Explained: Special Marriage Act-এ বিয়ে করলেন স্বরা, কী এই আইন? এই আইনে বিয়ে করার কী সুবিধা?

Special Marriage Act: বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে বিয়ে করেছেন বলিউড অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর। এই আইনের মাধ্যমে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা একে অপরের সঙ্গে বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন।

Explained: Special Marriage Act-এ বিয়ে করলেন স্বরা, কী এই আইন? এই আইনে বিয়ে করার কী সুবিধা?
ছবি সৌজন্যে: টুইটার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 20, 2023 | 4:32 PM

নয়া দিল্লি: স্বরা ভাস্করের (Swara Bhaskar) টুইট নিয়ে অতীতে একাধিক বিতর্ক বেধেছে। সরকার বিরোধী একাধিকবার মন্তব্য করার জন্য সমালোচিত হয়েছেন বহুবার। তাঁর বিয়েও সেই সমালোচনা থেকে অব্যাহতি পেল না। গত মাসেই সমাজবাদী পার্টির মহারাষ্ট্র ও মুম্বইয়ের যুব সংগঠনের সভাপতি ফাহাদ আহমেদের (Fahad Ahmed) সঙ্গে আইনি বিয়ে সেড়ে ফেলেছেন অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর। স্বরা ভাস্কর ধর্মে হিন্দু। কিন্তু তাঁর স্বামী মুসলিম। দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মধ্যে এই আইনি বিয়ে সম্পন্ন হয় বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪-র অধীনে।

নিজের বিয়ের কথা টুইটে ঘোষণা করে এই বিবাহ আইনের প্রশংসা করেছেন স্বরা। তিনি টুইটে লেখেন, “বিশেষ বিবাহ আইনকে ধন্যবাদ। অন্ততপক্ষে এই আইনের অস্তিত্ব রয়েছে বলেই ভালবাসা একটা সুযোগ পেয়েছে। ভালবাসার অধিকার, নিজের জীবনসঙ্গীকে বেছে নেওয়ার অধিকার এমনকী বিয়ের করার অধিকার মিলেছে।” ভিন্ন ধর্মাম্বলী দুই মানুষের বিয়ের ক্ষেত্রে কী সুবিধা দেওয়া হয়েছে বিশেষ বিবাহ আইনে। কেন এই আইনের প্রশংসা করলেন অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর?

বিশেষ বিবাহ আইন (Special Marriage Act) কী?

১৯৫৪ সালের ৯ অক্টোবর সংসদে এই বিশেষ বিবাহ আইন পাশ করা হয়। যেখানে বিভিন্ন ধর্মের বিবাহ আইনের আওতার বাইরে দুই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিবাহ বন্ধনে অধিকার দেয় এই আইন। কোনও ধর্মের ব্যক্তিগত আইনের ক্ষেত্রে, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, দত্তক নেওয়ার বিষয়গুলি ধর্মীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মুসলিম বিবাহ আইন, ১৯৫৪ এবং হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫-র মতো এই আইনগুলি বিবাহের আগে স্বামী-স্ত্রীকে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে। অর্থাৎ এই আইনের অধীনে কোনও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী যুগল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে তাঁদের কোনও এক ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে হবে। তবে বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে কোনও যুগল নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় অপরিবর্তিত রেখেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন।

বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে কারা বিয়ে করতে পারেন?

বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এই বিবাহ আইন। ভারতের সব হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ এই আইনের অধীনে অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করতে পারেন।

১৯৫২ সালে এই আইনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেই সময় বিবাহকে মৌলিক প্রয়োজনীয়তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। এই আইন অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য পুরুষদের বয়স ২১ বছর ও মহিলাদের ১৮ বছর হতে হবে।

তবে ধর্মনিরপেক্ষ আইন অনুযায়ী, এই আইনের ১৯ নম্বর ধারা অনুসারে, অবিভক্ত পরিবারের যে কোনও সদস্য হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্মে বিশ্বাসী হলে, পরিবার থেকে তাদের বিচ্ছেদ কার্যকর বলে বিবেচিত হবে। সেক্ষেত্রে বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে বিয়ে করলে সেইসব ব্যক্তিদের উত্তরাধিকারের অধিকার সহ বিভিন্ন অধিকারগুলিকে প্রভাবিত করবে।

সামাজিক বিয়ের প্রক্রিয়া কী?

৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিয়ে করতে ইচ্ছুক পার্টিদের জেলার ম্যারেজ অফিসারের কাছে লিখিত নোটিস দিতে হবে। এই নোটিস দেওয়ার আগে দুই পক্ষের মধ্যে কোনও এক পক্ষকে অন্তত ৩০ দিন সেই এলাকায় বসবাস করতে হবে। তারপর একটি নির্ধারিত দিনে দুই পক্ষ ও তিনজন সাক্ষীকে ম্যারেজ অফিসারের সামনে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। আর সেই ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হলে দুই পক্ষকে একটি বিবাহ শংসাপত্র (Marriage Certificate) দেওয়া হবে। সব নিয়ম মেনে দুই জনের মধ্যে আইনগতভাবে বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার প্রামাণ্য নথি এটি।

বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে নোটিস পিরিয়ড কতদিনের?

আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিয়ে করতে ইচ্ছুক দুই পক্ষের প্রদত্ত নোটিসের একটি আসল কপি ম্যারেজ নোটিস বুকে রাখা থাকবে। সেগুলি কোনও ফি ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে খুলে খতিয়ে দেখা হবে। দুই পক্ষের তরফে নোটিস পাওয়ার পর ম্যারেজ অফিসার সেই নোটিস অফিসের কোনও একটি স্থানে প্রদর্শন করবেন। এই বিয়ে নিয়ে কোনও পক্ষের আপত্তি জানানোর থাকলে নোটিস প্রদর্শনের ৩০ দিনের মধ্যে জানাতে হবে।

আইনের ৭ নম্বর ধারায় এই নোটিসে আপত্তি নিয়ে উল্লেখ রয়েছে। এই ধারার অধীনে কোনও ব্যক্তি নোটিস প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে এই বিয়ের প্রস্তাবে আপত্তি জানাতে পারেন। আর ম্যারেজ অফিসারের কাছে এই বিয়ে নিয়ে যদি কোনও আপত্তি জমা পড়ে তাহলে তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই বিয়ে দিতে পারবেন না তিনি। এই আপত্তির বিষয়ে যথাযথ তদন্তের পর আপত্তকারী ব্যক্তি তাঁর নিজের অসম্মতি প্রত্যাখ্যান করলে বিবাহ সম্পন্ন হবে।

তবে এই নোটিস প্রদর্শনের বিষয়টিকে বারংবার চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট গোপনীয়তার অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে এই আইনের অধীনে বিয়ের নোটিস সংশ্লিষ্ট এক্তিয়ারের পুলিশ স্টেশনের মাধ্যমে উভয় পক্ষের বাড়ির ঠিকানায় পাঠানোর প্রথাটি বাতিল করে দেয়। এদিকে সম্প্রতি এই বিয়ের জন্য নোটিস পিরিয়ডের প্রয়োজনীয়তাকেও চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয় যে, ১৯৫৪ সালের বিশেষ বিবাহ আইনের আওতায় যে সব দম্পতি রাতারাতি বিয়ে করতে চান, তাঁদের বিয়ের জন্য ৩০ দিনের নোটিস দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।