ঘিরে ফেলেছে চারিদিক থেকে, পাহাড়ি জঙ্গল দিয়ে পা টিপে টিপে এগোচ্ছে ২৪ হাজার বাহিনী! কী হবে…
Bijapur Naxalite Operation: ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রের বর্ডারে রয়েছে কারেগুট্টা পাহাড়। সেখানেই রয়েছে নকশাল ঘাঁটি। অভিযান শুরুর ঘন্টা খানেকের মধ্যে খতম করা হয় ৫ মাওবাদীকে। তার পর থেকে আর কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে তিন রাজ্যের প্রান্তরে পাহাড় আর জঙ্গলের মধ্যে চলছে অভিযান। ১০০০ মাওবাদীকে ধরতে নামানো হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার নিরাপত্তা বাহিনী। যার মধ্যে ১০ হাজার আধাসেনা এবং প্রায় ১৪ হাজারের বেশি সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী। বিশেষজ্ঞরা কেউ কেউ বলছেন হতে পারে এটাই সেনার করা দেশে সব থেকে বড় অভিযান।
ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রের বর্ডারে রয়েছে কারেগুট্টা পাহাড়। সেখানেই রয়েছে নকশাল ঘাঁটি। অভিযান শুরুর ঘন্টা খানেকের মধ্যে খতম করা হয় ৫ মাওবাদীকে। তার পর থেকে আর কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
নিরাপত্তারক্ষীদের সূত্রে খবর, গোপন সূত্রে খবর পেয়েই এই অভিযান শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, বিজাপুরের ওই এলাকাতেই রয়েছে মাওবাদীদের মোস্ট-ওয়ান্টেড দুই কমান্ডর হিদমা ও দেবা। তাদের ধরতেই নেমেছে সারি সারি বাহিনী। জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তাবাহিনী সূত্রে খবর নকশালদের আস্তানায়, রয়েছে আরও কয়েকজন শীর্ষ স্তরের কম্যান্ডার। ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাঁরা। ইতিমধ্যেই পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছে সেনা। নকশালদের স্পষ্ট বার্তা দিয়ে সেনা জানিয়েছে আত্মসমপর্ণ না করলে তাঁদেরকে মরতে হবে।
চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে বন ও পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে ভিতর দিকে অগ্রসর হচ্ছে নিরাপত্তাকর্মীরা। প্রচুর পরিমাণে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) দিয়ে মাইন পুঁতে রাখা হয়েছে। মাওবাদীদের আস্তানা এবং অস্ত্রের ভান্ডারের জন্য খোঁজ চালাচ্ছে তাঁরা।
অভিযান তদারককারী এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা সূত্রে খবর, কারেগুট্টা পাহাড়ে বেশ কয়েকটি মাওবাদী আস্তানা আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি বিশাল প্রাকৃতিক গুহা, বাঙ্কার এবং অস্ত্রের ভাণ্ডারও।
কারেগুট্টা পাহাড় ছত্তিশগড়ের দক্ষিণ বস্তারের বিজাপুর জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ জুড়ে বিস্তৃত। এই বিশাল বিদ্রোহী দমন অভিযানে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় উভয় বাহিনীর প্রায় ২৪,০০০ এরও বেশি সদস্য রয়েছেন। যার মধ্যে ছত্তিশগড় এবং তেলেঙ্গানার নিরাপত্তা ইউনিটগুলি সরাসরি অংশগ্রহণ করছে।
গত সপ্তাহে, মাওবাদী এবং নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যে একাধিক ফায়ারিং পালটা ফায়ারিঙের ঘটনা ঘটেছে। চলমান সংঘর্ষ এবং চিরুনি তল্লাশি সত্ত্বেও, মাত্র তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা গেছে। যাদের সকলেই ২৪ এপ্রিলের গুলির লড়াইয়ে নিহত মহিলা মাওবাদী। বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুসারে, মাওবাদীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে হতাহত হয়েছে।
ইন্ডিয়া টিভির একটি প্রতিবেদন অনুসারে কিছু মাওবাদী পালিয়ে গেলেও, অনেকেই এখনও তাঁদের ঘাঁটি রক্ষায় অনড়। মাওবাদীদের শীর্ষ নেতারা এখনও ওখানেই লুকিয়ে আছে বলে ধারণা নিরাপত্তাবাহিনীদের।
সূত্রের খবর অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী দুর্গম রাস্তা পেরিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। মাওবাদীদের ফেলে যাওয়া ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) এবং চাপ বোমা পরিষ্কার করছে।
এই অভিযানের লক্ষ্য হল দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটি (DKSZC), তেলেঙ্গানা স্টেট কমিটি (TSC), পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি (PLGA) ব্যাটালিয়ন নম্বর ওয়ান এবং অন্যান্য মাওবাদী গোষ্ঠীগুলির প্রভাব দূর করা, যারা এই অঞ্চলকে বামপন্থী চরমপন্থী কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল ৩১ মার্চ, ২০২৬ এর মধ্যে মাওবাদী মুক্ত ভারত গড়ার দাবি বার্তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এখন পর্যন্ত, কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ফর রেজোলিউট অ্যাকশন (কোবরা), স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) এবং ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি)-এর তিনজন নিরাপত্তা কর্মী পৃথক পৃথক আইইডি বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। এছাড়াও, কমপক্ষে ছয়জন কর্মীকে ডিহাইড্রেশনের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা প্রায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। নজরদারিতে সহায়তা করার জন্য, মাওবাদীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে। ৮০০ কিলোমিটার এলাকা পুরো তল্লাশি না হওয়া বা মাওবাদীদের নিকেশ না করা অবধি অব্যাহত থাকবে অভিযান বলেই খবর নিরাপত্তাবাহিনী সূত্রে।