সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আজ আরজি কর মামলার শুনানি। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে সুপ্রিম কোর্ট। গত ৫ সেপ্টেম্বর শুনানি থাকলেও, তা বাতিল হয়ে যায়। আজ প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে মামলার শুনানি।
রাজ্য এদিন বারবার চিকিৎসকদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অভিযোগ উঠেছে, ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বিনা চিকিৎসায়। অসুবিধায় পড়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। সওয়াল-জবাবের পর প্রধান বিচারপতি বলেন, “যদি আগামিকাল (মঙ্গলবার) বিকেল পাঁচটার মধ্যে চিকিৎসকরা কাজে যোগদান করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কিন্তু যদি তারা কাজে যোগ না দেন, তাহলে ভবিষ্যতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।”
নির্যাতিতার সব ছবি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরাতে হবে, নির্দেশ দিলেন প্রধান বিচারপতি। আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, সিজার লিস্টও প্রকাশ্য়ে এসেছে। এ কথা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি যখন দায়িত্বে আছেন, তখনই এটা হয়েছে। সে কথা অস্বীকর করেন সিব্বল।
তুষার মেহতা বলেন, হেয়ারস্টাইল দিয়ে যে ছবি দেওয়া হচ্ছে। সেই ছবিও সরানো উচিত।
যে কেউ এমার্জেন্সিতে ঢুকে যেতে পারেন না। একজন সিভিক ভলান্টিয়ার কীভাবে সারা হাসপাতাল বিনা বাধায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। তুষার মেহতাকে নির্দেশ, অবিলম্বে সিআইএসএফকে আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
যারা সন্দীপ ঘোষের দুর্নীতির বিষয় প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থার দাবি করলেন আইনজীবী করুণা নন্দী। এমনকী যারা তথ্য-প্রমান লোপাট করেছে, যারা অবৈধভাবে ভেতরে এসেছিল তাদের নামও রয়েছে বলে দাবি করলেন একজন আইনজীবী।
মৃত্যুর এক মাস পরেও কখন মৃত্যু হয়েছে, তা নিশ্চিত করা যায়নি, বললেন আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি বলেন, কখন মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্টতা রয়েছে। মৃত্যুর ঠিক আগেই রাতের খাবার যে নির্যাতিতা খেয়েছিলেন সে বিষয়ে স্পষ্টতা রয়েছে।
বডি চালান জানতে চান প্রধান বিচারপতি। চালান খুঁজে পাননি কপিল সিব্বল। কনস্টেবলের হাতে থাকা উচিত ছিল চালান। বিচারপতি পর্দিওয়ালা বলেন, এই নথি যদি খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে। এইআইআরে অন্তত ১৪ ঘণ্টা দেরি হয়েছে, বললেন প্রধান বিচারপতি।
পশ্চাৎদেশ ভাঙা না হলে পা ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘোরানো যেতে পারে না, এমনটাই বললেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। তাঁর দাবি, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের সঙ্গে এক্স রে প্লেট মিলিয়ে দেখা হোক।
এফআইআর না হলে ফরেনসিক টিম পাঠানো যায় না, ফের প্রশ্ন তুললেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। তিনি আরও বলেন, ভ্যাজাইনাল সোয়াব, ব্লাড ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সংরক্ষণ করা উচিত। সেটা করা হয়নি।
তুষার মেহতা বলেন, ‘ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় প্রথম পাঁচ ঘন্টা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই সময় অসংখ্য লোককে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। পাঁচ দিন পর যখন আমরা তদন্ত শুরু করেছি তখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।’
সার্চ অপারেশনের ক্ষেত্রে মাত্র ২৭ মিনিটের ফুটেজ সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে। যে সময় অভিযুক্ত হল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে সেই সময় থেকে কারা কারা এসেছে সেই বিষয়ে কমপ্লিট ফুটেজ আছে কি না তা রাজ্য সরকারকে ফের জিজ্ঞেস করলেন প্রধান বিচারপতি।
শ্বাসরোধ করে খুন ও ধর্ষণের কথা বলা হয়েছে ময়নাতদন্তে। এসজি তুষার মেহতা এ কথা উল্লেখ করেছেন আদালতে। তিনি বলেন, এই রিপোর্ট দেখুন আর ফরেনসিক রিপোর্টে কী বলা হয়েছে দেখুন।
আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছেন, কে ভিডিয়োগ্রাফ করেছে? কোন উল্লেখ নেই। কী তার নাম, কী পদ। উত্তরবঙ্গ লবির তিনজন মহিলা ডাক্তার ছিলেন বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি আরও বলেন, সবথেকে বড় রহস্য, দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে মাত্র ১০ টা জিডি এন্ট্রি হয়েছে টালা থানায়।
খুন ও ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ৬টার পর ময়নাতদন্ত করা যায় না। প্রশ্ন তুললেন এক আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘প্রমাণ সংগ্রহ করার এতক্ষণ পর এফআইআর কেন হল? এমন ঘটনা আমি আমাক ২৭ বছরের কেরিয়ারে দেখিনি। FIR- চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’
আজ দুপুর তিনটের মধ্যে সিআইএসএফের থাকার বন্দোবস্তের সমস্যা মেটাতে হবে।
নির্দেশ প্রধান বিচারপতির। রাজ্য সরকারের কোনও একজন সিনিয়র অফিসার সিআইএসএফ একাধিকারিকের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবেন। তিন কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, এখনও দুই কোম্পানি থাকার জায়গা পায়নি।
সুপ্রিম কোর্ট যে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছেন, তা রাজ্যে কতটা কার্যকর হয়েছে, চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলেন প্রধান বিচারপতি।
তুষার মেহতা জানিয়েছেন, তিন কোম্পানি মহিলা সিআইএসএফ আছে, যাদের থাকার জায়গা নেই। দেড় ঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয়। এ কথা শুনে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, কোথায় থাকছেন তাঁরা? কপিল সিব্বল জানিয়েছেন, বেশিরভাগ সিআইএসএফ ট্রু হাসপাতালেই থাকছে।
আগামী সপ্তাহে মঙ্গলবার নতুন করে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে বললেন প্রধান বিচারপতি।
ফরেনসিক রিপোর্ট উল্লেখ করে তুষার মেহতা বলেন, “রিপোর্টে বলা হয়েছে। দেহ উদ্ধার হওয়ার পর দেখা যায় জিনস খোলা ছিল, অন্তর্বাস ছিল না। দেহের কাছেই পড়েছিল সেগুলি। দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। রাজ্য ফরেনসিক পরীক্ষা করেছে। তবে গুরুত্ব বিচার করে সিবিআই এইমস ও সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে কখন অভিযুক্ত প্রবেশ করেছে ও বেরিয়েছে। ভোর সাড়ে ৪টের পর থেকে বাকি সারাদিনের ফুটেজ আছে? পুরোটা সিবিআই-কে দেওয়া হয়েছে? প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির। উত্তরে সিব্বল জানালেন, হ্যাঁ দেওয়া হয়েছে।
সলিসিটর জেনারেল জানালেন, ফুটেজ সব পাওয়া যায়নি তাদের ক্রাইম সিন রিকনস্ট্রাক্ট করতে হয়েছে অর্থাৎ ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছে।
দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে দেওয়া হয় ডেথ সার্টিফিকেট। দুপুর ২ টো ৫৫ মিনিটে ইউডি কেস রেজস্টার হয়। দুপুর ২টো ৫৫ মিনিটে জিডি রেজিস্টার হয়। ৪টে ১০-এ পৌঁছন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। রাত ৮টা ২০ থেকে ১০টা ৪৫ পর্যন্ত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়। দুপুর থেকে ছবি সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রধান বিচারপতির প্রশ্নে জানালেন কপিল সিব্বল।
আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বাড়ি থেকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দূরত্ব কত, সেটাই জানতে চাইলেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। উত্তরে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছেন, ‘১৫ থেকে ২০ মিনিটের দূরত্ব’। উল্লেখ্য, সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে দুর্নীতি মামলায় সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন তিনি।
চিকিৎসার অভাবে রোগীদের মৃত্যু হয়েছে এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতর রিপোর্ট দিয়েছে। চিকিৎসকের অভাবে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ কপিল সিব্বলের।
সুপ্রিম কোর্টে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে আলাদা রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। কপিল সিব্বল জানিয়েছেন এটা সিলড অর্থাৎ মুখবন্ধ খামে শুধু কোর্টকেই দেওয়া হচ্ছে।
আরজি কর মামলায় সিবিআই-এর কাছে তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। গত ৫ সেপ্টেম্বর শুনানি না হলেও সেই রিপোর্ট দেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল।