিং কাউন্সিলের গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।”

২০১৪ সালের পর দেশবাসীর জীবনযাত্রায় কীধরনের পরিবর্তন এসেছে, তা ধরতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানান, বিগত কয়েক বছরে কয়েক কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও টিকাকরণের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। গরিবরা বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস পরিষেবা পাওয়ায় তাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এসেছে।

আরও পড়ুন: সাঁতরাগাছিতে ১২ মিটার চওড়া ফুটব্রিজ, শিয়ালদহে লিফট-এসকেলেটর, বাংলাকে একগুচ্ছ উপহার রেলমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্র অনুসারি রাজ্য বাজেটের প্রস্তাবের সমালোচনা করে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর বাজেট নিয়ে যে কথা বলেছেন, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। উনি বলছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার বাজেট করবে, সেই অনুযায়ী রাজ্য সরকারগুলিও বাজেট করবে। এটি অত্যন্ত বিপদজনক ইঙ্গিত। প্রথমত, যোজনা কমিশন তুলে দিতে যে নীতি আয়োগ কমিশন আনা হয়েছে, তা আমাদের দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মানানসই নয়। দ্বিতীয়ত, দেশের বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য মাথায় রেখেই আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। বিভিন্ন রাজ্যের সুবিধা-অসুবিধা মাথায় রেখেই আমাদের সাংবিধানিক নিয়ম, অর্থ কমিশন সহ নানা পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। সেগুলি তুলে দিয়ে এককেন্দ্রিক কেন্দ্রীয় বাজেটের অনুসরণে রাজ্য বাজেট করার যে কথা বলা হচ্ছে, তাতে এক দেশ, এক দল, এক ধর্ম, এক ভাষার স্বৈরাচারী মনোভাবকেই তুলে ধরা হচ্ছে। এখানে গণতান্ত্রিক বাস্তবতাকেও অস্বীকার করা হচ্ছে। নানা ভাষা, নানা মত, নানা মত, এই নীতিতেই আমরা বিশ্বাসী।”

প্রধানমন্ত্রীকে অম্বানি-আদানির বন্ধু বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “রাজ্যগুলি নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট করতে পারবে না, কেন্দ্রের আদলে তাদের বাজেট তৈরি করতে হবে। আর কেন্দ্রের বাজেট তৈরি করা হবে ওনার হিসাব অনুযায়ী, অম্বানি-আদানিদের সেবাদাসত্ব করার জন্য। এতে অম্বানি-আদানি খুশি হলেও রাজ্যের মানুষের পক্ষে তা অত্যন্ত বিপদজনক। আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ভেঙে স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রতিফলন এটি। আমার মনে হয় না কোনও রাজ্য এই প্রস্তাব মানবে।”