Old Parliament Building: বিশ্বের অনন্য স্থাপত্যের নিদর্শন পুরানো সংসদ ভবন, এটির নির্মাণ খরচ শুনলে অবাক হবেন
Old parliament building making cost: দিল্লির লুটিয়েন্স জোনের এই ভবনটি ৯৬ বছর আগে ১৯২৭ সালে নির্মিত হয়েছিল। ভবনটি নির্মাণ করতে ৬ বছর লেগেছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকেরা দেশ পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক ভবন হিসাবে এটি তৈরি করেছিল। এটিই পরে ব্রিটিশদের কেন্দ্রীয় পরিষদ হয়। পরে এটি সংসদ ভবন হয়।
নয়া দিল্লি: স্বাধীনতার আগে যেটা লেজিসলেটিভ রিপ্রেসেন্টেটিভ কাউন্সিল ছিল, সেটাই স্বাধীনতার পর সংসদ ভবন হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ৭৫ বছর এই ভবন (Parliament Building) একাধিক ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছে। ১৮ সেপ্টেম্বর, বিশেষ সংসদীয় অধিবেশনের মধ্য দিয়ে এই সংসদ ভবনকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। ১৯ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার থেকে নতুন সংসদ ভবনে বসবে অধিবেশন। এদিন পুরানো সংসদ ভবনে বিশেষ অধিবেশনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু থেকে প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, নরসিমা রাও এবং অটল বিহারী বাজপেয়ী-সহ সকলের কথা উল্লেখ করে তাঁদের শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “এই সংসদ ভবন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অসংখ্য ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে।” এই সংসদ ভবন শুধু ঐতিহাসিক নয়, বিশ্বের অনন্য স্থাপত্যের নিদর্শন এবং এটি ইতিহাস হয়ে থাকবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, দিল্লির লুটিয়েন্স জোনের এই ভবনটি ৯৬ বছর আগে ১৯২৭ সালে নির্মিত হয়েছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকেরা দেশ পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক ভবন হিসাবে এটি তৈরি করেছিল। ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জ ১৯১১ সালে কলকাতা থেকে দিল্লিকে রাজধানী স্থানান্তরিত করার পরই এই ভবন তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা পড়ে। কেননা, দিল্লিতে এমন কোনও ভবন ছিল না, যার মাধ্যমে দেশের প্রশাসনিক কাজকর্ম চালানো যাবে। তাই সিদ্ধান্ত হয়, একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। স্থাপত্যকার এডউইন লুটিয়েন্স এবং হার্বার্ট বেকার দিল্লির প্রশাসনিক ভবনের নকশা করেছিলেন। তারপর এই সংসদ ভবনের নির্মাণ শুরু হয় ১৯২১ সালে। টানা ৬ বছর ধরে কাজ চলার পর ১৯২৭ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। এটিই পরে ব্রিটিশ শাসকদের কেন্দ্রীয় পরিষদে পরিণত হয়। আবার এই ভবনের সেন্ট্রাল অ্যাসেম্বলিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্রিটিশ শাসনের শিকড়কে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন দুই তরুণ বিপ্লবী। তারপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই কেন্দ্রীয় পরিষদ সংসদ ভবনে পরিণত হয় এবং এখানেই ভারতের নতুন ইতিহাস রচিত হয়।
সেন্ট্রাল অ্যাসেম্বলিতে বোমা ফাটিয়েছিলেন বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগৎ সিং
প্রশাসনিক ভবনটি ১৯২৭ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। সেই সময়ে লোকসভাকে আইন পরিষদ বলা হত, যা ১৯১৯ সালে গঠিত হয়েছিল। আর রাজ্যসভাকে স্টেট কাউন্সিল বলা হত। ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সভা ভাইসরয় হাউসে অনুষ্ঠিত হত। প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পর নতুন ভবনে কেন্দ্রীয় পরিষদের তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং এর নামকরণ করা হয় কেন্দ্রীয় পরিষদ। মাত্র দুই বছর পর, ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল বটুকেশ্বর দত্ত এবং ভগৎ সিং কেন্দ্রীয় পরিষদের সেন্ট্রাল হলে বোমা নিক্ষেপ করেন। এই বোমা বিস্ফোরণে ব্রিটিশ সরকারের শিকড় কেঁপে ওঠে।
তখন ১০ গ্রাম সোনা পাওয়া যেত ১৮.৩৭ টাকায়
১৯২৭ সালে পুরানো সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। সেই সময়ে এই ভবনটি নির্মাণ করতে প্রায় ৮৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। যা সেই সময়ের নিরিখে তাৎপর্যপূর্ণ, সেই সময় সোনার দাম খুব কম ছিল। ট্যাক্স গুরু ওয়েবসাইট অনুসারে, ১৯২৭ সালে ১০ গ্রাম সোনার দাম ছিল ১৮.৩৭ টাকা।
আবারও হয়ে গেল দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর এই ভবনটির নাম হয় সংসদ। ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে এই সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে গণপরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এই সেন্ট্রাল হলেই স্বাধীন ভারতের প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর গণপরিষদের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ড. বি আর আম্বেদকর এই ভবনেই সংবিধানের খসড়া পেশ করেন। আজও এই ভবনে একটি কনস্টিটিউশন হল রয়েছে, যেখানে সংবিধানের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৫০ সালে প্রজাতান্ত্রিক দেশ হিসাবে পরিগণিত হওয়ার পর, ১৯৫২ সালে এখানে সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ স্বাধীনতার পর ফের দেশের গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ পীঠস্থান হয়ে ওঠে এই সংসদ ভবন।