সম্পর্ক বিচ্ছেদের রাগ ও উপেক্ষার কারণেই হাথরসের তরুণীকে ধর্ষণ, উল্লেখ সিবিআই চার্জশিটে

সিবিআই চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে,"পুলিসের গাফিলতির কারণে যৌন নিপীড়নের শিকার তরুণীর পরীক্ষা ও পরবর্তী ফরেন্সিক পরীক্ষায় দেরী হয়েছে।"

সম্পর্ক বিচ্ছেদের রাগ ও উপেক্ষার কারণেই হাথরসের তরুণীকে ধর্ষণ, উল্লেখ সিবিআই চার্জশিটে
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Dec 22, 2020 | 2:01 PM

হাথরস: সম্পর্ক ছিন্ন করার রাগ ও পরবর্তী সময়ে উপেক্ষাই মেনে নিতে না পেরে হাথরসের ১৯ বছরের তরুণীকে ধর্ষণ করেছিল মূল অভিযুক্ত, সঙ্গ দিয়েছিল তিন বন্ধু (Hathras Gangrape Case)। সিবিআই চার্জশিটে (CBI Charge sheet) উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ঘটনাক্রম সাজিয়ে সিবিআই যে চার্জশিট পেশ করেছে, তা অনুযায়ী, হাথরসের গণধর্ষণ কাণ্ডে চার অভিযুক্তদের মধ্যে সন্দীপের সঙ্গে ধর্ষিতা তরুণীর সম্পর্ক ছিল। ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩ মার্চ অবধি তাঁদের মধ্যে ফোন আদানপ্রদানের প্রমাণ মিলেছে। তরুণীর পরিবার অভিযুক্তদের না চেনার দাবি করলেও চার্জশিটে সিবিআই জানিয়েছে, মেয়ের সম্পর্কের কথা জানতে পেরেই সন্দীপের বাড়ির বাইরে ঝামেলা করেছিলেন তাঁরা।

সেই বিবাদের পরই সন্দীপের সঙ্গে ওই তরুণীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এরপরও সন্দীপ তাঁর বিভিন্ন বন্ধু ও আত্মীয়দের ফোন থেকে ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, কিন্তু সে ফোন না ধরায় মনে মনেই ক্ষোভ পুষতে থাকে সন্দীপ। তাঁর মনে সন্দেহ জাগে, দিদির স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে ওই তরুণী।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর, ওই তরুণী তাঁর মা ও দাদার সঙ্গে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ঘাস কাটতে যায়। কিছুক্ষণ পর তরুণীর দাদা ঘাস রাখতে বাড়ি যায়। ক্লান্ত হয়ে পড়ায় ওই তরুণী ঘাস কাটা বন্ধ করে তা জড়ো করার কাজে লেগে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে তরুণীর মা এসে মেয়ের খোঁজ না পেয়ে ক্ষেতের আশেপাশে খুঁজতে শুরু করেন। বাজরা ক্ষেতের ধারে মেয়ের চটি দেখতে পেয়েই সেখানে প্রবেশ করেন তিনি। দেখতে পান বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে রয়েছে ওই তরুণী।

আরও পড়ুন: আন্দোলনে যোগ দিতে দিল্লির উদ্দেশে যাত্রা শুরু মহারাষ্ট্রের কৃষকদের

এরপর বাড়িতে খবর পাঠান তিনি। তরুণীর দাদা এসে তাঁকে কাঁধে তুলে চান্দপা পুলিস স্টেশনে নিয়ে যান। বয়ানে তরুণী বারংবার জোর-জবরদস্তি করার কথা উল্লেখ করলেও কেবল ৩০৭ ধারা (হত্যার চেষ্টা) ও তফশিলি জাতি/উপজাতি আইনে অভিযোগ দায়ের করে পুলিস, বাদ দিয়ে দেওয়া হয় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ।

জেলা হাসপাতাল ও পরবর্তী সময়ে আলিগড় হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও ধর্ষণের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়নি। সিবিআই চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে,”পুলিসের গাফিলতির কারণে যৌন নিপীড়নের শিকার তরুণীর পরীক্ষা ও পরবর্তী ফরেন্সিক পরীক্ষায় দেরী হয়েছে। এই ত্রুটির ফলেই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগহ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেরী না করলে সেইসব গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করা যেত। ১৪ সেপ্টেম্বর থানায় উপস্থিত উত্তর প্রদেশ পুলিসকর্মীরা কাজে তৎপরতা দেখায়নি এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৪ ধারা মেনে চলেনি।”

২২ সেপ্টেম্বর শেষবারের মতো বয়ানে নির্যাতিতা জানিয়েছিল, সন্দীপ, রামু, লভকুশ ও রবি নামক চার যুবক তাঁকে ধর্ষণ করেছিল। এরপর সন্দীপ তাঁর গলা টিপে ধরে, যে কারণে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে সে। এর আগেও সন্দীপ এবং রবি তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল বলেও জানায় ওই তরুণী। এরপরই সিবিআই তদন্তের ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়। আলিগড়ে জওহর লাল মেডিক্যাল কলেজে তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করার পর রিপোর্টে বলা হয়,”জোরপূর্বক শারীরিক মিলনে কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবে গলায় ও পিঠে আঘাতের চিহ্নের দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে।”

২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে (Safdarjung Hospital) মৃত্যু হয় নির্যাতিতা তরুণীর। ময়নাতদন্তের (Post mortem report) রিপোর্টে বলা হয়, শারীরিক নির্যাতনের সম্ভাবনাকে বাদ দেওয়া যায় না। কারণ ওই তরুণীর শরীরে বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ আঘাতের প্রমাণ মিলেছে, যা সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে এসেছিল। এই সমস্ত বিষয়গুলিই সিবিআই চার্জশিটে তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফের নারকীয় হিংসার সাক্ষী রাজধানী, নাবালিকাকে বাড়িতে ডেকে গণধর্ষণ ৪ যুবকের