Welcome 2023: চব্বিশের চাবিকাঠি তেইশের হাতে!

Welcome 2023: বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ এ সব রাজ্যগুলির মধ্যে ৫ রাজ্যে তাদের সমর্থিত বা শাসিত সরকার রয়েছে, সেগুলিকে ধরে রাখা

Welcome 2023: চব্বিশের চাবিকাঠি তেইশের হাতে!
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jan 01, 2023 | 4:40 PM

তেইশ হচ্ছে শেষ ধাপ। তারপরই ফাইনাল। ফাইনালে মরণপণ লড়ার আগে তেইশের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর হল সব রাজনৈতিক দলের যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার সময়। তাই তেইশে, কোনও দলই ‘সূচাগ্র মেদিনী’ ছাড়বে না। ২০২৩, সব রাজনৈতিক দলের কাছে ‘ঘাম ঝরানোর’ বছর। মুহুর্মুহু সমীকরণ বদলের বছর। রাজনীতির ভাঙা-গড়া খেলার বছর। 

দশ কা দম:

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী এবং জয়পুর থেকে শিলং, ২০২৩-এ দশ দশটি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড; মে-তে কর্নাটক; নভেম্বরে ছত্তীসগঢ়, মধ্য প্রদেশ, মিজোরাম; ডিসেম্বরে রাজস্থান, তেলঙ্গানা। মনে করা হচ্ছে ২০২৩-এ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরেও নির্বাচন হতে পারে। এই সব কটা রাজ্যে নির্বাচনের ফল সব রাজনৈতিক দলের দাবার চাল ওলটপালট করে দিতে পারে। তাই, ঝুলিতে কে কতটা টাটকা জনমত নিয়ে চব্বিশের ময়দানে নামছে, তা তেইশেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ এ সব রাজ্যগুলির মধ্যে ৫ রাজ্যে তাদের সমর্থিত বা শাসিত সরকার রয়েছে, সেগুলিকে ধরে রাখা। যদি এ সব রাজ্যে জয় অব্যাহত রেখে অবিজেপি শাসিত রাজ্যে হানা দিতে পারে, তাহলে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে চব্বিশের লড়াইয়ে নামবে বিজেপি।  

কিং হবে কং?

অগ্নি পরীক্ষা কংগ্রেসেরও। গত দশ বছর ধরে সরকার-বিরোধী যতটুকু মেঘ পঞ্জীভূত হয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে কংগ্রেস আগামী লোকসভায় কতটা বর্ষাতে পারে, সেটাই দেখার। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস আশানুরূপ ফল করেনি। যদিও, ২০১৪ সালের থেকে ৮টি আসন বাড়াতে পেরেছিল রাহুল গান্ধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। ভোট শেয়ারও অটুট ছিল। কিন্তু, মোদীর ঝড়ে ওলট-পালট হয়ে যায় শতাব্দী প্রাচীন দল। সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল। নেতৃত্বহীনতায় ভুগতে থাকে কংগ্রেস। অন্দরেই তৈরি হয় বিক্ষুব্ধ দল। ঘুণ এতটাই গভীরে, মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্যে জোট সরকার তৈরি করলেও ধরে রাখতে পারেনি কংগ্রেস। সম্প্রতি হিমাচল প্রদেশ ছাড়া গুজরাট এবং দিল্লির পুরনিগম নির্বাচনে শোচনীয় ফল করে। তেইশে একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। যার মধ্যে ছত্তীসগঢ় এবং রাজস্থান কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। এই দুটি রাজ্য ধরে রাখাই লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেসের কাছে।      

রাহুল আদৌ জুড়তে পারবেন ভারত?

কংগ্রেসের পাশাপাশি তেইশে আরও একটি বিষয়ে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের। তা হল ওয়ানেডের সাংসদ রাহুল গান্ধীর দিকে। চার মাস আগে পর্যন্ত রাহুলের রাজনৈতিক কেরিয়ার প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছিল। না-তিনি কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদে, না-রয়েছে তাঁর ঝাঁঝালো আগ্রাসী রাজনৈতিক মনোভাব। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের  একাংশের মতে, কংগ্রেসের একাংশ যখন গান্ধী পরিবারের মুখাপেক্ষী, রাহুলের নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে, তখন উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন রাহুল। দলের সংগঠন ক্রমশ দুর্বল হতে শুরু করে। তার প্রভাব বিভিন্ন নির্বাচনেও পড়ে।

তবে, সেপ্টেম্বর থেকে রাহুল গান্ধীকে নতুন উদ্দীপনায় দেখা গিয়েছে। শুরু করেছেন ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ৩৫৭০ কিলোমিটার পদযাত্রা করছেন রাহুল। বাইশ শেষ করে তেইশেও পা দিয়েছে এই সফর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, ইতিবাচক সাড়া মিলেছে ‘ভারত জোড়ো যাত্রার’। রাহুলের এই উদ্দীপনা অনেকেই মনে ধরেছে। এই সফর রাহুলের ভাবমূর্তি বদলাতে শুরু করেছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। আগামী লোকসভায় রাহুলকে আরও পরিণত রাজনীতিকের ভূমিকায় দেখা যাবে বলেও মত তাঁদের।

হ্যাটট্রিক মোদীর?

চব্বিশে হ্যাটট্রিকের সুযোগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। পাশাপাশি, জওহরলাল নেহরুর পরই দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শিরোপা ছিনিয়ে নেওয়ার সুযোগও। তাই তেইশ নরেন্দ্র মোদীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর। এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ, নিজের ক্যারিশ্মাকে অটুট রাখার। সম্প্রতি গুজরাট নির্বাচনে কার্যত একার হাতে অভূতপূর্ব জয় ছিনিয়ে এনেছেন নরেন্দ্র মোদী। তবে, গুজরাটে যেমন ‘মোদী ম্যাজিক’ অব্যাহত ছিল, হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন বা দিল্লি নিগম নির্বাচনে মোদীকে মুখ করে এগিয়েও জয় আনতে অক্ষম হয় বিজেপি। তেইশে দশ-দশটি নির্বাচনে মোদীর রণকৌশল কী হতে পারে, সেটা দেখার। এই সব বিধানসভার নির্বাচনে ‘মোদীর ম্যাজিক’ অব্যাহত থাকলে চব্বিশের জয় অনেক সহজ হয়ে যাবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত।     

   

কে বিরোধী?

জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী মুখ তেইশেই অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। একুশে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন, গত একবছরে তাঁরও কড়া প্রতিপক্ষ তৈরি হয়ে গিয়েছে। আঞ্চলিক দলে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে নজিরবিহীন সাড়া পেয়েছে অরবিন্দ কেজরীবালের ‘আপ’। গোয়ায় যা তৃণমূল পারেনি, আপ সেখানে একটি আসনে জয় পেয়েছে। কংগ্রেসকে হারিয়ে গোটা পঞ্জাব নিজেদের দখলে রেখেছে। মোদীর গুজরাটেও থাবা বসিয়েছেন অরবিন্দ। তবে, অবিজেপি দলগুলি এক ছাদের তলায় এলেও এখনও পর্যন্ত সেভাবে দানা বাঁধতে দেখা যায়নি। চব্বিশে বিরোধী দলগুলি এক জোট হয়ে নাকি পৃথক অবস্থানে নির্বাচনে লড়বে, তেইশের বিধানসভা নির্বাচনগুলিই তার সমীকরণ ঠিক করবে।