‘গণতান্ত্রিক পটভূমিতে প্রাধান্য পাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই’, বিশেষ পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের

আদালতের তরফে জানানো হয়, নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ না করলে কোনও নেতাকে সেই পদ থেকে সরানো যায় না। তবে যখনই কোনও প্রার্থী সমর্থন হারান, তিনি দলের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যান। এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত যা হবে, তার উপরই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।

'গণতান্ত্রিক পটভূমিতে প্রাধান্য পাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই', বিশেষ পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের
নির্মামকাজে ফের নিষেধাজ্ঞা জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 10, 2021 | 1:57 PM

নয়া দিল্লি: কোনও নির্বাচনে জয় লাভের পর জয়ী ব্যক্তি সেই পদে পাঁচ বছর ক্ষমতাসীন থাকাই নিয়ম, কিন্তু গণতান্ত্রিক পটভূমিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতই গ্রহণযোগ্য হবে। এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচন নিয়ে সাউ সঙ্গীতা বনাম মহারাষ্ট্র সরকারের মামলায় এমনটাই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)।

মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের পঞ্চায়েত সমিতির গাটনেতা হিসাবে সাউ সঙ্গীতাকে সরিয়ে বন্দনা ধ্যানেশ্বর মুরকুটেকে সেই পদে বসানোর মামলায় বম্বে হাই কোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চ বন্দনা ধ্যানেশ্বর মুরকুটের সপক্ষে রায় দিলে, সেই  রায়কে চ্যালেঞ্জ করে  শীর্ষ আদালতে আবেদন জানান সাউ সঙ্গীতা। বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও ও বিচারপতি বিআর গাভাই বম্বে হাইকোর্টের রায়কে পর্যালোচনা করে জানানো হয়, এই ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতাকেই মান্যতা দেওয়া হয়।

আবেদনকারী সাউ সঙ্গীতা চার সদস্য ২০১৭ সালে শ্রীরামপুরের পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন। আবেদনকারীর দাবি, দলের তরপে তাঁকে গণনেতা বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। জেলাশাসককেও এই বিষয়ে অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে বাকি তিন প্রার্থী জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান যে সঙ্গীতা গত আড়াই বছরে দলের সদস্যদের কোনও মতামত গ্রহণ করেননি, এমনকি দলের কোনও মিটিংয়ের আয়োজনও করেননি।

২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি আহমেদনগর জেলার ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে বৈঠকের আয়োজন করা হয় এবং সেখানেই দলীয় সদস্যের মতামত গ্রহণ করে সাউ সঙ্গীতাকে গণনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ও অপর এক সদস্যকে ওই পদে বসানো হয়। জেলাশাসকও এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দেন।

জেলাশাসকের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেই বম্বে হাইকোর্টে আবেদন জানান সাউ সঙ্গীতা। সেটিই পরে সুপ্রিম কোর্টে এসে পৌঁছয়। আবেদনকারীর সপক্ষে হাজির আইনজীবী শেখর নাপাদে আদালতে জানান, আবেদনকারী ৫ বছরের জন্য়ই গণনেতা পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। গণনেতার পদ থেকে সরানোর কোনও নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগেই তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি যেই মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাও একমাত্র গণনেতার নির্দেশেই আয়েজন করা সম্ভব।

নেতা-মন্ত্রী কেনাবেচা বন্ধ করার জন্যই যেকোনও প্রশাসনিক পদের মেয়াদ পাঁচ বছর রাখা হয়েছে, এই উদাহরণ দিয়ে আবেদনকারীকে গণনেতার পদ থেকে সরানোর বিরোধিতা করেন আইনজীবী। রাজ্য সরকৈরের তরফে হাজির আইনজীবী সচিন পাটিল জবাবে জানান, দলের তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের সম্মতিতেই আবেদনকারীকে ওই পদ থেকে সরানো হয়েছিল, তাই জেলাশাসক আইন মেনেই সেই সম্মতিতে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

আদালতের তরফে দুই পক্ষের মতামত শোনার পরই বলা হয়, “আবেদনকারী যখন গণনেতা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেই সময় দলের সকলেরই এই সিদ্ধান্তে সম্মতি ছিল। কিন্তু পরে তিনি দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েভিন্ন পথে চলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দলের সদস্যদের সমর্থনও হারান।”

আদালতের তরফে জানানো হয়, কোনও পুরসভার কর্তা নির্বাচন মূলত আগাড়ি (স্থানীয়)দের দ্বারাই নির্বাচিত হন। দলের তরফেই নেতা নির্বাচনের পর একই পদ্ধতি অনুসরণ না করলে কোনও নেতাকে সেই পদ থেকে সরানো যায় না। তবে যখনই কোনও প্রার্থী সমর্থন হারান, তিনি দলের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যান। এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত যা হবে, তার উপরই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।

আদালতের তরফে এও দেখা হয় যে, আবেদনকারীর আইনজীবী সদস্য় কেনা-বেচা রুখতে আইনের কথা বললেও ওই আবেদনকারী নিজেই বিরোধী দলের সমর্থনে পঞ্চয়েত সমিতির চেয়াররম্যান পদে  লড়ছেন। শীর্ষ  আদালতের তরফে এই ভূমিকার সমালোচনা করে বলা হয়, ” আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি যে কীভাবে আবেদনকারী সদস্য় কেনা বেচার কথা বললেন, যেখানে তিনি নিজেই দলের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান পদে বিরোধী দলের সমর্থনে লড়েছেন।”

আরও পড়ুন:  গাড়ির দিকে হাত বাড়ালেই গুঁজে দিচ্ছেন ৫০০ টাকার নোট! ভোটের আগেই ভাইরাল তেজস্বীর ভিডিয়ো