রবিবারই ধ্বংস হবে ভারতের টুইন টাওয়ার, কিন্তু কেন ভাঙা হচ্ছে? জেনে নিন নেপথ্যের কাহিনি
Supertech Twin Tower Demolition: রবিবার বেলা আড়াইয়েয় ভেঙে ফেল হবে ৪০ তল বিশিষ্ট বহুতলদুটি। কিন্তু কেন? জেনে নিন নেপথ্যের কাহিনি।
নয়া দিল্লি: রবিবার (২৮ আগস্ট) বেলা আড়াইয়ের সময় ভেঙে ফেলা হবে নয়ডার ‘সুপারটেক টুইন টাওয়ার’। জোড়া বহুতল পুরোপুরি ধ্বংস করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। ‘সুপারটেক টুইন টাওয়ার’ ভেঙ্গে ফেলতে প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। জোড়া ভবন ভাঙতে গিয়ে আশপাশের আবাসনের বাসিন্দাদেরও ভোগান্তি কম নয়। রয়েছে স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি, সম্পত্তির ক্ষতির ঝুঁকি, এমনকি দিল্লিও আশপাশের অঞ্চলের পরিবেশ দূষণের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে এক ধাক্কায়। তাহলে, কেন হঠাৎ ভবনগুলো কেন ভাঙা হচ্ছে? আসুন জেনে নেওয়া যাক –
অ্যাপেক্স এবং সিয়ান নামে পরিচিত নয়ডার সেক্টর ৯৩এ-তে অবস্থিত এই জোড়া ভবনদুটির একটির উচ্চতা ১০৩ মিটার, অন্যটি প্রায় ৯৭ মিটার। ২০০৪ সালে প্রথম ‘সুপারটেক এমেরাল্ড কোর্ট হাউজিং সোসাইটি’ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। নয়ডা কর্তৃপক্ষ এর জন্য ৪৮,২৬৩ বর্গ মিটার পরিমাপের জমি বরাদ্দ করেছিল। ২০০৫-এ নয়ডা কর্তৃপক্ষ ১৪টি ১০ তলা বাড়ির পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিল। ওই বছরই শুরু হয়েছিল এই ১৪টি টাওয়ার নির্মাণের কাজ ।
২০০৬ সালের জুনে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ মোট এলাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫৪,৮১৯.৫১ বর্গ মিটার করা হয়। নিয়ম অনুসারে, ২০০৬ সালের পর নতুন বরাদ্দকারীদের জন্য ফ্লোর এরিয়ার অনুপাতও ১.৫ থেকে বাড়িয়ে ২ করা হয়েছিল। ওই বছরের ডিসেম্বরে, এমারেল্ড কোর্ট আবাসন প্রকল্পের জন্য প্রথম সংশোধিত পরিকল্পনাকে অনুমোদন দিয়েছিল নয়ডা কর্তৃপক্ষ। যার ফলে আগের ১৪টি টাওয়ারে অতিরিক্ত দুটি করে তল যোগ করা হয়েছিল, প্রতিটি বহুতল ১২ তলায় পরিণত হয়েছিল। এছাড়াও, অতিরিক্ত দুটি ভবন এবং একটি শপিং কমপ্লেক্স তৈরির প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছিল। ২০১২ সালে, ফের বদলানো হয় পরিকল্পনা। নতুন দুটি টাওয়ারের উচ্চতা ৪০ তলা হবে বলে ঠিক করা হয়। নয়ডা কর্তৃপক্ষ নতুন পরিকল্পনাটিকেও অনুমোদন দিয়েছিল।
কিন্তু, এরপরই বাড়িগুলির ক্রেতারা এই নয়া দুই টাওয়ার তৈরির বিরোধিতা করতে শুরু করেন। তাঁরা দাবি করেন, ভবনগুলি একেবারে গায়ে গায়ে তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণের জন্য দুটি বহুতলের মধ্যে ন্যূনতম যে দূরত্ব রাখা প্রয়োজন, তা লঙ্ঘন করেছে। আর এই বিষয়ে ফ্ল্যাট মালিকদের সম্মতিও নেওয়া হয়নি। সিয়ান এবং অ্যাপেক্স- টুইন টাওয়ারগুলি ভেঙে ফেলার দাবি জানান তাঁরা। নয়ডা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছিল তাদের দেওয়া অনুমোদন বাতিল করার জন্য। তাতে কাজ না হওয়ায় বাসিন্দারা, টাওয়ারগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ চেয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। এলাহাবাদ হাইকোর্ট সেই দাবি মেনে নেয়। ২০১৪ সালে, হাইকোর্ট টুইন টাওয়ারগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল।
তবে সুপারটেক এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। সেই মামলা শেষ হয় ২০২১ সালে। সুপ্রিম কোর্টও, টুইন টাওয়ারগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। আদালত জানায়, টাওয়ারগুলি অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল। উত্তর প্রদেশ অ্যাপার্টমেন্ট আইন অনুযায়ী ফ্ল্যাট মালিকদের সম্মতি নেওয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট আরও বলে, নয়ডা কর্তৃপক্ষ এবং সুপারটেক “জঘন্য জটিলতায়” জড়িত ছিল এবং সংস্থআকে নয়ডা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় নিজেদের খরচে ভবনগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। প্রথমে ভবনগুলি চলতি বছরের মে মাসে ভেঙে ফেলার কথা ছিল। পরে ২১ অগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। সম্প্রতি, প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং আবহাওয়ার কারণে সুপ্রিম কোর্ট ২৮ অগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভবনদুটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল।