আহমেদাবাদের দুর্ঘটনায় দুর্গত ডাক্তার-পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ালেন UAE-এর চিকিৎসক শামশির ওয়ালিল
ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৭৪ জনের। যার মধ্যে ৪ জন ওই মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া এবং চিকিৎসক। এছাড়াও আহত হয়েছেন প্রায় ২০ বেশি পড়ুয়া। তাঁদের পরিবারকে ৬ কোটি টাকা অর্থ সাহায্য করার কথা জানাল সংযুক্ত আরব আমিরশাহির চিকিৎসক শামশির ওয়ালিল।

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহত ডাক্তারি পড়ূয়া ও চিকিৎসকদের জন্য বড় সাহায্যের ঘোষণা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির চিকিৎসকের।
১২ জুন, আহমেদাবাদের বিজে মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে গিয়ে ধাক্কা মারে এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৭৪ জনের। যার মধ্যে ৪ জন ওই মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া এবং চিকিৎসক। এছাড়াও আহত হয়েছেন প্রায় ২০ বেশি পড়ুয়া। তাঁদের পরিবারকে ৬ কোটি টাকা অর্থ সাহায্য করার কথা জানাল সংযুক্ত আরব আমিরশাহির চিকিৎসক শামশির ওয়ালিল। সমাজকর্মী হিসাবেও পরিচিতি রয়েছে শামশির ওয়ালিলের। জানা গিয়েছে নিজের মেডিকেল হোস্টেল জীবনেও মারাত্মক দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছিলেন শামশির। তাই এই ঘটনা তাঁর সেই স্মৃতিকে উস্কে দিয়েছে।
১২ জুন বিমানবন্দর থেকে টেক অফ করার মাত্র ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে পড়ে বোয়িং ৭৮৭ বিমানটি। বিজে মেডিকেল কলেজের হোস্টেল ও মেসে আছড়ে পড়ে ওই বিমান। ২০২৩ ব্যাচের বারমের, রাজস্থানের জয়প্রকাশ চৌধুরী, ভাবনগর, গুজরাটের বাসিন্দা রাকেশ দিয়োরা। ২০২৪ ব্যাচের গঙ্গানগর, রাজস্থানের মানব ভাদু এবং মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা আরিয়ান রাজপুত। আহত হন আরও অনেকে। দুর্ঘটনায় আরও পাঁচজন চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যও নিহত হয়েছেন। তাঁদের জন্য অর্থ সাহায্যের ঘোষণা করলেন
Burjeel Holdings এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং VPS Health এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর চিকিৎসক শামশির জানান এই দুর্ঘটনা তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। তিনি নিজেও একসময়ে মাঙ্গালোরের কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ ও চেন্নাইয়ের শ্রী রামচন্দ্র মেডিকেল কলেজে হোস্টেলে থাকতেন।
তিনি বলেন, “আমি মেস ও হোস্টেলের ফুটেজ দেখলাম। আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। ওই ঘরগুলো এক সময় আমারও বাড়ি ছিল। ওই ঘরে একটা জীবন, স্বপ্ন, সম্ভাবনা, ভালবাসার বাস। কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না একটা বাণিজ্যিক বিমান সেই স্বপ্নের উপর এভাবে আছড়ে পড়তে পারে।”
চিকিৎসক শামশির জানিয়েছেন নিহত চারজন শিক্ষার্থীর পরিবারের প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা এবং গুরুতর আহত পাঁচজন শিক্ষার্থীর জন্য প্রত্যেককে ২০ লক্ষ টাকা এবং যে চিকিৎসক পরিবারের সদস্যরা প্রাণ হারিয়েছে তাদেরও ২০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। জুনিয়র চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশন (BJ Medical College) এর সঙ্গে সমন্বয়ে এই অর্থ প্রদান করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও দুর্যোগে বা দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে চিকিৎসক শামশিরকে। ২০১০ সালের মাঙ্গালোরু বিমান দুর্ঘটনায়ও তিনি পরিবারের সদস্যদের অর্থ ও চাকরির সুযোগ দিয়েছিলেন Burjeel Holdings এ। এ ছাড়াও বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়, দুর্যোগ ও মহামারিতে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
শামশির জোর দিয়ে জানান, এই অনুদান শুধুই অর্থনৈতিক সাহায্য না। এটা একটা বার্তা যে চিকিৎসক সম্প্রদায়, যে কোনও দুর্যোগে, ঐক্য ও ভালবাসায় একে অপরের পাশে রয়েছে। তিনি বলেন, “যা হয়েছে তা অপরিবর্তনীয়। ওরা একে অপরের কল্যাণে আত্মনিবেদিত ছিল। ওরা যে স্বপ্ন দেখেছে — তা হঠাৎ শেষ হয়ে যায়নি। সেই স্বপ্নকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।”
এই ঘটনায় বাস্তুহারা ছাত্র ও পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছেন। অনেকেই তাঁদের ছাদ, সহকর্মী ও আশ্রয় হারিয়েছেন। জুনিয়র চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশন ও কর্তৃপক্ষ এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছে। চিকিৎসক শামশির এবং তাঁর টিমও সেই উদ্যোগে যুক্ত রয়েছে। যাতে সবাই উপযুক্ত সাহায্য পায় সেটা নিশ্চিত করাই তাঁদের বর্তমান লক্ষ্য।
